গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে আবার বিক্ষোভ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে তারা একটি মালভর্তি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেন। ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে শ্রমিকদের হামলায় চার সংবাদকর্মী আহত হন।প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
শ্রমিকদের অবরোধের কারণে সড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সড়কে চলাচলকারী যানচালক ও যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে রাত পৌনে ৮টার দিকে সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনার মধ্যে নগরের তেঁতুইবাড়িতে ‘গ্রামীণ ফেব্রিকস’ নামের একটি কারখানার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত শ্রমিকদের একটি অংশ। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছিল। ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী আগুন লাগার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
শ্রমিকদের অবরোধের খবর সংগ্রহ করতে গেলে দীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, এটিএন নিউজের চিত্র সাংবাদিক শাহ জালাল, বাংলা ভিশনের চিত্র সাংবাদিক আমির হোসেন রিয়েল, দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের কালিয়াকৈর প্রতিবেদক আবু সাঈদকে, স্বাধীন সূর্যদোয় ও দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি গাজীপুর জেলা ও কালিয়াকৈর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ মিলন সরকার সহ অনেকরে গায়ে হাত সহ অনেক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয় । তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন শ্রমিকরা।
শিল্পপুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার গণসমাবেশ করেন কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শ্রীপুরের সান সিটির মাঠে আয়োজিত ওই সমাবেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটির ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকার স্বার্থে বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বিকালে আবার শ্রমিকরা সানসিটি মাঠে সমাবেশ শুরু করেন। সমাবেশের একপর্যায়ে শ্রমিকদের একটি পক্ষ চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে গাছের গুঁড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা সড়কে চলাচলরত অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে মালবোঝাই একটি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু তালেব রাত ১০টার দিকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। শ্রমিকরা বেশকিছু যানবাহন ভাঙচুর করেছেন। কয়েকটিতে অগ্নিসংযোগ করেছেন। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।