ঢাকা ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা ওয়াসাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন সচিব মশিউর রহমান খান

আওয়ামী দোসর ঢাকা ওয়াসার সচিব মশিউর রহমান খান ঢাকা ওয়াসাকে একটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। এই দুর্নীতিবাজ আওয়ামী দোসর এখনো কিভাবে ঢাকা ওয়াসায় বহালতবিয়তে আছে এই নিয়ে জনগণের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র বলছে, এই মশিউর আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আস্থাভাজন হিসেবে তার নিজ উপজেলা ইটনাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে মানিকগঞ্জের এডিসি হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে গিয়ে তিনি এক নারী এসিল্যান্ড এর সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। যার ফলে তাকে শাস্তি হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলা হতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এই ঘটনার তদন্ত শেষে তাকে দীর্ঘদিন বরখাস্ত করে রাখা হয়। ঐ সময়ে সে নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত বঙ্গভবনে যাতায়াত করতেন। পরবর্তীতে সে রাষ্ট্রপতির ছেলের ক্ষমতা দেখিয়ে আবার চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু আজ সে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে তৎকালীন ফ্যাসিবাদের সময়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করছেন।

অথচ এটা সর্বজনবিধিত যে, রাজনৈতিক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী-এমপিদের নিজ জেলায় ইউএনও পদে তাদের আস্থাভাজন লোকজনকেই নেওয়া হয়। বর্তমানে ভোল পালটে ঢাকা ওয়াসায় ক্ষমতা দেখানোর জন্য নিজেকে ছাত্রদলের সাবেক নেতা দাবি করেন ফ্যাসিস্টের এই দোসর। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ির সচিবের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলেও দম্ভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কোন পদে ছিলেন তা তিনি উল্লেখ করেননি।

ওয়াসার সচিব মশিউর রহমান খান ২ কোটি টাকার বিনিময়ে আব্দুস সালাম বেপারীকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে নিযুক্ত করেন। আব্দুস সালাম বেপারীও তার রাজনৈতিক খোলস পরিবর্তন করে বিএনপির সমর্থক পরিচয়ে নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে প্রধান প্রকৌশলীর পদটি হাতিয়ে নেন।

গত ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর হতে এখন পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসায় ৩০০ এর অধিক আউটসোর্সিং নিয়োগ হয়েছে। প্রতিটি নিয়োগে ৫ লক্ষ হতে ৭ লক্ষ টাকা করে মশিউর রহমান হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে ঢাকা ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কর্মীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াসার সচিব বলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের সুপারিশে প্রতিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একাধিক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান যে ঢাকা ওয়াসার সচিব প্রতিটি নিয়োগে কেবল অবৈধ অর্থের লেনদেনকে গোপন করার জন্যই উপদেষ্টা ও সমন্বকদের নাম ভাঙ্গাচ্ছেন।

ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সচিব মশিউরের স্বাক্ষরে জারিকৃত বেশকিছু বদলী আদেশ জারির অব্যবহিত পরেই বাতিল করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মশিউর ও তার সিন্ডিকেট অর্থের বিনিময়ে এসব আদেশ জারির পর প্রকৃত ঘটনা সামনে আসায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের নির্দেশে তা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু সুষ্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও সচিবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে চলছে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির মহোৎসব। বিগত সময়ে চাকুরিবিধি লংঘন ও দুর্নীতির দায়ে হওয়া বিভাগীয় মামলা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিষ্পত্তি করছেন সচিব মশিউর। টাকা না দিলে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হতে বদলি করছেন। যার ফলে ঢাকা ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এত সল্পসময়ে এই ধরনের বদলি বাণিজ্য ঢাকা ওয়াসাতে বিরল। একজন কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকায় বদলি করেছিলেন। যিনি তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করার আগেই আবার অন্যত্র বদলি করেছেন। কেবল টাকার বিনিময়ে অনেকেই চাকুরিতে পদোন্নতিও পেয়েছেন। অভিযোগের মাত্রা এতই বেশি হয়েছে যে কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এর নির্দেশে ঢাকা ওয়াসার সকল নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কমিটিতে একই ব্যক্তিকে বার বার রেখে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করা হচ্ছে। তদুপরি বিভিন্ন আইন কানুনের দোহাই দিয়ে কার্মকর্তা কর্মচারীদের ফাইল নিস্পত্তি করেন না, এবং তিনি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে দালাল নিয়োগ দিয়ে তাদের সাথে অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করতে বাধ্য করেন । এছাড়াও ওয়াসার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসার খরচের অজুহাতে অর্থ গ্রহণের ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। সূত্র জানায়, ভারতে চিকিৎসার খরচের কথা বলে তিনি ওয়াসার বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এক কর্মকর্তার অভিযোগ, মোশিউর রহমান তার কাছ থেকে ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা নিয়েছিলেন এক মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার শর্তে। কিন্তু পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও তিনি সেই টাকা ফেরত দেননি। বরং টাকা ফেরতের দাবি করলে সচিবালয়ের প্রভাব ও তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের শক্তি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।

