রাজধানীর উত্তরায় পলওয়েল মার্কেটে ৭১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার স্বর্ণ ও নগদ সাড়ে ২৭ হাজার টাকা চুরির মাস পেরিয়ে গেলেও শনাক্ত হয়নি চোরচক্র। ৯ ডিসেম্বরের এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা হলেও পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। উদ্ধার হয়নি কোনো স্বর্ণালংকারও।
পলওয়েল মার্কেটটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ পুলিশ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের অধীনে। ভুক্তভোগী সাকিব হাসান ক্ষতিপূরণ চেয়ে ১৪ ডিসেম্বর পুলিশ কো-অপারেটিভ সোসাইটির সেক্রেটারির কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তবে এখনো তিনি কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।
সাকিব হাসান যুগান্তরকে বলেন, ‘চুরি হওয়ার পর মার্কেট কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। তারা বলেছিল, খোয়া যাওয়া স্বর্ণালংকার ও টাকার অন্তত ৮০ ভাগ ক্ষতিপূরণ দেবে। তাদের কথামতো আমি মার্কেট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, আমাকে ক্ষতিপূরণ দিলে ভবিষ্যতে এমন চুরি হলে অন্যদেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
উত্তরা পূর্ব থানায় করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৬ বছর ধরে উত্তরা পূর্ব থানাধীন পলওয়েল মার্কেটের ৪র্থ তলার গোল্ড পয়েন্ট জুয়েলার্স নামের দোকানে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের ব্যবসা করছেন সাকিব হাসান (৩৭)। প্রতিদিনের মতোই গত ৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে দোকানের সাটার বন্ধের পর তালা লাগিয়ে মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ডকে দেখিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে বাসায় চলে যান সাকিব। পরদিন সকালে দোকান কর্মচারী রিপন (১৮) এবং সোহান (২০) দোকানের সাটারের তালা খুলতে গিয়ে দেখে তাদের লাগানো তালা নেই। পরে তারা দোকানের ভেতর ঢুকে দেখতে পায় স্বর্ণ এবং ডায়মন্ডের অলংকারগুলোও নেই। সোহান ফোনে বিষয়টি দোকান মালিক সাকিবকে জানায়। বিস্তারিত শোনার পর দ্রুত সাকিব এসে দেখেন দোকানে বিভিন্ন স্বর্ণ এবং ডায়মন্ডের অলংকার নেই। যার মূল্য আনুমানিক একাত্তর লাখ পঁয়ষট্টি হাজার টাকা। এছাড়া ক্যাশের নগদ ২৭ হাজার ৬০০ টাকা নেই। চুরি যাওয়া স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মডেলের ৪৫ ভরি স্বর্ণের অলংকার (নেকলেস, চেইন, আংটি, কানের ঝুমকা, কানের দুল, রুলি বা চুড়ি, লকেট, হাতের ব্রেসলেট)। যার মূল্য আনুমানিক ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মডেলের ডায়মন্ডের অলংকারের (আংটি, লকেট, হাতের ব্রেসলেট, পাশা) মূল্য ১০ লাখ টাকা।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, দোকানে থাকা সিসি ফুটেজে দেখা গেছে, অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬ জন চোর ৯ ডিসেম্বর রাত অনুমান ৯টা ৩ মিনিটের দিকে দোকানের সাটারের তালা কেটে ভেতরে ঢোকে এবং রাত ৯টা ২৪ মিনিটের সময় দোকানে থাকা স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের অলংকারসহ ক্যাশে থাকা নগদ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। পরে মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড ও ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তারা এ বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরার পলওয়েল মার্কেটের ম্যানেজার মো. আব্দুল্লাহ যুগান্তরের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সাব-ইন্সপেক্টর মো. আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘এখনো চোরদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
মার্কেটের নিরাপত্তা প্রহরীরা এই চুরির সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউই সন্দেহের বাইরে নয়।’