ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন ও কিভাবে হলো ইমরানের ওপর এই হামলা?

সরকারবিরোধী লংমার্চে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় গুলিতে আহত হয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ও সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দেশটির পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

পরে ইমরান খানকে উদ্ধার করে শওকত খানম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় পাকিস্তানের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে এবং এসময় পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তবে তার জীবন হুমকির মুখে পড়েনি।

ওই হামলায় ইমরান খানসহ মোট ১৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ইমরান খানের এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী টুইটারে বলেছেন, ‘এই হামলা কেবল ইমরান খানের হত্যার প্রচেষ্টা নয় বরং সমগ্র পাকিস্তানের ওপরই একটি আক্রমণ।’

হামলার পর ইমরান খানকে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন চিকিৎসক বলেছেন, ইমরানের পায়ে বুলেটের টুকরো ছিল এবং তার পায়ের টিবিয়া হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনা কোথায় ঘটেছে?
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) দূরে পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আগাম নির্বাচনের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ইমরান।

ইমরানের এই লংমার্চে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এবং ১১ নভেম্বর এটির ইসলামাবাদে পৌঁছানোর কথা ছিল।

হামলার ঘটনা কেন ঘটল?
লংমার্চের সময় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো এক হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদের আল্লাহ ওয়াল্লা চকে লংমার্চে দুই হামলাকারী ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। এ সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে এক হামলাকারী নিহত হন। অপর হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।

গ্রেপ্তার হওয়া বন্দুকধারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। আবার কোনো গোষ্ঠী হামলার দায়ও স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলোতে হামলাকারী হিসেবে একজনকে দেখানো হয়। সন্দেহভাজন ওই বন্দুকধারীর বয়স বিশ বা ত্রিশের মধ্যে। তিনি বলেন, তিনি ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং তিনি একাই এই কাজে অংশ নেন।

অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি দাবি করেন, ‘ইমরান খান লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি তাকে সহ্য করতে পারছিলাম না। যে কারণে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি। আমি ইমরান খানকে হত্যার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। আমি কেবল ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। এছাড়া আমার আর কাউকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না।’

হামলাকারী এই যুবক বলেন, ইমরান খান লাহোর ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তবে এই হামলায় তার কোনও সহযোগী আছে কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক জবাব দেন হামলাকারী। তিনি বলেন, ‘আমার সাথে আর কেউ ছিল না। আমি একাই ছিলাম।’

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, অভিযুক্ত হামলাকারীর স্বীকারোক্তিমূলক এই ফুটেজটি পুলিশ রেকর্ড করেছে।

হামলার বিস্তৃত প্রেক্ষাপট কী?
চলতি বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরানের খানের সরকারকে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে আগাম নির্বাচনের দাবিতে সারাদেশে জনসভা করে আসছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।

সরকারবিরোধী এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে আসছিলেন ইমরান খান। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে।

মূলত, আগামী বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের আগেই আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে সমাবেশ করছেন ইমরান খান। তার এসব সমাবেশ ঘিরে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। ইমরান খান বরাবরই বলেছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছে সরকার।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বর্তমান জোট সরকারের বিরুদ্ধে গত ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে ‘লং মার্চ’ শুরু করেন ইমরান খান। সরকারবিরোধী এই লংমার্চ আগামী ১১ নভেম্বর ইসলামাবাদ পৌঁছাবে বলে আশা করা হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ইমরান খানের ওপর গুলি চালানোর এই ঘটনা পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কারণ শেহবাজ শরিফের বর্তমান সরকার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ।

লাহোর-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসাদ রহিম খান বলেন, ‘বারবার যে প্রশ্নটি করা হচ্ছে তা হলো- আমরা যদি সংসদীয় ব্যবস্থার রাষ্ট্রই হই, এবং যদি পাকিস্তানে একটি বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে হয়, তাহলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলতে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ দেশে সাধারণ নির্বাচনে হতে দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবং জনসাধারণের বিশ্বাসের ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যা দেখছি, আমার আশঙ্কা- আজকের হত্যা প্রচেষ্টার পর তা (এই ধরনের হামলা) আরও বেড়ে যাবে।’