সচিব তার চরিত্রহীনতাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। গোপন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার একজন সুন্দরী সহকারী প্রকৌশলীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একটি প্রকল্পের প্রকিউরিং এনটিটি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। কেবল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আশায় সকল অনিয়মই যেন সচিবের কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে। সাধারণত প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনের কারিগরি দিক যাচাইয়ের জন্য কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোকদের বিদেশে পাঠানো হয়ে থাকে। কিন্তু এখানেও কারিগরি জ্ঞানহীন লোকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মেডিকেল অফিসার সুলতানা ববির সাথে গোপন সম্পর্কের কারণে সচিব তার ক্ষমতা দেখিয়ে ববিকে বিদেশ সফর সঙ্গী হিসেবে নেওয়ার প্রস্তাব বাগিয়ে নিয়েছেন।

ঢাকা ওয়াসায় মাস্টার রুলসে কর্মরত কর্মচারীদের পক্ষে কোর্টের আদেশের পরেও স্থায়ী চাকরি হিসেবে যোগদান করতে পারছেনা। খবর নিয়ে জানা যায় যে সচিব এই কর্মচারীদের থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাদের স্থায়ী চাকরি হিসেবে যোগদানে সহযোগিতা করবেন। আজ তাদের মধ্যে কেবল শুধু হতাশাই বিরাজ করছে।

মাস্টার রুলসে কর্মরত একাধিক কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, অনিয়মের দিক দিয়ে এই মশিউর পূর্বের তাকসিমকেও ছাড়িয়ে গেছেন। অন্য একজন কর্মচারী জানিয়েছেন যে, তাদের বেতন খুবই সীমিত এবং এ বেতন দিয়ে তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু সচিবের চাহিদাকৃত অর্থ তাদের কাছে পাহাড়সম। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাদের স্থায়ী পদে যোগদান করা আজ শুধু দুঃস্বপ্ন। সে আরও জানিয়েছেন যে আইনি লড়াই করে আজ তাদের পক্ষে রায় এসেছে। কিন্তু সচিবকে তার চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিয়ে চাকরিতে যোগদান করতে হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। উপ উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি জনপ্রতি ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসার খরচের অজুহাতে টাকা ধার নেন; আর টাকা না দিলে তাদেরকে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করা সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। তদুপরি বিভিন্ন ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার কথা বলে অবৈধ অর্থের লেনদেন করেন।

মশিউর রহমান খান, প্রশাসন ক্যাডারের এই উপ-সচিব বর্তমানে ঢাকা ওয়াসায় সচিব হিসেবে কর্মরত। আওয়ামী ফ্যাসিস্টের আমলে নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবী করলেও তিনি নিজেই ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর৷ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে সাবেক আওয়ামী সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মাদ তৌফিকের আশির্বাদপুষ্ট এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন ইটনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। ব্যক্তিজীবনে মাদকাসক্তি, নারী কেলেংকারী এবং সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি সবকিছুতেই পটু এই মশিউর। একজন সহকর্মীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোয় নৈতিক স্থলনের দায়ে পদোন্নতি আটকে গেলে এমপি তৌফিক ৩ বার সশরীরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তার পদোন্নতি নিশ্চিত করেন। ২০২৩ সালে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির পর চাকরি করেছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ে। ঢাকা ওয়াসার সচিব হিসেবে বদলী হয়ে আসার পর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সমন্বয়কের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলীর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেও বহাল তবিয়তে আছেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

