তুরাগে মাদককারবারিদের অতর্কিত হামলায় বিআরটিএ দুই কর্মচারীসহ আহত -৮ রাজধানী তুরাগের ডিয়াবাড়িতে মাদককারবারি, চাঁদাবাজ ও সন্রাসীদের অতর্কিত হামলায় বিআরটিএ দুই কর্মচারীসহ ৭/৮ জন আহত হয়েছেন।
এসময় হামলাকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিআরটিএর ডিয়াবাড়িতে উত্তরা বিআরটিএ অফিসের সিসি ক্যামেরা ভাংচুরসহ নগদ টাকা ও মোবাইল লুটপাট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টা ও সাড়ে ১০ টায় উত্তরা বিআরটিএ অফিস এবং পাশে শাহাবুদ্দীনের বাড়ির সামনে এসব পৃথক মারামারি, সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন, বিআরটির অফিস সহকারী দারোয়ান আলমগীর হোসেন (৫৩), ঝাড়ুদার শাহনাজ বেগম (৩৪), স্হানীয় বাসিন্দা মো: শাহাবুদ্দীন (৬১) তার ছোট ভাই মো: আসাদ মিয়া (৪৭), মো: নাসির উদ্দীন (৪৮), মো: জালাল হোসেন (৪৫) ও অপু (৪০) প্রমুখ। বাকীদের নাম জানা যায়নি।
পরে স্হানীয় লোকজন আহতদেরকে উদ্বার করে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও টঙ্গীস্হ শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার জোনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।
জানা গেছে, তুরাগের ডিয়াবাড়ি (তারারটেক) এলাকার আব্দুল জব্বারের পুত্র রুবেলের নেতৃত্বে মাদককারবারি চাঁদাবাজ ও সন্রাসী রতন, সুমন, পাপ্পু, মামুন, আবুল, আব্দুল্লাহ গংরা এ হামলা ও ভাংচুর করেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। তুরাগ থানা পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।
এদিকে, উত্তরা বিআরটিএ অফিস সহকারী আহত দারোয়ান আলমগীর হোসেন ও ঝাড়ুদার শাহনাজ বেগম জানান, গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টার দিকে তুরাগের ডিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো -৩ সার্কেল ডিয়াবাড়ি, উত্তরা ঢাকা কার্যালয়ে অফিসের দায়িত্ব পালন করছিল। তারা অফিসের সামনের ময়লা ঝাড়ুসহ পরিস্কার করার সময় স্হানীয় বখাটে মাদককারবারি, চাঁদাবাজ ও সন্তাসী রুবেল, সুমন ও আবুল মাঠে বসে আড্ডা সহ হৈ চৈ ও চেঁচামেচি করছিল। এক পর্যায়ে তারা জোর করে দারোয়ান আলমগীরকে ডেকে নিয়ে তার কাছে মদ খাওয়ার জন্য দুই হাজার টাকা দাবি করে। তখন সে উক্ত পরিমান টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে মাদককারবারিরা তাকে ধরে চড় থাপ্পড়, কিলঘুষি, নাথি, ঝাড়ু এবং লাঠিসোটা দিয়ে শরীরে আঘাত করে।
এক পর্যায়ে সন্তাসীরা মুখে, পিঠে আঘাত করে এবং মুখের দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। ঘটনার সময় বিআরটিএ অফিসের ঝাড়ুদার শাহনাজ বেগম এগিয়ে গেলে তার হাত ধরে টানা হেঁচড়াসহ তাকে শ্লীলতাহানি করে হামলাকারীরা। এসময় বখাটেরা তাকে টেনে বিআরটিএ একটি পরিত্যক্ত রুমে জোর করে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালায়। যাবার বেলায় হামলাকারীরা আলমগীরের একটি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী ও স্হানীয় লোকজন জানান, এঘটনার পর উক্ত হামলাকারীরা ও মাদককারবারিরা বিআরটিএ অফিসের পাশে শাহাবুদ্দীনের বাড়ির সামনে গিয়ে হৈ চৈ শুরু করে। এসময় তারা উচ্চবাচ্য সহ বিভিন্ন ধরনের গালমন্দ করতে থাকলে শাহাবুদ্দীনের ছোট ভাই আসাদ এগিয়ে আসে এবং কেন গালিগালাজ করা হচেছ বিষয়টি জানতে চাইলে সন্তাসী ও মাদককারবারিরা তার ওপর চড়াও হয় এবং তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে।
