সীমান্তপথে ট্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ওয়াশিংটনভিত্তিক মার্কিন থিংকট্যাংক সংস্থা থার্টিএইট নর্থ প্রোজেক্ট বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটের ছবির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।
রুশ ভূখণ্ড থেকে উত্তর কোরিয়াকে পৃথক করা তুমেন নদীর রেলসেতু দিয়ে গত শুক্রবার একটি অস্ত্রবাহী ট্রেন উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ার উদ্দেশে গিয়েছে উল্লেখে করে শনিবার এক বিবৃতিতে থার্টি এইট নর্থ প্রোজেক্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘স্যাটেলাইটের যে ছবি আমাদের কাছে রয়েছে, তা দেখে এই ট্রেন চলাচলের উদ্দেশ্য অনুমান করা অসম্ভব। তবে আমরা ধারণা করছি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ফের শুরু হয়েছে। কারণ আমরা সবাই জানি— উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে চেয়েছে রাশিয়া।’
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে স্থল ও সমুদ্র— উভয় দিকেই সীমান্ত রয়েছে। স্থলপথে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার, আর সমুদ্রপথে এর দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৭ কিলোমিটার। উত্তর কোরিয়ার উত্তর দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া তুমেন নদীই স্থলভাগে দুই দেশকে পৃথক করেছে। এই নদীর ওপর ৮০০ মিটার লম্বা একটি সেতু রয়েছে। এই সেতুর এক প্রান্তে উত্তর কোরিয়ার তুমাঙ্গাং স্টেশন, অন্য প্রান্তে রাশিয়ার খাসান স্টেশন।
তুমেন নদীর ওপর রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে সংযোগকারী সেতুটি ‘কোরিয়া-রাশিয়া ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ’ নামে পরিচিত। দুই দেশের একমাত্র এই স্থল সীমান্তটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি করোনা মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর এই প্রথম সেতুটির ওপর ট্রেন চলতে দেখা গেছে।
‘ট্রেনটি কখন উত্তর কোরিয়া ছেড়ে গেছে, সেখানে কয়টি বগি ছিল এবং কখন রাশিয়া গিয়ে পৌঁছেছে— সেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে, কিন্তু ট্রেনের ভেতরে কি কি জিনিস ছিল— এখনও আমরা স্পষ্টভাবে জানতে পারিনি।’
এদিকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠিয়েছে বলে জানতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্যই পাঠানো হয়েছে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
গত সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল—রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছে উত্তর কোরিয়া। তবে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন— এমন কোনো চুক্তি দুই দেশের মধ্যে হয়নি এবং নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়ার কাছে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র বিক্রির সম্ভাবনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অভিযোগের কোনো প্রতিক্রিয়া অবশ্য উত্তর কোরিয়া জানায়নি, তবে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কেন্দ্রীয় পশু চিকিৎসা দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যকার স্থল-সীমান্ত ফের চালু হয়েছে এবং সম্প্রতি রেলযোগে রাশিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় ৩০টি প্রশিক্ষিত ‘ওরলভ টটার’ ঘোড়া পাঠানো হয়েছে।
‘ওরলভ টটার’ একটি রুশ ঘোড়ার জাত। দুর্দান্ত গতি ও সহিষ্ণুতার জন্য এটি বিশ্বের সেরা জাতের ঘোড়াগুলোর একটি। আর কিম জং উন বরাবরই ঘোড়ার ব্যাপারে শৌখিন। এর আগেও বিগত বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে ঘোড়া কিনেছে উত্তর কোরিয়া।