ঢাকা ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জিয়াউর রহমান ছিলেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন যোদ্ধা: ফখরুল গাজায় প্রবেশের জন্য প্রস্তুত ১ হাজার ৩০০ ত্রাণবাহী ট্রাক মনোহরগঞ্জে ডায়াবেটিক হাসপাতাল উদ্বোধন। আফতাবনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু পন্ডিত – সাধারণ সম্পাদক জহির জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বেলাবোতে বিএনপির শীতবস্ত্র বিতরণ নাগেশ্বরীতে এমপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ বায়রা সদস্য কল্যাণ পরিষদ এর ৫ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মিলন মেলা-২০২৫ অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ফের উত্তেজনা জনপ্রিয় বিনোদনের স্থান নন্দন পার্ক বন্ধের পথে মালিকপক্ষের দ্বন্দ্বে পবিপ্রবির নির্মাণাধীন হলে পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, বটির কোপে আহত ১

কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু,পালালেন চিকিৎসক

কুমিল্লায় ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মিম আকতার (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।সোমবার নগরীর ঝাউতলার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত মিম আকতার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া কৃষ্ণপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। সে কংশনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে গলায় টনসিলের ব্যথা নিয়ে মিম তার মায়ের সঙ্গে ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন মো. জহিরুল হকের কাছে যায়। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে গলার কিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখালে তিনি অপারেশনের কথা বলেন।

সেই অনুযায়ী রবিবার বিকালে মিম তার মায়ের সঙ্গে টনসিল অপারেশনের জন্য চিকিৎসক মো. জহিরুল হকের কাছে আসে। তারপর অপারেশনের খরচ বাবদ ১৪ হাজার টাকা লাগবে বলে জানায় ওই চিকিৎসক।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চিকিৎসক অপারেশনের জন্য মিমকে একই এলাকার হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পরপরই মিমের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যায়। ১০ মিনিট পর চিকিৎসক জহিরুল বের হয়ে স্বজনদের বলে মিম হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় মিম।

নিহতের চাচাতো ভাই শ্রাবণ ইসলাম বলেন, ওটিতে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলে আপনাদের মেয়ের অবস্থা ভালো না, তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তারা নিজ খরচে আমাদেরকে মেডিকেলে পাঠান। সেখানে গিয়ে আমাদেরকে ডা. জহির ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বলে বাড়িতে চলে যান আপনারা। প্রয়োজনে আরো টাকা দেবে বলেও জানায় ডা. জহির। শ্রাবণের অভিযোগ ইনজেকশন ভুল দেওয়ার কারণেই আমার বোন মারা গেছে।

মিমের মা লিপি আক্তার বলেন, আমার মেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। গলায় ছোট একটা টনসিল হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে জহির ডাক্তার বের হয়ে বলে আমার মেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেছে। তারপর তারাই আমার মেয়েকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এর আগে পথে আমার মেয়ে মারা গেছে। প্রশাসনের কাছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

মিমের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর জহির ডাক্তার আমারে অপারেশনের টাকা ফেরত দিতে চান। আমাকে বলছে আমরা যত টাকা চাই উনি আমাদের টাকা দেবেন। টাকা দিয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন। আমরা রাজি না হওয়ায় জহির ডাক্তার আমার মেয়ের পরীক্ষার রিপোর্টসহ যাবতীয় কাগজ নিয়ে হাসপাতাল তালা মেরে পালিয়ে গেছেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা থানায় ও সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ করবো।

ঘটনার কিছু সময় পরই ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তারা হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়।

এই বিষয়ে চিকিৎসক জহিরুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এই ঘটনার পর ৯৯৯ এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। নিহত মিমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন নাছিমা আকতারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জিয়াউর রহমান ছিলেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন যোদ্ধা: ফখরুল

কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু,পালালেন চিকিৎসক

আপডেট সময় ০১:৪৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

কুমিল্লায় ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মিম আকতার (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।সোমবার নগরীর ঝাউতলার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত মিম আকতার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া কৃষ্ণপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। সে কংশনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে গলায় টনসিলের ব্যথা নিয়ে মিম তার মায়ের সঙ্গে ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন মো. জহিরুল হকের কাছে যায়। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে গলার কিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখালে তিনি অপারেশনের কথা বলেন।

সেই অনুযায়ী রবিবার বিকালে মিম তার মায়ের সঙ্গে টনসিল অপারেশনের জন্য চিকিৎসক মো. জহিরুল হকের কাছে আসে। তারপর অপারেশনের খরচ বাবদ ১৪ হাজার টাকা লাগবে বলে জানায় ওই চিকিৎসক।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চিকিৎসক অপারেশনের জন্য মিমকে একই এলাকার হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পরপরই মিমের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যায়। ১০ মিনিট পর চিকিৎসক জহিরুল বের হয়ে স্বজনদের বলে মিম হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় মিম।

নিহতের চাচাতো ভাই শ্রাবণ ইসলাম বলেন, ওটিতে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলে আপনাদের মেয়ের অবস্থা ভালো না, তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তারা নিজ খরচে আমাদেরকে মেডিকেলে পাঠান। সেখানে গিয়ে আমাদেরকে ডা. জহির ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বলে বাড়িতে চলে যান আপনারা। প্রয়োজনে আরো টাকা দেবে বলেও জানায় ডা. জহির। শ্রাবণের অভিযোগ ইনজেকশন ভুল দেওয়ার কারণেই আমার বোন মারা গেছে।

মিমের মা লিপি আক্তার বলেন, আমার মেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। গলায় ছোট একটা টনসিল হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে জহির ডাক্তার বের হয়ে বলে আমার মেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেছে। তারপর তারাই আমার মেয়েকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এর আগে পথে আমার মেয়ে মারা গেছে। প্রশাসনের কাছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

মিমের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর জহির ডাক্তার আমারে অপারেশনের টাকা ফেরত দিতে চান। আমাকে বলছে আমরা যত টাকা চাই উনি আমাদের টাকা দেবেন। টাকা দিয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন। আমরা রাজি না হওয়ায় জহির ডাক্তার আমার মেয়ের পরীক্ষার রিপোর্টসহ যাবতীয় কাগজ নিয়ে হাসপাতাল তালা মেরে পালিয়ে গেছেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা থানায় ও সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ করবো।

ঘটনার কিছু সময় পরই ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তারা হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়।

এই বিষয়ে চিকিৎসক জহিরুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এই ঘটনার পর ৯৯৯ এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। নিহত মিমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন নাছিমা আকতারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।