ঢাকা ওয়াসাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন সচিব মশিউর রহমান খান

আপডেট সময় ০৭:২৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

আওয়ামী দোসর ঢাকা ওয়াসার সচিব মশিউর রহমান খান ঢাকা ওয়াসাকে একটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। এই দুর্নীতিবাজ আওয়ামী দোসর এখনো কিভাবে ঢাকা ওয়াসায় বহালতবিয়তে আছে এই নিয়ে জনগণের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র বলছে, এই মশিউর আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আস্থাভাজন হিসেবে তার নিজ উপজেলা ইটনাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে মানিকগঞ্জের এডিসি হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে গিয়ে তিনি এক নারী এসিল্যান্ড এর সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। যার ফলে তাকে শাস্তি হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলা হতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এই ঘটনার তদন্ত শেষে তাকে দীর্ঘদিন বরখাস্ত করে রাখা হয়। ঐ সময়ে সে নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত বঙ্গভবনে যাতায়াত করতেন। পরবর্তীতে সে রাষ্ট্রপতির ছেলের ক্ষমতা দেখিয়ে আবার চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু আজ সে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে তৎকালীন ফ্যাসিবাদের সময়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করছেন।

অথচ এটা সর্বজনবিধিত যে, রাজনৈতিক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী-এমপিদের নিজ জেলায় ইউএনও পদে তাদের আস্থাভাজন লোকজনকেই নেওয়া হয়। বর্তমানে ভোল পালটে ঢাকা ওয়াসায় ক্ষমতা দেখানোর জন্য নিজেকে ছাত্রদলের সাবেক নেতা দাবি করেন ফ্যাসিস্টের এই দোসর। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ির সচিবের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলেও দম্ভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কোন পদে ছিলেন তা তিনি উল্লেখ করেননি।

ওয়াসার সচিব মশিউর রহমান খান ২ কোটি টাকার বিনিময়ে আব্দুস সালাম বেপারীকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে নিযুক্ত করেন। আব্দুস সালাম বেপারীও তার রাজনৈতিক খোলস পরিবর্তন করে বিএনপির সমর্থক পরিচয়ে নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে প্রধান প্রকৌশলীর পদটি হাতিয়ে নেন।

গত ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর হতে এখন পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসায় ৩০০ এর অধিক আউটসোর্সিং নিয়োগ হয়েছে। প্রতিটি নিয়োগে ৫ লক্ষ হতে ৭ লক্ষ টাকা করে মশিউর রহমান হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে ঢাকা ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কর্মীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াসার সচিব বলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের সুপারিশে প্রতিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একাধিক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান যে ঢাকা ওয়াসার সচিব প্রতিটি নিয়োগে কেবল অবৈধ অর্থের লেনদেনকে গোপন করার জন্যই উপদেষ্টা ও সমন্বকদের নাম ভাঙ্গাচ্ছেন।

ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সচিব মশিউরের স্বাক্ষরে জারিকৃত বেশকিছু বদলী আদেশ জারির অব্যবহিত পরেই বাতিল করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মশিউর ও তার সিন্ডিকেট অর্থের বিনিময়ে এসব আদেশ জারির পর প্রকৃত ঘটনা সামনে আসায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের নির্দেশে তা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু সুষ্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও সচিবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে চলছে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির মহোৎসব। বিগত সময়ে চাকুরিবিধি লংঘন ও দুর্নীতির দায়ে হওয়া বিভাগীয় মামলা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিষ্পত্তি করছেন সচিব মশিউর। টাকা না দিলে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হতে বদলি করছেন। যার ফলে ঢাকা ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এত সল্পসময়ে এই ধরনের বদলি বাণিজ্য ঢাকা ওয়াসাতে বিরল। একজন কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকায় বদলি করেছিলেন। যিনি তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করার আগেই আবার অন্যত্র বদলি করেছেন। কেবল টাকার বিনিময়ে অনেকেই চাকুরিতে পদোন্নতিও পেয়েছেন। অভিযোগের মাত্রা এতই বেশি হয়েছে যে কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এর নির্দেশে ঢাকা ওয়াসার সকল নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কমিটিতে একই ব্যক্তিকে বার বার রেখে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করা হচ্ছে। তদুপরি বিভিন্ন আইন কানুনের দোহাই দিয়ে কার্মকর্তা কর্মচারীদের ফাইল নিস্পত্তি করেন না, এবং তিনি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে দালাল নিয়োগ দিয়ে তাদের সাথে অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করতে বাধ্য করেন । এছাড়াও ওয়াসার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসার খরচের অজুহাতে অর্থ গ্রহণের ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। সূত্র জানায়, ভারতে চিকিৎসার খরচের কথা বলে তিনি ওয়াসার বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এক কর্মকর্তার অভিযোগ, মোশিউর রহমান তার কাছ থেকে ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা নিয়েছিলেন এক মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার শর্তে। কিন্তু পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও তিনি সেই টাকা ফেরত দেননি। বরং টাকা ফেরতের দাবি করলে সচিবালয়ের প্রভাব ও তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের শক্তি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।

