ঢাকা ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পালানোর আগে হাসিনা যে কথা বলতে পারেনি সাভারে পরিবেশ দূষণের দায়ে ফার্নেস অয়েল কারখানাকে জরিমানা রাজধানীর ৩ স্বনামধন্য স্কুল ঘিরে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়েন মেনন বোরহানউদ্দিনে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত থানার ওসি’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পদ্মাসেতু টু শরীয়তপুরের সড়কের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ধামরাইয়ে খালেদা-তারেকের নামে মামলা ও সাজা বাতিলের দাবিতে জনসভা চাঁদপুরে জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা। ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে গোপন মার্কিন নথি ফাঁস উসওয়াতুন হাসানাহ রাসূল (সা.)-এর জীবনের সার্থক উদাহরণ শাহজাহান চৌধুরী ছিনতাইয়ের কবলে নিরীহ ভ্যান চালক

ভিন্ন গ্রুপের রক্ত প্রদান করলো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৮ দিন লড়াই করে মৃত্যু

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসকে ভুলে অস্ত্রোপচারের সময় এক রোগীকে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়। ঘটনার ১৮ দিন পর বুধবার (১০ জুলাই) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৃতু ফাতেমা বেগমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম।
ফাতেমা বেগম স্বামী-সন্তান নিয়ে রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া চৌরাস্তা থাকতেন। তার গ্রামে বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ভাতগ্রাম ইউনিয়নের খোদাবকস এলাকায়। বুধবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এদিকে রমেক ও ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২১ জুন অস্ত্রোপচারের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ফাতেমা বেগম। রোগীকে ট্রান্সমিশন বিভাগে নিয়ে পরীক্ষার পর জানানো হয়, তার রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ। এরপর স্বজনেরা ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা ক্রস ম্যাচ করে নিশ্চিত করে, রক্তের গ্রুপ ঠিক আছে।
এরপর ২২ জুন ফাতেমার জরায়ুর অস্ত্রোপচার করা হয়। এক ব্যাগ রক্ত শরীরে যাওয়ার পরপরই রক্তক্ষরণ, শরীর ফুলে যাওয়া, খিঁচুনিসহ নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়। কারণ জানতে না পেরে পরদিন চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন, আবার অস্ত্রোপচার করবেন। তখন আবার স্বজনদের রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়। স্বজনেরা এবারও তিন ব্যাগ ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করেন। কিন্তু এবার আর ক্রস ম্যাচিং করা হয়নি। এতে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। এরপর হাসপাতাল ও বাইরে থেকে ফাতেমার রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, তার রক্তের গ্রুপ আসলে ‘ও’ পজিটিভ।

চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে ভুল হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরপর ফাতেমাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২৯ জুন পর্যন্ত আইসিইউতে রাখার পরও অবস্থার অবনতি হলে পরদিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
মৃতের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম বলেন, এর আগে মায়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পেরে ৭ জুলাই আমি সহপাঠী, বন্ধু ও জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করে চার ঘণ্টা অবস্থান করি। ভুল চিকিৎসায় আমার মায়ের জীবন সংকটাপন্ন। তার জন্য মেডিসিন, গাইনি, নেফ্রো, গ্যাস্ট্রোর ডাক্তার একসঙ্গে বসে বোর্ড করে চিকিৎসা করাতে হবে। একটি আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করতে হবে। শুরু থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত যত টাকা খরচ হবে, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বলে দাবি জানাই।এ সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মাদ ইউনুস আলী দাবিগুলো লিখিতভাবে নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে তারা অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।
আব্দুল্লাহ আল মারুফ আরও বলেন, ভুল গ্রুপের রক্ত আমার মায়ের শরীরে দিয়ে চিকিৎসকেরা আমার মাকে মেরে ফেলেছে। আমার মাকে হত্যা করেছে রংপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। আমাকে এতিম করেছে। সহায়-সম্বল যা ছিল সব শেষ করেও মাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এ ঘটনায় ৩ জুলাই হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে এম কামরুজ্জামানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা বুধবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মাদ ইউনুস আলী বলেন, তদন্ত কমিটি করেছি উনারা ব্যস্ত ছিল। তাই প্রতিবেদন দিতে পারেনি। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি বসব। এতে দায় কার সেটি হয়তো পাওয়া যাবে।নিহত ফাতেমা বেগমের ছেলের ক্ষতিপূরণের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পালানোর আগে হাসিনা যে কথা বলতে পারেনি

ভিন্ন গ্রুপের রক্ত প্রদান করলো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৮ দিন লড়াই করে মৃত্যু

আপডেট সময় ১০:০৮:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসকে ভুলে অস্ত্রোপচারের সময় এক রোগীকে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়। ঘটনার ১৮ দিন পর বুধবার (১০ জুলাই) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৃতু ফাতেমা বেগমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম।
ফাতেমা বেগম স্বামী-সন্তান নিয়ে রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া চৌরাস্তা থাকতেন। তার গ্রামে বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ভাতগ্রাম ইউনিয়নের খোদাবকস এলাকায়। বুধবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এদিকে রমেক ও ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২১ জুন অস্ত্রোপচারের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ফাতেমা বেগম। রোগীকে ট্রান্সমিশন বিভাগে নিয়ে পরীক্ষার পর জানানো হয়, তার রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ। এরপর স্বজনেরা ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা ক্রস ম্যাচ করে নিশ্চিত করে, রক্তের গ্রুপ ঠিক আছে।
এরপর ২২ জুন ফাতেমার জরায়ুর অস্ত্রোপচার করা হয়। এক ব্যাগ রক্ত শরীরে যাওয়ার পরপরই রক্তক্ষরণ, শরীর ফুলে যাওয়া, খিঁচুনিসহ নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়। কারণ জানতে না পেরে পরদিন চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন, আবার অস্ত্রোপচার করবেন। তখন আবার স্বজনদের রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়। স্বজনেরা এবারও তিন ব্যাগ ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করেন। কিন্তু এবার আর ক্রস ম্যাচিং করা হয়নি। এতে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। এরপর হাসপাতাল ও বাইরে থেকে ফাতেমার রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, তার রক্তের গ্রুপ আসলে ‘ও’ পজিটিভ।

চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে ভুল হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরপর ফাতেমাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২৯ জুন পর্যন্ত আইসিইউতে রাখার পরও অবস্থার অবনতি হলে পরদিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
মৃতের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম বলেন, এর আগে মায়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পেরে ৭ জুলাই আমি সহপাঠী, বন্ধু ও জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করে চার ঘণ্টা অবস্থান করি। ভুল চিকিৎসায় আমার মায়ের জীবন সংকটাপন্ন। তার জন্য মেডিসিন, গাইনি, নেফ্রো, গ্যাস্ট্রোর ডাক্তার একসঙ্গে বসে বোর্ড করে চিকিৎসা করাতে হবে। একটি আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করতে হবে। শুরু থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত যত টাকা খরচ হবে, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বলে দাবি জানাই।এ সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মাদ ইউনুস আলী দাবিগুলো লিখিতভাবে নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে তারা অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।
আব্দুল্লাহ আল মারুফ আরও বলেন, ভুল গ্রুপের রক্ত আমার মায়ের শরীরে দিয়ে চিকিৎসকেরা আমার মাকে মেরে ফেলেছে। আমার মাকে হত্যা করেছে রংপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। আমাকে এতিম করেছে। সহায়-সম্বল যা ছিল সব শেষ করেও মাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এ ঘটনায় ৩ জুলাই হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে এম কামরুজ্জামানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা বুধবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মাদ ইউনুস আলী বলেন, তদন্ত কমিটি করেছি উনারা ব্যস্ত ছিল। তাই প্রতিবেদন দিতে পারেনি। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি বসব। এতে দায় কার সেটি হয়তো পাওয়া যাবে।নিহত ফাতেমা বেগমের ছেলের ক্ষতিপূরণের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।