এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে স্থগিত হওয়ার চার বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষাগুলো অক্টোবরের ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দিনাজপুর বোর্ডের গণিত, কৃষিশিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান ও রয়ায়ন বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা আসে বুধবার। আজ এসব পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে জানানো হয়, গণিত পরীক্ষা হবে ১০ অক্টোবর, কৃষিশিক্ষা ১১ অক্টোবর, পদার্থ ১২ অক্টোবর এবং রসায়ন পরীক্ষা হবে ১৩ অক্টোবর। এসএসসি পরীক্ষায় নজিরবিহীন প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারিতে। আলামত জব্দসহ তিনজন শিক্ষককে হাতেনাতে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এ ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনা আলোচনায় আসে ইংরেজি দুই বিষয়ের পরীক্ষার দিনে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তা গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অনেক নাটকীয়তা শেষে মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত তিন শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ভুরুঙ্গামারী থানায় চার শিক্ষক ও অজ্ঞাতসহ ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে ঘটনায় অন্যতম সহযোগী হিসাবে অনেকেই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানের নাম বলছেন। যদিও রহস্যজনক কারণে মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। কেননা, যেসব বিষয়ের প্রশ্নফাঁস হয়েছে সেগুলোর প্যাকেট সিলগালা করা হয়েছে। ওইসব প্যাকেটের ওপর শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাফাই গেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ভুরুঙ্গামারি থেকে কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি।’
জানা গেছে, উল্লিখিত কেন্দ্র সচিব এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিনই বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নের সঙ্গে আরও ৭টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র নিয়ে আসেন। যে কারণে পরবর্তী পরীক্ষাগুলোর (বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্র) প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নপত্র সংগ্রহকালে সেখানে সংশ্লিষ্ট উপজেলার দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার থাকার কথা। নিয়মানুযায়ী তিনি থেকে খাম গণনা করবেন। সেটা করলে প্রশ্নফাঁস সম্ভব হতো না।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, সুরক্ষিত ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন এনে থেমে থাকেননি কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান। তিনি সহযোগী কয়েক শিক্ষকের সহায়তায় প্রস্তুত করেন উত্তরপত্র। এরপর তা নিজের স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ১৫-২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন। শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তা ৫শ টাকায়ও বিক্রি করেন। আর এভাবেই তা জানাজানি হয়। এরপর স্থানীয় প্রশাসন মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় আর চার বিষয়ের প্রশ্ন। ওইসব বিষয়ের মধ্যে একটির পরীক্ষা আজ (বৃহস্পতিবার) ছিল। বাকিগুলো আগামী ৩ দিন হওয়ার কথা ছিল। বিষয়গুলো হচ্ছে-গণিত, কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন।
প্রশ্নপত্র উদ্ধারের পরই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক জোবায়ের হোসাইনকে আটক করা হয়। এছাড়া বুধবার ভোরে হামিদুল ইসলাম ও সোহেল আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মামলার অপর আসামি ক্লার্ক আবু হানিফ পলাতক আছে। এদিকে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা খতিয়ে দেখতে কাজ শুরু করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। তিনি জানান, বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ফরাজউদ্দিনকে প্রধান করে বুধবার রাতে তিন সদস্যের এ কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হারুনুর রশিদ এবং রংপুর বিভাগের মাধ্যমিক শিক্ষার উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান।