আঁকড়ে ধরেও শিশুসন্তানকে বাঁচাতে পারেননি পিতা। আজিজুল হক (৩০) নৌকাডুবির সময় এক হাতে শিশু সন্তান, অপর হাতে স্ত্রীকে নিয়ে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে তীরে পৌঁছেন। এসে দেখেন স্ত্রী চায়না বেগম (২৪) জীবিত থাকলেও শিশুসন্তান আয়শা সিদ্দিকা (১৩ মাস) তার হাতেই মৃত অবস্থায় রয়েছে।
এ মর্মান্তিক ঘটনাটি বুধবার সন্ধ্যায় তিস্তা নদীবেষ্টিত কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের খামার দামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন মাঝেরচর এলাকায় ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, নৌকাডুবির ঘটনায় একই পরিবারের চারজন নিখোঁজ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিন উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরায় গিয়ে দেখা যায়, আনিচা বেগম (৬০) বাড়িতে বিলাপ করছেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নৌকাডুবিতে তার সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলে আনিছুর রহমান (২৮), পুত্রবধূ রুপালী বেগম (২৩), নাতিন আইরিন (৯) ও ইরা মনি (১০) ও একই এলাকার কয়জাল হকের শিশুসন্তান কুলসুম (আড়াই বছর) নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরে পাবার জন্য স্বজনরা নদীর তীরে অপেক্ষা করছেন।
আজিজুল হক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নৌকা ডুবে যাবার পর তিনি ভেসে উঠে দেখতে পান তার শিশু সন্তান আয়শা ভেসে আছে। এ সময় তিনি এক হাত দিয়ে তাকে ধরেন। একই সময় স্ত্রী চায়না বেগম ভেসে উঠলে তিনি তাকেও ধরেন। এরপর খুব কষ্ট করে স্রোতের বিপরীতে দুজনকে দুই হাতে ধরে নদীর তীরে আসেন। স্থানীয়দের সহায়তায় উপরে উঠে দেখেন স্ত্রী বেঁচে থাকলেও তার হাতে থাকা শিশুসন্তানের দেহে প্রাণ নেই। তার অপর শিশু শামীম (৫) নিখোঁজ রয়েছে।
এলাকাবাসী ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা খেয়াঘাট এলাকা থেকে জয়নাল আবেদীনের পরিবার ও তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে বুধবার সন্ধ্যার দিকে ২৫ জন ব্যক্তি একটি নৌকায় উঠে। তারা নৌকাযোগে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গাবরের চর এলাকায় জয়নাল আবেদীনের মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ঈদপরবর্তী দাওয়াতে যাচ্ছিলেন।
নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কিছু সময় পর মাঝ নদীতে হঠাৎ দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে। এ সময় তিস্তার প্রবল স্রোতে নৌকাটি উলটে গিয়ে ডুবে যায়। নদীতে সাঁতার কেটে ৮ জন তীরে উঠতে পারলেও বাকিরা ডুবে যান। পরে স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে উলিপুর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজে নামেন। এ সময় নদী থেকে আরও ১০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে তাদের দেখানো বিভিন্ন জায়গায় ডুবুরি দল অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ ৬ জনের কোনো সন্ধান মেলেনি।