ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির বাড়িতে দেশটির সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগের দাবি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা একাধিক ভিডিওতে তারা বলেছেন, প্রয়াত নেতা আয়াতুল্লাহর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বিক্ষোভকারীদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, তারা ভিডিও ক্লিপগুলোর অবস্থান যাচাই করে দেখেছে। এতে দেখা যায়, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রয়াত নেতার বাড়িটি আগুনে পুড়ছে এবং মারকাজি প্রদেশের খোমেইন শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মিছিল চলছে।
খোমেনির বাড়িতে অগ্নিসংযোগের দাবি অস্বীকার করে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, খোমেনির বাড়ির বাইরে অল্প সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তাসনিম নিউজ অ্যাজেন্সি বলেছে, ‘প্রতিবেদনটি মিথ্যা। মহান বিপ্লবের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতার বাড়ির দরজা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।’
তবে রয়টার্স এবং এএফপি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও ধারণের তারিখ স্বতন্তভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। ইরানের সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের নেটওয়ার্ক ১৫০০-তাসভির বলেছে, ইসলামি বিপ্লবের প্রয়াত নেতা খোমেনির বাড়িতে বৃহস্পতিবার অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
১৯৮৯ সালে খোমেনির মৃত্যুর পর তার বাড়িটি জাদুঘরে পরিণত করা হয়। গত সেপ্টেম্বরের মাঝের দিকে হিজাব না পরার কারণে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা যান ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি নামের এক তরুণী। তার মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ শুরু হয়।
২০১৯ সালের প্রাণঘাতী বিক্ষোভের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চলতি সপ্তাহে দেশটিতে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ওই বছর ইরানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শত শত বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে বুধবারও দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের ইজেহ শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। ওইদিন এই শহরে গুলিতে অন্তত সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ৯ ও ১৩ বছর বয়সী দুই শিশুও রয়েছে। এই সহিংসতার জন্য সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ইরানি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। যদিও দেশটির সরকার বলেছে, মোটরসাইকেলে করে এসে দুই বন্দুকধারী জনতার ওপর গুলি চালিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে ইরানের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় অন্তত ৪০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভে হতাহতদের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও পরিসংখ্যান এখনও প্রকাশ করেনি।