পাকিস্তানে আল জাজিরার সংবাদদাতা আবিদ হুসেন বলেছেন: ‘যদিও ইমরান খান নিজেই তার লংমার্চের সময় সম্ভাব্য রক্তপাতের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তারপরও এই ধরনের হামলা পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকেই প্রতিফলিত করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি কেবল সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে। কারণ শেহবাজ সরকার যেকোনো উপায়ে ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায় বলে পিটিআই অভিযোগ করে আসছে। এমনকি ইমরান খান নিজেই গত কয়েক মাসে একাধিকবার বলেছেন যে, তার জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে।’

হামলাকারীর কী হয়েছে?
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মুরিয়াম আওরঙ্গজেব বলেছেন, ইমরান খানের ওপর হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া তদন্তের জন্য ফরেনসিক পরীক্ষা চালাতে হামলার ঘটনাস্থলটি ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ।

হামলার তাৎক্ষণিক ফলাফল কী?
আল জাজিরার কামাল হায়দার ইসলামাবাদ থেকে জানিয়েছেন, ইমরান খানের ওপর গুলি চালানোর পরে পাকিস্তানজুড়ে রাস্তায় ‘যথেষ্ট ক্ষোভ’ বেড়েছে। তিনি বলেছেন, ‘হামলার ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ইমরানের সমর্থক ও বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে। এসময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে দেয় এবং এটি বড় কিছুতে পরিণত হতে পারে।’

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরিফা নূর দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর এই হামলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আল জাজিরাকে নূর বলেন, ‘পাকিস্তানের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর মতো ঘটনা কেউই আশা করেনি। কারণ ২০০৭ সালে আমরা এই ধরনের সহিংসতার মধ্য দিয়ে আমাদের একজন জনপ্রিয় নেতাকে হারিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘হামলার পরপরই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের সমর্থকরা তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় নামেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া বেশ আক্রমণাত্মক ছিল।’

‘তবে আশা করা যায়, হামলার শিকার হওয়া নেতৃত্ব একবার এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠলে… তারা তাদের সমর্থকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন এবং ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোকে হত্যার পর পাকিস্তানে যে ধরনের সহিংসতা শুরু হয়েছিল তা প্রতিরোধ করা যাবে।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কেন ও কিভাবে হলো ইমরানের ওপর এই হামলা?

আপডেট সময় ০৬:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০২২

সরকারবিরোধী লংমার্চে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় গুলিতে আহত হয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ও সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দেশটির পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

পরে ইমরান খানকে উদ্ধার করে শওকত খানম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় পাকিস্তানের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে এবং এসময় পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তবে তার জীবন হুমকির মুখে পড়েনি।

ওই হামলায় ইমরান খানসহ মোট ১৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ইমরান খানের এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী টুইটারে বলেছেন, ‘এই হামলা কেবল ইমরান খানের হত্যার প্রচেষ্টা নয় বরং সমগ্র পাকিস্তানের ওপরই একটি আক্রমণ।’

হামলার পর ইমরান খানকে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন চিকিৎসক বলেছেন, ইমরানের পায়ে বুলেটের টুকরো ছিল এবং তার পায়ের টিবিয়া হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনা কোথায় ঘটেছে?
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) দূরে পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আগাম নির্বাচনের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ইমরান।

ইমরানের এই লংমার্চে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এবং ১১ নভেম্বর এটির ইসলামাবাদে পৌঁছানোর কথা ছিল।

হামলার ঘটনা কেন ঘটল?
লংমার্চের সময় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো এক হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদের আল্লাহ ওয়াল্লা চকে লংমার্চে দুই হামলাকারী ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। এ সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে এক হামলাকারী নিহত হন। অপর হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।

গ্রেপ্তার হওয়া বন্দুকধারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। আবার কোনো গোষ্ঠী হামলার দায়ও স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলোতে হামলাকারী হিসেবে একজনকে দেখানো হয়। সন্দেহভাজন ওই বন্দুকধারীর বয়স বিশ বা ত্রিশের মধ্যে। তিনি বলেন, তিনি ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং তিনি একাই এই কাজে অংশ নেন।

অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি দাবি করেন, ‘ইমরান খান লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি তাকে সহ্য করতে পারছিলাম না। যে কারণে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি। আমি ইমরান খানকে হত্যার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। আমি কেবল ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। এছাড়া আমার আর কাউকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না।’

