১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ ৯ মাস মরনপন যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ৯৩০০০ সৈন্য ঢাকা রেসকোর্সের (বর্তমান সরোওয়ারদী উদ্যান) উওরাংশে ভারতীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে: জেনারেল জগজিৎ সিং অররার নিকট স্যারেন্ডারের মাধ্যমে বিজয় অর্জিনের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ঐসময়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওশমানী উপস্থিত থাকতে পারেননি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে ভোট গননা সঠিক ভাবে হলে জাসদের সিট সংখ্যা ৪০ পার হতো মর্মে আমার বয়সীরা অনুভব করেছেন। কিন্তু তা হতে দেওয়া হয়নি। সকলে আমার সাথে সম্মত হবেন যে, সে সময় গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করা না হলে ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল সৃষ্টির প্রয়োজন হতো না।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসার পর তাঁর অনুরোধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ জোটে এবং ১৯৭৩ সালে ওআইসি জোটে যোগদান করে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ফেরত আসা সৈন্যদেরকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণকারীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করা হয় । এতে সেনাবাহিনীর মধ্যে শুরু থকে অভ্যন্তরিন দন্দ্ব দানা বাঁধে। সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শএুতা নয়,এমন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ। অনেকে মনে করেন,বাংলাদেশ ইসলামী দেশ সমূহের সংগঠন ওআইসিতে ১৯৭৩ সালে যোগদান করায় প্রতিবেশী ভারত ও আমেরিকা সহজভাবে গ্রহন করেনি।যাঁর পরিণাম হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ জীবন দিতে হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় সেনাবাহিনী সুসংগঠিত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার ৭ টি দেশ নিয়ে আঞ্চলিক জোট সার্ক গঠিত হওয়ায় ভারত সহ প্রতিবেশী দেশ সমূহের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে গার্মেন্টস শিল্প স্হাপনের মাধ্যমে তৈরী পোশাক রপ্তানি, সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাশ্চ্যের বহু দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের প্রদক্ষেপ গ্রহন করেন। এতে করে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে স্বাধীনতা যুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্স এর অধিনায়ক, স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট জাস্টিস আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপ্রতির দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি জনগনের ভোটে রাষ্ট্রপ্রতি নির্বাচনের ৬ মাসের মাথায় পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনকৃত সেনাবাহিনীর সদস্য ভারতীয় ডিফেন্স কলেজ থেকে এনডিসি করা সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ২৪ মার্চ ১৯৮২ সাথে মার্শাল জারী করেন। সে থেকে আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক এর কার্যক্রম কমতে থাকে এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতিতে পরোক্ষভাবে ভারতের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
১৯৯০ এর স্বৈরশাসক এরশাদ পতন আন্দোলনে পুরো জাতী ঐক্যবদ্ধ হয়। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯১, ১৯৯৬ জুন, ২০০১ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিনএপি) ১৯৯১ ও ২০০১ সরকার গঠন করে এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০৬ সালে কেয়ারটেকার সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ দ্বিমত পোষণ করে প্রেসিডেন্ট ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ কেয়ারটেকার সরকারের অধিনে নির্বাচন করতে না চাওয়ায় ২০০৭ সালের জানুয়ারীর ১১ তারিখ সেনবাহিনীর সমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদ কেয়ারটেকার সরকার গঠিত হয়। এ সরকার ২ বছর ক্ষমতায় থেকে ডিসেম্বর ২০০৮ নির্বাচন দিলে ২০০৯ জানুয়ারীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এ পরযন্ত বলা যায় যে, বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এগিয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ভোটারবিহীন নির্বাচন। ২০১৮ তে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পুলিশের তদারকিতে ভোটের আগেরদিন রাতে ভোট বাক্সে ভরে পরের দিন ঘোষনা করে সরকার গঠন। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ স্বীয় দলের ডামি কেন্ডিডেট দিয়ে একদলীয় নির্বাচন করে। ২০০৯ -২০২৪ সময়ে রাজনৈতিক নেতা, আমলা, ব্যবসায়ীরা মিলে দেশের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার, শ্রেণী বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারন, জনগনের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং চাকরির ক্ষেএে চরম বৈষম্য ও দলীয় সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজী হতে থাকে। সর্ব বিষয়ে প্রতিবেশীনির্ভর নীতি অনুসরণ করে শেখ হাসিনা সরকার। চাকরির ক্ষেএে কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাএ- জনতার গনঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ২০২৪ ফ্যসিবাদ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা সহ দলীয় নেতাদের অধিকাংশ ভারতে পালিয়ে আস্রয় নেয়। দেশ সরকারবিহীন ৩ দিন ছিল।
৮ আগস্ট ২০২৪ রাতে নোবেল লরেট ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করে। এতে দেশের আপামর জনগন শান্তি- শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ঘুনে ধরা প্রশাসনের সর্বএ সংস্কারের রুপ রেখা তৈয়ার, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক সরকার গঠন প্রক্রিয়ার স্হায়ীরুপ দান এবং প্রতিবেশী ভারতসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার নিমিত্তে পররাষ্ট্র নীতি নতুন করে সাজানোর দায়িত্ব পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনুস কেয়ারটেকার সরকারের উপর।তদুপরি দেশের সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করন; বর্ডার গার্ড পুন:গঠন;পুলিশ বাহিনী পুন:গঠন এবং দেশের সার্বভৌমত্বের হুমকি মোকাবেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাএ-ছাএীদেরকে পড়াশোনার পাশাপাশি ৫ বছর সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের পর সামরিক বাহিনীর নিবন্ধন কার্ড দেয়া আবশ্যক। নিবিড় প্রশিক্ষণকালীন সময়ে তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদানের বিধান রাখতে হবে।
গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের পররাষ্ট্র নীতি নতুন করে সাজাতে হবে:
# দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে এমন ক্ষেএে বৈদেশিক সম্পর্ক স্হাপন;
# জনগনের সম্পৃক্ততা ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় এমন নীতি কৌশল ;
# পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে কো অডিনেটেড নীতি কৌশল। সরকারের অপরাপর মন্ত্রনালয় সরাসরি কোন বৈদেশিক নীতি কৌশল ঠিক করবে না;
# প্রশিক্ষত পররাষ্ট্র ক্যাডার সার্ভিস। তাঁদেরকে দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মানসিকভাবে এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনঃগঠন করতে হবে। এ ক্ষেএে দেশের স্বার্থের বৈপরীত্যে কাজ করা কর্মকর্তা – কর্মচারীদেরকে বাছাই করে অবসরে পাঠাতে হবে এবং
# পরাশক্তিধর দেশের অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেরদেশের পররাষ্ট্র নীতি। অর্থাৎ দেশের পক্ষে প্রতিবেশী সহ পরাশক্তির দেশকে পররাষ্ট্র নীতির ঠিকাদারীর লাইসেন্স দিলে তা দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে যাবে।