সচিব তার চরিত্রহীনতাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। গোপন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার একজন সুন্দরী সহকারী প্রকৌশলীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একটি প্রকল্পের প্রকিউরিং এনটিটি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। কেবল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আশায় সকল অনিয়মই যেন সচিবের কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে। সাধারণত প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনের কারিগরি দিক যাচাইয়ের জন্য কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোকদের বিদেশে পাঠানো হয়ে থাকে। কিন্তু এখানেও কারিগরি জ্ঞানহীন লোকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মেডিকেল অফিসার সুলতানা ববির সাথে গোপন সম্পর্কের কারণে সচিব তার ক্ষমতা দেখিয়ে ববিকে বিদেশ সফর সঙ্গী হিসেবে নেওয়ার প্রস্তাব বাগিয়ে নিয়েছেন।

ঢাকা ওয়াসায় মাস্টার রুলসে কর্মরত কর্মচারীদের পক্ষে কোর্টের আদেশের পরেও স্থায়ী চাকরি হিসেবে যোগদান করতে পারছেনা। খবর নিয়ে জানা যায় যে সচিব এই কর্মচারীদের থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাদের স্থায়ী চাকরি হিসেবে যোগদানে সহযোগিতা করবেন। আজ তাদের মধ্যে কেবল শুধু হতাশাই বিরাজ করছে।

মাস্টার রুলসে কর্মরত একাধিক কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, অনিয়মের দিক দিয়ে এই মশিউর পূর্বের তাকসিমকেও ছাড়িয়ে গেছেন। অন্য একজন কর্মচারী জানিয়েছেন যে, তাদের বেতন খুবই সীমিত এবং এ বেতন দিয়ে তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু সচিবের চাহিদাকৃত অর্থ তাদের কাছে পাহাড়সম। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাদের স্থায়ী পদে যোগদান করা আজ শুধু দুঃস্বপ্ন। সে আরও জানিয়েছেন যে আইনি লড়াই করে আজ তাদের পক্ষে রায় এসেছে। কিন্তু সচিবকে তার চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিয়ে চাকরিতে যোগদান করতে হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। উপ উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি জনপ্রতি ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসার খরচের অজুহাতে টাকা ধার নেন; আর টাকা না দিলে তাদেরকে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করা সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। তদুপরি বিভিন্ন ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার কথা বলে অবৈধ অর্থের লেনদেন করেন।

মশিউর রহমান খান, প্রশাসন ক্যাডারের এই উপ-সচিব বর্তমানে ঢাকা ওয়াসায় সচিব হিসেবে কর্মরত। আওয়ামী ফ্যাসিস্টের আমলে নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবী করলেও তিনি নিজেই ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর৷ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে সাবেক আওয়ামী সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মাদ তৌফিকের আশির্বাদপুষ্ট এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন ইটনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। ব্যক্তিজীবনে মাদকাসক্তি, নারী কেলেংকারী এবং সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি সবকিছুতেই পটু এই মশিউর। একজন সহকর্মীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোয় নৈতিক স্থলনের দায়ে পদোন্নতি আটকে গেলে এমপি তৌফিক ৩ বার সশরীরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তার পদোন্নতি নিশ্চিত করেন। ২০২৩ সালে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির পর চাকরি করেছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ে। ঢাকা ওয়াসার সচিব হিসেবে বদলী হয়ে আসার পর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সমন্বয়কের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলীর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেও বহাল তবিয়তে আছেন।