ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমান, স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্নবের বিদেশে গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
এর আগে রোববার মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়। এনবিআরের সদ্য ওএসডি হওয়া এই সদস্য যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য বিমান, স্থল, সীমান্ত গুলোয় সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যরা যেন বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থায়ই দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য এই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বড় বড় সাংবাদিকদের কিনেই তারপর এসেছি, সব থেমে যাবে: মতিউরের প্রথম স্ত্রী
মতিউর রহমান রোববার কোনো এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন চলছে। তবে আলোচনার গুঞ্জনের বিষয়টিকে সেফ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা।
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসার পর থেকে মতিউর রহমানের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তার বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি। এমনকি কুরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর অফিসে আসেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ছাগলকাণ্ডের ১৪ দিন পর বৃহস্পতিবার নরসিংদীতে জনসম্মুখে আসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। জানা গেছে, বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দুটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন। তবে সভাকক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেননি। সভা শেষে কালো রংয়ের পাজেরো জিপে তিনি উপজেলা থেকে বেরিয়ে যান। তখন সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকলেও তাদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না।
উপজেলা পরিষদের দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তার দম্ভোক্তি ছিল-‘ঢাকার ও নরসিংদীর জাতীয় পত্রিকা ও টিভির বড় বড় সাংবাদিকদের কিনেই উপজেলা পরিষদে এসেছি। তারা আর কিছু করতে পারবে না। সব থেমে যাবে।’
এসব বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লায়লা কানিজ লাকীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
মতিউর ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে এলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর তার সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বিএফআইইউ, এনবিআরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও এর আগে আরও চারবার তার বিরুদ্ধে সম্পদের অনুসন্ধানে টিম গঠন করেছিল সংস্থাটি। প্রতিবারই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে তা পরিসমাপ্তি করা হয়েছে। তবে এবার দুদকের পাশাপাশি মতিউর পরিবারের সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই করছে এনবিআর-এর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) একটি টিম।
রোববার মতিউরকে এনবিআরের সদস্যপদ থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এরপর তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা মতিউর ঈদের ছুটি শেষে এখনো তার কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬০ দিনের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ না দিলে তাকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।