এশিয়ার পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ দেশ উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কার্যক্রম থামাতে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রই বলছে তাদের এ কৌশল ব্যর্থ হয়েছে।
নিজেদের একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে শুক্রবার এমন তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। উত্তর কোরিয়ার ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শক্তি-সামর্থ্য দুর্বল করে দিয়ে তাদের আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা। কিন্তু এটি কাজে দেয়নি। এর বদলে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক শক্তি কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়েছে। এ বছর তারা রেকর্ড পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আঘাত হানতে তৈরি করা হয়েছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে পাঁচ বছর আবারও পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে তারা।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক নীতি-নির্ধারকরদের এ বিষয়ে করার মতো তেমন কিছু আর নেই। তবে তারা এখন বিশ্লেষণ করতে পারেন কি ভুল হলো আর এ ভুলের জন্য কে দায়ী। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিংটন ও বারাক ওবামার প্রশাসনে ‘উত্তর কোরিয়া ও ইরান নিষেধাজ্ঞা’ নিয়ে কাজ করা কূটনীতিক জোসেফ ডে থমাস রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে ব্যর্থ হয়েছি। এটি একটি পুরো প্রজন্মের ব্যর্থতা। পুরো একটি প্রজন্ম এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করেছে, আর এটি ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমাদের এখন পরবর্তী ধাপে যেতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এখন কি করতে হবে।’
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনও ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাবে তারা দাবি করছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কার্যক্রম ধীরগতিতে চলেছে। নিষেধাজ্ঞা না দেওয়া হলে তাদের অস্ত্র শক্তি আরও বাড়ত।
এ ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়েছে, এটির সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করব। আমি মনে করি যদি নিষেধাজ্ঞা না থাকত তাহলে উত্তর কোরিয়া আরও অনেক অনেক এগিয়ে থাকত এবং বিশ্ব ও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য আরও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াত। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএস ট্রেজারি এবং হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা কাউন্সিলের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।
সাবেক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন নিষেধাজ্ঞাগুলো কখনো দৃঢ়ভাবে আরোপ করা হয়নি। তারা উত্তর কোরিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নড়েবড়ে অবস্থান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীন-তাইওয়ান উত্তেজনাকে দায়ী করছেন। তাদের ভাষ্য অন্যান্য ঝামেলার কারণে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করে দিয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো উত্তর কোরিয়া সহজেই পাশ কাটিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনেক আগে থেকেই উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালাতে যেন পর্যাপ্ত অর্থ না পায় সেজন্য ২০০৬ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিরাপত্তা পরিষদ। বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার কয়লা, লোহা, সীসা, টেক্সটাইল এবং সামুদ্রিক খাবার রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি এবং শোধিত জ্বালানি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করে রাখা হয়েছে।
তারপরও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই জানান উত্তর কোরিয়া নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করছে এবং নির্বিঘ্নে তাদের অস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া যখন পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল তখন নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য রাশিয়া-চীন শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞার পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা কি করবে এ নিয়ে সন্দেহ আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়া যেসব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে সেগুলো নিয়ে শুক্রবার বৈঠকে বসে নিরাপত্তা পরিষদ। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া-চীনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলেছে উত্তর কোরিয়াকে ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা।