ছাত্রদল নেতার কাছ থেকে বাড়ির নির্মাণসামগ্রী ক্রয় না করায় নরসিংদীর ভাটপাড়ায় এক স্কুলশিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হলে দুভোর্গে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
রোববার দুপুরে সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নের ভাটপাড়া বাজারে পাঁচদোনা-টঙ্গী আঞ্চলিক সড়ক এ অবরোধের ঘটনা ঘটে। এ সময় বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাবেক শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শিক্ষক ময়নাল হোসেন নরসিংদীর ভাটপাড়ায় এনসি গুপ্ত হাইস্কুলের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক।
অভিযুক্ত জুয়েল ঘোষ পাঁচদোনা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সভাপতি প্রার্থী।
শিক্ষার্থীরা জানান, ভাটপাড়া এনসি গুপ্ত হাইস্কুলের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ময়নাল হোসেন বাড়ি নির্মাণ করছেন। এই বাড়ি নির্মাণ কাজে পাঁচদোনা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি প্রার্থী জুয়েল ঘোষ বাড়ি নির্মাণের কাজের সামগ্রী সরবরাহ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ময়নাল হোসেন তাতে রাজি হননি। এতে জুয়েল ক্ষিপ্ত হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষক ময়নাল তার ছেলেকে নিয়ে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে জুয়েলের নেতৃত্বে সোহাগ, ফরিদ মিয়া, রিপনসহ অজ্ঞাতরা ময়নাল হোসেনের ওপর হামলা করে। এ সময় তাকে ও ছেলেকে মারধর করে।
পরে বিষয়টি বিদ্যালয়ে জানালে শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ময়নাল হোসেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত জুয়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এরই প্রতিবাদে রোববার সকালে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে সড়কে নেমে আসেন। তারা অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান। বেলা ১১টার দিবে শিক্ষার্থীরা গাছের গুঁড়ি, টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে সড়কের উভয় পাশে প্রায় দশ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরে দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে সেনাবাহিনী অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ভুক্তভোগী সিনিয়র শিক্ষক ময়নাল হোসেন জানান, আমি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আবার কখন আমার ওপর হামলা হয়। আমি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছি। জুয়েল এসে আমাকে বলে তার কাছ থেকে ইট-বালু-সিমেন্ট-রড নিতে হবে। আমি তাকে বলি- যেসব মালামাল লাগবে আমি মোটামুটি সবই এনেছি। পরবর্তীতে যা লাগবে তোমার থেকে নেব। তারপরও আমার ৯ বছরের ছেলেসহ আমার ওপর হামলা ও মারধর করে। আমি এর বিচার চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু স্থানীয়ভাবে কোনো সুরাহা না পাওয়ায় বিচারের দাবিতে আজকে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। আর কোনো শিক্ষক যেন অন্যায়ভাবে নির্যাতনের শিকার না হন- সেই দাবিও জানান তিনি।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অভিযোগের পর আমরা রাতভর আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।