ঢাকা ১১:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার দ্বিগুণ, উদ্বেগে জাপান

জাপানে বার্ষিক জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার প্রায় দ্বিগুণ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় উদ্বেগ বোধ করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। নিজের এক উপদেষ্টার মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, জন্মহার না বাড়লে অদূর ভবিষ্যতে দেশ হিসেবে জাপান হারিয়ে যাবে বিশ্বের মানচিত্র থেকে।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে জাপানে জন্মহার বৃদ্ধির কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। প্রায় প্রতি বছরই বার্ষিক মৃত্যুহারের তুলনায় জন্মহারে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২০২২ সালে জাপানে জন্ম নিয়েছে ৮ লাখেরও কম সংখ্যক শিশু এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষের।

এর আগে বেশ কয়েকবার জাতিকে জন্মহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন কিশিদা। তবে এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর নিজে আর কোনো বার্তা দেননি জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তার প্রতিনিধি হিসেবে জাতির উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মাসাকো মোরি।

রাজধানী টোকিওতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে একসময় দেশ হিসেবে জাপান হারিয়ে যাবে; জাতি বর্তমানে একটি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিপাকের মধ্যে পড়েছে এবং সময় যত যাবে— হারানোর এই প্রক্রিয়া তত তীব্র হবে, জনগণের ভোগান্তিও সেই হারে বাড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশুরা।

২০০৮ সালেও জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ; কিন্তু তার পর থেকে বছর বছর জন্মহার কমতে থাকায় বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা ১২ কোটি ৪৬ লাখেরও কম।

এদিকে, জন্মহার হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও। পরিসংখ্যান দপ্তরের নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাসাকো মোরি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু জাপানে যা ঘটছে— তাকে ধস বলা যেতে পারে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সমাজের সর্বত্র ইতোমধ্যে অনুভব করা যাচ্ছে। এ সময়ে দেশে যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে— তারা একটি ভঙ্গুর সমাজ ব্যবস্থা দেখে বড় হবে। এটা উদ্বেগজনক।’

উন্নত জীবনযাত্রার কারণে জাপানে সন্তান জন্মদান ও লালন পালনের ব্যয় খুবই উচ্চ। বিশ্বের যেসব দেশে সন্তান জন্ম ও তাকে বড় করে তোলার ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেসবের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে জাপান। দেশটির জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্তান জন্মদান ও পালনের ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বের শীর্ষ তিনটি ব্যয়বহুল দেশের মধ্যে একটি। দেশটিতে প্রতি বছর জন্মহার কমতে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ এটি।

জাপানের সরকার অবশ্য দম্পতিদের জন্য সন্তান জন্ম ও লালন বাবদ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। বর্তমানে প্রণোদনায় যে অর্থ দেওয়া হয়, সন্তান জন্মের পর হাসপাতালের বিল মেটাতেই তা শেষ হয়ে যায়। ফলে সীমিত আয়ের দম্পতিরা স্বাভাকিভাবেই এই প্রণোদনার ওপর নির্ভর করে সন্তান জন্মদানের ঝুঁকি নিতে চান না।

এছাড়া, সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনজনিত কারণে স্বাভাবিকভাবেই নারীদের পেশাগত ক্যারিয়ারে একটি দীর্ঘ বিরতি পড়ে। এ কারণে অনেক নারীই তরুণ বয়সে সন্তান নিতে আগ্রহী হন না।

সাক্ষাৎকারে এই ব্যাপারটির সমালোচনা করে মাসাকো মোরি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে সন্তান ধারণের কোনো বিরোধ নেই। যারা এই দু’টো ব্যাপারকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখছেন বা বিরোধিতাপূর্ণ ভাবছেন— তারা খুব ভুল করছেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার দ্বিগুণ, উদ্বেগে জাপান

আপডেট সময় ০৮:৩২:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মার্চ ২০২৩

জাপানে বার্ষিক জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার প্রায় দ্বিগুণ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় উদ্বেগ বোধ করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। নিজের এক উপদেষ্টার মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, জন্মহার না বাড়লে অদূর ভবিষ্যতে দেশ হিসেবে জাপান হারিয়ে যাবে বিশ্বের মানচিত্র থেকে।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে জাপানে জন্মহার বৃদ্ধির কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। প্রায় প্রতি বছরই বার্ষিক মৃত্যুহারের তুলনায় জন্মহারে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২০২২ সালে জাপানে জন্ম নিয়েছে ৮ লাখেরও কম সংখ্যক শিশু এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষের।

এর আগে বেশ কয়েকবার জাতিকে জন্মহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন কিশিদা। তবে এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর নিজে আর কোনো বার্তা দেননি জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তার প্রতিনিধি হিসেবে জাতির উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মাসাকো মোরি।

রাজধানী টোকিওতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে একসময় দেশ হিসেবে জাপান হারিয়ে যাবে; জাতি বর্তমানে একটি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিপাকের মধ্যে পড়েছে এবং সময় যত যাবে— হারানোর এই প্রক্রিয়া তত তীব্র হবে, জনগণের ভোগান্তিও সেই হারে বাড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশুরা।

২০০৮ সালেও জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ; কিন্তু তার পর থেকে বছর বছর জন্মহার কমতে থাকায় বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা ১২ কোটি ৪৬ লাখেরও কম।

এদিকে, জন্মহার হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও। পরিসংখ্যান দপ্তরের নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাসাকো মোরি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু জাপানে যা ঘটছে— তাকে ধস বলা যেতে পারে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সমাজের সর্বত্র ইতোমধ্যে অনুভব করা যাচ্ছে। এ সময়ে দেশে যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে— তারা একটি ভঙ্গুর সমাজ ব্যবস্থা দেখে বড় হবে। এটা উদ্বেগজনক।’

উন্নত জীবনযাত্রার কারণে জাপানে সন্তান জন্মদান ও লালন পালনের ব্যয় খুবই উচ্চ। বিশ্বের যেসব দেশে সন্তান জন্ম ও তাকে বড় করে তোলার ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেসবের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে জাপান। দেশটির জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্তান জন্মদান ও পালনের ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বের শীর্ষ তিনটি ব্যয়বহুল দেশের মধ্যে একটি। দেশটিতে প্রতি বছর জন্মহার কমতে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ এটি।

জাপানের সরকার অবশ্য দম্পতিদের জন্য সন্তান জন্ম ও লালন বাবদ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। বর্তমানে প্রণোদনায় যে অর্থ দেওয়া হয়, সন্তান জন্মের পর হাসপাতালের বিল মেটাতেই তা শেষ হয়ে যায়। ফলে সীমিত আয়ের দম্পতিরা স্বাভাকিভাবেই এই প্রণোদনার ওপর নির্ভর করে সন্তান জন্মদানের ঝুঁকি নিতে চান না।

এছাড়া, সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনজনিত কারণে স্বাভাবিকভাবেই নারীদের পেশাগত ক্যারিয়ারে একটি দীর্ঘ বিরতি পড়ে। এ কারণে অনেক নারীই তরুণ বয়সে সন্তান নিতে আগ্রহী হন না।

সাক্ষাৎকারে এই ব্যাপারটির সমালোচনা করে মাসাকো মোরি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে সন্তান ধারণের কোনো বিরোধ নেই। যারা এই দু’টো ব্যাপারকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখছেন বা বিরোধিতাপূর্ণ ভাবছেন— তারা খুব ভুল করছেন।