ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উল্টাপাল্টা কথা না বলে অবিলম্বে নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট। তা না হলে রাজপথে আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সেই সঙ্গে দেশে অরাজকতা, অন্যায় দুর্নীতি রুখতে বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের অবিলম্বে অপসারণের আহ্বান জানান জোটের শীর্ষ নেতারা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। দেশবিরোধী অপতৎপরতা, সাবেক কাউন্সিলরদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, গত জুলাই আগস্টের চেয়ে বর্তমানে কঠিন সময় পার করছি। আমাদের ঐক্য এবং সংগ্রামী চেতনায় কোথায় যেন চিড় ধরেছে। একটি অপতৎপরতা চলছে। হাসিনার বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকারের যে যাত্রা শুরু হয়েছে তাতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছি। আমাদের আস্থা এখনো আছে। কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত ভুল করছেন। যার কারণে আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরেছে। আমাদের ঐক্য ও সংগ্রামী চেতনা অটুট না থাকলে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের শত্রুরা বেশি খুশি হবে। আপানারা দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিলে জনতা সবচেয়ে বেশি খুশি হবে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে অধিকার আদায়ের কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয়েছে। এটি কারও একক কৃতিত্ব নয়। বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৭ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ৫ আগস্ট রাজপথে নেমে তাকে বিতাড়িত করেছে। আজকে একটি মহল ওই বিজয়কে নিজেদের বলে দাবি করছে। কিন্তু আমি সেটা মেনে নিতে পারি না। কারণ বিগত ১৭ বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুনি হাসিনার সরকারের সীমাহীন জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো বিদ্যমান। তারা কলকাতা এবং দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ হতে হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে ভোটবিহীন তিনটি নির্বাচনে যারা কাউন্সিলর হয়েছিলেন আজ তাদের পুনর্বাসনের ধৃষ্টতা দেখানো হচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্র সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেব ইনশাআল্লাহ।
এহসানুল হুদা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে টিকে আছেন। আজকে একজন উপদেষ্টা বলেন ৫৩ বছরে রাজনীতিবিদরা কী করেছেন? উল্টাপাল্টা বলবেন না। ৫৩ বছরে দেশে যা হয়েছে তা রাজনীতিবিদরাই করেছে। দল করার অধিকার সবারই আছে কিন্তু সরকারি প্রটোকল নিয়ে দল করলে তার জনভিত্তি থাকবে না।
তিনি বলেন, সচিবালয়ে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। যাতে সচিবালয়ে থাকা নথিগুলো পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ জন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না, রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না। আমরা রাজপথে নামলে আপনাদের ক্ষমতার মসনদ কিন্তু চুরমার হয়ে যাবে। সুতরাং অতিদ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিন।
সভাপতির বক্তব্যে জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, এখন লাখ মামলায় ৫০ লাখ মানুষকে আসামি করেছে। অবশেষে বাংলার মাটি থেকে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। যাতে দেশবাসী তার বিবেক বিবেচনা মতে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ হাঁটুভাঙা এবং মাজাভাঙা। তারা ব্যর্থ। তারা কোনো কথা বলতে পারেন না। তারা উল্টাপাল্টা কথা বললে আমরা বেশিদিন সহ্য করব না। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন না দিলে আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামব। আমরা সিদ্ধান্ত নিলে ২৪ ঘণ্টা টিকতে পারবেন না। ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করবেন সেটা আমরা হতে দেব না। জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। নতুন বছর উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা যে ভাষণ দেবেন আমরা তাতে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেওয়ার আহ্বান জানাই। সচিবালয়ে আগুন অশনিসংকেত। জনগণকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলবেন না। আপনাদের দুঃস্বপ্ন দেশের মানুষ বাস্তবায়ন হতে দেবে না। যতক্ষণ না নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা হবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন- শেখ হাসিনার পতনের পর নাকি ৫ লাখ লোক খুন হবে। আমরা কিন্তু তেমন কিছু দেখিনি, একজন মানুষকেও খুন করি নাই। বরং তারা বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে টিভিতে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।