আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে নতুন প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আগের (চলমান) ইভিএম প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদনসহ আরো কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। আগামীকাল রবিবার সার্বিক প্রতিবেদন পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
পরিকল্পনা কমিশন ও ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইসি গত অক্টোবরে নতুন করে ইভিএম কিনতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয় পরিকল্পনা কমিশনে। এতে দুই লাখ ইভিএম কিনতে ছয় হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা চায় ইসি। এ জন্য চলতি অর্থবছরেই চাওয়া হয়েছে তিন হাজার ৬৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৫০ আসনে ব্যবহারের জন্য ইভিএম কিনতে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ জন্য ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প প্রস্তাব পেয়ে আগের প্রকল্পের মূল্যায়নসহ নানা পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা ইসিতে ফেরত পাঠায় পরিকল্পনা কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল বলেন, ‘আমাদের কাছে আগের প্রকল্পের মূল্যায়ন চাওয়া হয়েছিল। আমরা এ বিষয়ে আইএমইডিকে মূল্যায়ন জানাতে বলেছি। আশা করছি, পরিকল্পনা কমিশনের সব চাহিদা পূরণ করে আগামী রবিবার এসংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। এর আগে ইসি থেকে বলা হয়েছিল, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ইভিএম প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।
ইসি সূত্র বলছে, এর আগে নেওয়া ইভিএম কেনার প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল অধিকতর সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। প্রকল্পটির আওতায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী নির্ধারিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সংসদীয় ও স্থানীয় সরকারের মিলে এক হাজার ৬০টি নির্বাচন করা হয়েছে ইভিএমের মাধ্যমে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইভিএম ও আনুষঙ্গিক কেনাকাটার জন্য একটি নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে।
ইভিএম প্রকল্প নিয়ে কাজ করা পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের কাছে ইভিএম প্রকল্পের প্রস্তাব এসেছিল, সেটি আমরা পর্যালোচনা করেছি এবং আমরা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে প্রকল্প ফেরত পাঠিয়েছি। সেগুলো সংশোধন হয়ে এখনো (বৃহস্পতিবার) আসেনি। এলে আমরা সেটা যাচাই করব। সব কিছু ঠিক থাকলে সেটার ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা করব। এরপর তাদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। তাদের যুক্তি সন্তোষজনক হলে, তবেই আমরা এটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠাব। আপাতত এটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।