প্রিয় তারকাকে চর্মচক্ষে দেখতে পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলা ভক্তের সংখ্যাটা পৃথিবীতে নেহায়েত কম নয়। লিওনেল মেসিকে দেখে, ছুঁতে পেরে, একটা সেলফি-স্বাক্ষর পেয়ে কাঁদা ভক্তও কম দেখা যায়নি। তবে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে সাংবাদিকই কেঁদে ফেললেন, এমন ঘটনার দেখা মেলে না সচরাচর। এবার এমন একটা দৃশ্যই দেখা গেল ডিরেক্টিভি স্পোর্টসে। মেসির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন চ্যানেলটির উপস্থাপক, ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিক পাবলো জিরাল্ট।
মেসির সাক্ষাৎকার নেওয়াটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার, বিষয়টা কয়েকদিন আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন আর্জেন্টাইন এই সাংবাদিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে জানিয়েছিলেন, ‘এই পেশা আর আমার জীবন আমাকে অকল্পনীয় রাস্তায় হাটিয়েছে। গতকাল আমি আমার একটা স্বপ্ন পূরণ করেছি। আমি আমার ভালোবাসার খেলোয়াড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, যে আমাকে সবচেয়ে বেশি উপভোগের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে, সেই খেলোয়াড়ের সঙ্গে। আমার পেশাগত পথটা তার পথের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, নিজেকে তাই সৌভাগ্যবান মনে করছি।’
সাক্ষাৎকারের শুরুতে দেখা যায়, জিরাল্ট মেসির বাড়িতে গিয়ে উঠছেন, আর্জেন্টাইন তারকা নিজে দরজা খুলে দিয়েছেন তাকে। শুরুর আগেই তিনি জানিয়ে দেন, সাক্ষাৎকার নিতে নয়, মেসির সাক্ষাতের জন্যেই গিয়েছেন সেখানে।
এরপর সেই ‘সাক্ষাৎ’টা টিকেছে এক ঘণ্টারও কিছু বেশি সময়। সে সময় মেসি জিরাল্টকে বলেছেন, কী করে একেকটা খারাপ ম্যাচের পর তার স্ত্রী-সন্তানরা তাকে সমর্থন দেন, তার জীবনে তার মা-বাবার ভূমিকাই বা কেমন ছিল-আছে, আর্জেন্টিনায় তার ভবিষ্যৎ, ইত্যাদি ইত্যাদি।
শেষ অংশে এসে জিরাল্ট মেসির বেশ কিছু গোলে তার ধারাভাষ্যের ভিডিও দেখান। শুরুটা করেন আর্জেন্টিনোস জুনিয়রের মাঠে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের একটা যুব প্রীতি ম্যাচে মেসির গোল দিয়ে। এই দেখে মেসি বলেন, ‘আমি জানতামই না আপনি সেই ম্যাচের ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন!’ এরপর মেসিকে দেখানো হলো তার বিশ্বকাপ অভিষেকের ম্যাচ, সার্বিয়া-মন্টেনেগ্রোর সেই ম্যাচে মেসি করেছিলেন এক গোল, করিয়েছিলেন আরও একটি। এরপর অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ২০১৫ কোপা দেল রের ফাইনালে করা বিখ্যাত গোলটাও দেখান তিনি।
বেশ কিছু গোল দেখা গেছে, যেখানে জিরাল্ট কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ধারাভাষ্য দিতে দিতেই। যার গোলে ধারাভাষ্য দিয়ে কেঁদেছেন, সেই মেসিই যখন তার সামনে বসে, তখন আবেগটা আর বাঁধ দিয়ে রাখতে পারলেন না তিনি, কেঁদেই ফেললেন।
জীবনে বহু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মেসি, কিন্তু এভাবে তার সামনে কাউকে কেঁদে ফেলতে দেখেননি আর্জেন্টাইন মহাতারকা। এবার দেখলেন, খানিকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়ও যেন হয়ে গেলেন। এরপরই সামলে নিতে চেষ্টা করলেন জিরাল্টকে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ’।
জিরাল্ট বলেন, ‘আমি ভেনাদো তুয়ের্তো থেকে উঠে আসা একজন মানুষ, যে সারা জীবন এই পেশার স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু আমি কখনো কল্পনাই করিনি আমি কখনো আপনার সঙ্গে বসতে পারব, আপনার ক্যারিয়ারের জন্য, আপনার জন্য আমার যে ভালোবাসা আছে, সেটা দেখাতে পারব। আমি আমার পুরো হৃদয় দিয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
এমন ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে পড়েন মেসি নিজেও। বলেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ। আর্জেন্টিনা বা সারা বিশ্বের মানুষজনের কাছে পৌঁছে যেতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। ফুটবলার হিসেবে, মানুষ হিসেবে তারা সবসময় ভালোবেসে; এই সাক্ষাৎকার, এই পর্দার মাধ্যমে আমি তাদের জানাতে চাই, আপনারা আমাকে সারা ক্যারিয়ার জুড়ে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তার জন্য আমিও আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’