হামলাকারী এই যুবক বলেন, ইমরান খান লাহোর ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তবে এই হামলায় তার কোনও সহযোগী আছে কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক জবাব দেন হামলাকারী। তিনি বলেন, ‘আমার সাথে আর কেউ ছিল না। আমি একাই ছিলাম।’

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, অভিযুক্ত হামলাকারীর স্বীকারোক্তিমূলক এই ফুটেজটি পুলিশ রেকর্ড করেছে।

হামলার বিস্তৃত প্রেক্ষাপট কী?
চলতি বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরানের খানের সরকারকে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে আগাম নির্বাচনের দাবিতে সারাদেশে জনসভা করে আসছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।

সরকারবিরোধী এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে আসছিলেন ইমরান খান। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে।

মূলত, আগামী বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের আগেই আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে সমাবেশ করছেন ইমরান খান। তার এসব সমাবেশ ঘিরে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। ইমরান খান বরাবরই বলেছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছে সরকার।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বর্তমান জোট সরকারের বিরুদ্ধে গত ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে ‘লং মার্চ’ শুরু করেন ইমরান খান। সরকারবিরোধী এই লংমার্চ আগামী ১১ নভেম্বর ইসলামাবাদ পৌঁছাবে বলে আশা করা হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ইমরান খানের ওপর গুলি চালানোর এই ঘটনা পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কারণ শেহবাজ শরিফের বর্তমান সরকার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ।

লাহোর-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসাদ রহিম খান বলেন, ‘বারবার যে প্রশ্নটি করা হচ্ছে তা হলো- আমরা যদি সংসদীয় ব্যবস্থার রাষ্ট্রই হই, এবং যদি পাকিস্তানে একটি বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে হয়, তাহলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলতে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ দেশে সাধারণ নির্বাচনে হতে দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবং জনসাধারণের বিশ্বাসের ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যা দেখছি, আমার আশঙ্কা- আজকের হত্যা প্রচেষ্টার পর তা (এই ধরনের হামলা) আরও বেড়ে যাবে।’

পাকিস্তানে আল জাজিরার সংবাদদাতা আবিদ হুসেন বলেছেন: ‘যদিও ইমরান খান নিজেই তার লংমার্চের সময় সম্ভাব্য রক্তপাতের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তারপরও এই ধরনের হামলা পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকেই প্রতিফলিত করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি কেবল সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে। কারণ শেহবাজ সরকার যেকোনো উপায়ে ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায় বলে পিটিআই অভিযোগ করে আসছে। এমনকি ইমরান খান নিজেই গত কয়েক মাসে একাধিকবার বলেছেন যে, তার জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে।’

হামলাকারীর কী হয়েছে?
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মুরিয়াম আওরঙ্গজেব বলেছেন, ইমরান খানের ওপর হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া তদন্তের জন্য ফরেনসিক পরীক্ষা চালাতে হামলার ঘটনাস্থলটি ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ।

হামলার তাৎক্ষণিক ফলাফল কী?
আল জাজিরার কামাল হায়দার ইসলামাবাদ থেকে জানিয়েছেন, ইমরান খানের ওপর গুলি চালানোর পরে পাকিস্তানজুড়ে রাস্তায় ‘যথেষ্ট ক্ষোভ’ বেড়েছে। তিনি বলেছেন, ‘হামলার ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ইমরানের সমর্থক ও বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে। এসময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে দেয় এবং এটি বড় কিছুতে পরিণত হতে পারে।’

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরিফা নূর দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর এই হামলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আল জাজিরাকে নূর বলেন, ‘পাকিস্তানের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর মতো ঘটনা কেউই আশা করেনি। কারণ ২০০৭ সালে আমরা এই ধরনের সহিংসতার মধ্য দিয়ে আমাদের একজন জনপ্রিয় নেতাকে হারিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘হামলার পরপরই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের সমর্থকরা তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় নামেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া বেশ আক্রমণাত্মক ছিল।’

‘তবে আশা করা যায়, হামলার শিকার হওয়া নেতৃত্ব একবার এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠলে… তারা তাদের সমর্থকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন এবং ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোকে হত্যার পর পাকিস্তানে যে ধরনের সহিংসতা শুরু হয়েছিল তা প্রতিরোধ করা যাবে।’