বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়ে শুরু থেকেই সরব রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পক্ষ থেকে আইনটি সংশোধনের বিষয়ে বেশ জোর দেওয়া হচ্ছে। আইনটির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি এর দুর্বল দিকগুলো সংশোধনে যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ।
ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলেন লবাখের সঙ্গে সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হওয়া বৈঠকে ডিএসএ আইনের বিষয়ে ওয়াশিংটনকে আশ্বস্ত করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব নিজেই ডিএসএ আইনের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। আইনের বিষয়ে তিনি বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রসচিব মার্কিন অ্যাডমিরালকে জানান, ডিজিটাল যে অপরাধগুলো হয় সেগুলো বন্ধ করতেই এ আইন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা আছে, যার কারণে বাংলাদেশ সেগুলো সমাধানে কাজ করছে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ডিএসএ আইনের বিষয়ে যেসব দুর্বল দিক রয়েছে সেগুলো নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। আইনের সংশোধন বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। লবাখকে পররাষ্ট্রসচিব আরও আশ্বস্ত করেছেন যে, ডিএসএ আইনের প্রয়োগের বিষয়ে যেন কোনো অসঙ্গতি না হয়, সে ব্যাপারেও সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো শক্তিশালী করা ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন উভয়পক্ষ। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি অব্যাহত রাখার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে ওয়াশিংটন।
এদিকে, মোমেন-লবাখের বৈঠক নিয়ে সোমবার (৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ ও অগ্রাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় বিশেষ করে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সমুদ্র বিষয়ক নিরাপত্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো শক্তিশালী করা ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়।
মার্কিন অ্যাডমিরাল গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি এবং আশ্রয় প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের আন্তরিক প্রশংসা করেন। তিনি এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুর সম্পদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্রসচিব জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিভিন্ন রেজুলেশনে সমর্থন এবং রোহিঙ্গা গণহত্যাকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারের প্রশংসা করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) মো. খুরশেদ আলম, মহাপরিচালক (আমেরিকাস) নাঈম উদ্দীন আহমেদ, মহাপরিচালক (মিয়ানমার) মিয়া মো. মাইনুল কবির, মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) মাসুদুল আলম, পরিচালক (আমেরিকাস) হাসান আব্দুল্লাহ তৌহিদ উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডিরেক্টর ফর সাউথ এশিয়া রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্স কর্নেল ব্রায়ান লুটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাউথ, সেন্ট্রাল এশিয়া ব্যুরোর অফিস ফর নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের ডিরেক্টর স্কট আরবম, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন লাফেভ এবং পলিটিক্যাল সেকশনের চিফ আরতুরো হাইনস উপস্থিত ছিলেন।
চার দিনের সফরে শনিবার (৭ জানুয়ারি) একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসেন লবাখ। সফরের শুরুর দিন রোববার (৮ জানুয়ারি) তিনি প্রতিনিধি দল নিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগসহ অন্যান্য সুবিধা পরিদর্শন করেন। এছাড়া সোমবার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।