ঢাকা ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়াকে ড্রোন সহায়তা করা নিয়ে মিথ্যা বলছে ইরান: জেলেনস্কি

ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের মধ্যে রাশিয়াকে ড্রোন সহায়তা করা নিয়ে ইরান ‘মিথ্যা কথা’ বলছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমনকি ইরানের বিরুদ্ধে তিনি ‘সন্ত্রাসবাদী সহযোগিতারও’ অভিযোগ এনেছেন।

রোববার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে, তারা রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করেছে। তবে ইরানের দাবি, এসব ড্রোন ইউক্রেন যুদ্ধের কয়েক মাস আগে রাশিয়াকে দেওয়া হয়েছে। আর এরপরই ইরান ‘মিথ্যা কথা’ বলছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বাস, ইউক্রেনের মূল অবকাঠামোগত স্থাপনাগুলোতে হামলার জন্য ইরানের তৈরি ‘কামিকাজে’ ড্রোন ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তবে ইরান এবং রাশিয়া উভয় দেশই আগে এটি অস্বীকার করেছিল।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাশিয়ার ব্যাপক হামলার পর ইউক্রেনের বেশিরভাগ অংশে ব্ল্যাকআউট হয়েছে। আর এরপর থেকেই পশ্চিমা কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করার এবং রাশিয়ান ড্রোন পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য স্থলভাগে লোক সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন।

তেহরানে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক মাস আগেই আমরা রাশিয়াকে সীমিত সংখ্যক ড্রোন সরবরাহ করেছি।’

আর এরপরই নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইরানকে মিথ্যা বলার জন্য অভিযুক্ত করেন। এমনকি রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে ‘স্বীকারোক্তি মূলক’ বক্তব্যেও দেশটি মিথ্যা বলছে বলে দাবি করেন তিনি।

৪৪ বছর বয়সী এই ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, যদিও ইরান বলেছে, তারা কেবল রাশিয়াকে অল্প সংখ্যক ড্রোন সরবরাহ করেছে, কিন্তু ইউক্রেন প্রতিদিন প্রায় ১০টি করে ইরানি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

এছাড়া রাশিয়াকে সহায়তা করার বিষয়ে ইরানকে সতর্ক করে জেলেনস্কি বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলাফল বিপরীতমুখী হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, ইরানি প্রশিক্ষকরা রাশিয়ান সন্ত্রাসীদের ড্রোন ব্যবহারের কৌশল শিখিয়েছেন এবং তেহরান এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবং যদি ইরান সুস্পষ্ট এসব তথ্য সম্পর্কে মিথ্যা বলতে থাকে, তাহলে এর মানে হলো- রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সন্ত্রাসী সহযোগিতা এবং রাশিয়া এই ধরনের সহযোগিতার জন্য ইরানকে কী পরিমাণ অর্থ প্রদান করছে তা তদন্ত করার জন্য বিশ্ব আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাবে।’

জেলেনস্কির দাবি, ‘আধুনিক বিশ্বে এমন কিছু হবে না যে, সন্ত্রাসী বা তাদের সহযোগীদের কেউ শাস্তির বাইরে থাকবে।’ অবশ্য ইউক্রেন সংঘাতে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য সবাই ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনে বেসামরিক অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বাঁধে ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কিয়েভ। যদিও ইউক্রেনে হামলায় ইরানের ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

গত মাসে ইরানের দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও দু’জন ইরানি কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছিলেন, ইরান আরও ড্রোনের পাশাপাশি রাশিয়াকে ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সরাবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাশিয়াকে ড্রোন সহায়তা করা নিয়ে মিথ্যা বলছে ইরান: জেলেনস্কি

আপডেট সময় ১২:০৯:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ নভেম্বর ২০২২

ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের মধ্যে রাশিয়াকে ড্রোন সহায়তা করা নিয়ে ইরান ‘মিথ্যা কথা’ বলছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমনকি ইরানের বিরুদ্ধে তিনি ‘সন্ত্রাসবাদী সহযোগিতারও’ অভিযোগ এনেছেন।

রোববার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে, তারা রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করেছে। তবে ইরানের দাবি, এসব ড্রোন ইউক্রেন যুদ্ধের কয়েক মাস আগে রাশিয়াকে দেওয়া হয়েছে। আর এরপরই ইরান ‘মিথ্যা কথা’ বলছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বাস, ইউক্রেনের মূল অবকাঠামোগত স্থাপনাগুলোতে হামলার জন্য ইরানের তৈরি ‘কামিকাজে’ ড্রোন ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তবে ইরান এবং রাশিয়া উভয় দেশই আগে এটি অস্বীকার করেছিল।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাশিয়ার ব্যাপক হামলার পর ইউক্রেনের বেশিরভাগ অংশে ব্ল্যাকআউট হয়েছে। আর এরপর থেকেই পশ্চিমা কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করার এবং রাশিয়ান ড্রোন পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য স্থলভাগে লোক সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন।

তেহরানে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক মাস আগেই আমরা রাশিয়াকে সীমিত সংখ্যক ড্রোন সরবরাহ করেছি।’

আর এরপরই নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইরানকে মিথ্যা বলার জন্য অভিযুক্ত করেন। এমনকি রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে ‘স্বীকারোক্তি মূলক’ বক্তব্যেও দেশটি মিথ্যা বলছে বলে দাবি করেন তিনি।

৪৪ বছর বয়সী এই ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, যদিও ইরান বলেছে, তারা কেবল রাশিয়াকে অল্প সংখ্যক ড্রোন সরবরাহ করেছে, কিন্তু ইউক্রেন প্রতিদিন প্রায় ১০টি করে ইরানি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

এছাড়া রাশিয়াকে সহায়তা করার বিষয়ে ইরানকে সতর্ক করে জেলেনস্কি বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলাফল বিপরীতমুখী হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, ইরানি প্রশিক্ষকরা রাশিয়ান সন্ত্রাসীদের ড্রোন ব্যবহারের কৌশল শিখিয়েছেন এবং তেহরান এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবং যদি ইরান সুস্পষ্ট এসব তথ্য সম্পর্কে মিথ্যা বলতে থাকে, তাহলে এর মানে হলো- রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সন্ত্রাসী সহযোগিতা এবং রাশিয়া এই ধরনের সহযোগিতার জন্য ইরানকে কী পরিমাণ অর্থ প্রদান করছে তা তদন্ত করার জন্য বিশ্ব আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাবে।’

জেলেনস্কির দাবি, ‘আধুনিক বিশ্বে এমন কিছু হবে না যে, সন্ত্রাসী বা তাদের সহযোগীদের কেউ শাস্তির বাইরে থাকবে।’ অবশ্য ইউক্রেন সংঘাতে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য সবাই ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনে বেসামরিক অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বাঁধে ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কিয়েভ। যদিও ইউক্রেনে হামলায় ইরানের ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

গত মাসে ইরানের দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও দু’জন ইরানি কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছিলেন, ইরান আরও ড্রোনের পাশাপাশি রাশিয়াকে ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সরাবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।