এসময় খবর পেয়ে তার বড় ভাই শাহাবুদ্দীন, নাসির, জালাল, অপু ঘটনাস্থলে আসলে তাদের ওপর ও রুবেল গ্রুপের সন্তাসীরা দেশীয় অন্ত্র নিয়ে হামলা করে। এসময় শাহাবুদ্দীন, নাসির, জালাল, অপু ও আসাদ সহ কয়েক জন আহত হয়। এদের মধ্যে শাহাবুদ্দীন ও নাসিরকে টঙ্গীস্হ শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার জোনারেল হাসপাতাল এবং আলমগীরকে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়েছে।
সন্রাসী ও মাদককারবারিদের হামলায় আহত শাহাবুদ্দীন ও আসাদ অভিযোগ করে জানান, আমরা ডিয়াবাড়ি (তারারটেক) স্হানীয় লোকজন রুবেল বাহিনীর নিকট জিম্বি। তারা গতরাত রোববার দলবল নিয়ে এসে আমার বাড়ির সামনে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমরা ৫/৬ জন আহত হয়েছি। যাবার বেলায় সন্তাসীরা আমার মানিব্যাগে ভর্তি নগদ ২০ হাজার টাকা ও আমার বড় ভাইয়ের পকেট থেকে ৪ হাজার টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এঘটনার পর আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা হুমকীর মুখে আছি এবং ভয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছি। আমাদেরকে নানা ভাবে প্রাণনাশের হুমকী দেয়া হচেছ বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান, এঘটনার সূত্র ধরে আজ সোমবার দুপুরের দিকে মাদককারবারি ও হামলাকারীরা তুরাগের ডিয়াবাড়ি এলাকা মেট্রোরেল স্টেশনের সামনের গোলচক্করে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে এসে রুবেলের নেতৃত্বে ৩/৪ জন লোক কলেজ ছাত্র মৃদুল হাসান (২০) ও পায়েল (২২)কে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।
এসময় ভাগ্যক্রমে তারা অল্পের জন্য প্রানে বেঁচে যান। স্হানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীরা জানান, হামলাকারী ও সন্রাসী রুবেলসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারামারি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, সন্তাসী কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছেন। এদের নামে তুরাগ থানায় ৬/৭ টি মামলা, জিডিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এদের ভয়ে স্হানীয় লোকজন প্রায় জিম্বি।
এবিষয়ে জানতে আজ সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো -৩ সার্কেল ডিয়াবাড়ি, উত্তরার সহকারী পরিচালক ইঞ্জিন (এডি) প্রাইভেট শাখা প্রকৌশলী উথোয়াইনু চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিআরটিএ দুই স্টাফ কে মারধর, ক্যামেরা ভাংচুর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাটি আমি একটু আগে শুনেছি। আমি আলমগির ও শাহনাজ বেগমের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি।
এছাড়া আমি কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলেছি। আমার ডিডি স্যার আজ অফিসে আনেন নি। তিনি কাল মঙ্গলবার অফিসে আসলে আমি তার সাথে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।
এঘটনায় আহত শাহাবুদ্দীন বাদি হয়ে রুবেল, রতন, পাপ্পু সহ তিনজনের নাম উল্লেখ এবং অঙাত আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে রোববার মধ্যরাতে তুরাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এব্যাপারে হামলাকারী ও অভিযুক্ত রুবেলসহ তার সহযোগীদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যায়নি। সে কারনে বক্তব্য নেয়া সম্ভব্য হয়নি।