ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ যতটা শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে পালানোর আগে হাসিনা যে কথা বলতে পারেনি সাভারে পরিবেশ দূষণের দায়ে ফার্নেস অয়েল কারখানাকে জরিমানা রাজধানীর ৩ স্বনামধন্য স্কুল ঘিরে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়েন মেনন বোরহানউদ্দিনে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত থানার ওসি’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পদ্মাসেতু টু শরীয়তপুরের সড়কের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ধামরাইয়ে খালেদা-তারেকের নামে মামলা ও সাজা বাতিলের দাবিতে জনসভা চাঁদপুরে জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা। ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে গোপন মার্কিন নথি ফাঁস উসওয়াতুন হাসানাহ রাসূল (সা.)-এর জীবনের সার্থক উদাহরণ শাহজাহান চৌধুরী

সপ্তাহে খানেক না পেরোতেই উঠে যাচ্ছে কোটি টাকা বাজেটের রাস্তার কার্পেটিং

শরীয়তপুরের জাজিরার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের সিকদার মার্কেট থেকে আবেদ আলী মুন্সি কান্দির আড়াই কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ গত ২৮ জুন শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে কার্পেটিংয়ের পাথর ঝরঝরা হয়ে উঠে যাচ্ছে এছাড়াও হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিংয়ের পুরো অংশ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরু থেকে সড়কটিতে নিম্নমানের ও প্রয়োজনের চেয়ে কম নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছিল। এলাকাবাসী বাধা দিলে তা উপেক্ষা করে ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রাখেন।

শরীয়তপুর জেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা হাট থেকে পশ্চিম নাওডোবা সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২ হাজার ৫২৫ মিটার দীর্ঘ এ সড়ক উন্নয়নকাজে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ১০ লাখ ১৫ হাজার ৩৬১ টাকা। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা এন্ড সন্স। ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কাজটি শুরু হয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি । তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও যথাসময়ে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে এ প্রকল্পের বিল বাবদ ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ২৮ টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিনে ঐ সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির পশ্চিম নাওডোবার সিকদার মার্কেট থেকে আবেদ আলী মুন্সী কান্দি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। এছাড়াও বিটুমিনের পরিমাণ কম হওয়ায় সড়কের মাঝে মাঝে কার্পেটিংয়ের পাথর ঝরঝরা হয়ে উঠে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খালেক ফরাজি অভিযোগ করে আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “ঠিকাদার সড়কটির কার্পেটিং করার সময় পুরনো ইটের খোয়া ও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়াও সড়কটি সংস্কারের সময় সঠিকভাবে রোলিং ও মজবুতিকরণ না করে তড়িঘরি করে কাজ শেষ করেছে। ফলে কয়েকদিন না যেতেই কার্পেটিং উঠে গিয়ে আগের মতো খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে।”

ভ্যান চালক আয়নাল শেক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “ঠিকাদার এখানে চরম দুর্নীতি ও কাজে অবহেলা করেছে। তাই এই রাস্তার কাজ শেষ না হতেই এমন বেহাল অবস্থা হচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন আমাদের এই রাস্তাটি সঠিকভাবে কাজ করে দেওয়া হোক।”

ইউপি সদস্য জুলফিকার আলী আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পদ্মাসেতুর উছিলায় আমরা এ অঞ্চলের মানুষ নতুন সংযোগ সড়ক পেয়েছি। কয়েকদিন আগে এ রাস্তার কার্পেটিং শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পরে কিছুদিন না যেতেই বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের যে ধারা সেটি ঠিকাদারের গাফলতিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। আমাদের দাবী সড়কটি পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হোক।

এ সড়কের সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবু বেপারীর সাথে কথা বললে তিনি আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “১০ দিন হয়েছে ঐ সড়কের কার্পেটিং সহ সব কাজ শেষ হয়েছে। এখন কোন সমস্যা হয়ে থাকলে তা ঠিক করে দেয়া হবে। ১০ দিনের মাথায় কার্পেটিং উঠে যাওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ করার সময় বৃষ্টি ছিল তাই ঠিকমত বিটুমিন মিলেনি।”

জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ ইমন মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি কাজে গাফিলতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন , এখনো রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। তাছাড়া যেসব জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে তা ঠিক করে দিবে ঠিকাদার।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “সড়কটি আমি পরিদর্শন করেছি। সড়কের কয়েকটি স্থানে সমস্যা পেয়েছি। ঠিকাদারকে পুনরায় ঐ সড়কের উপরে আরেকটি লেয়ার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঐ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়াদের বাইরে সময় বেশী লাগার বিষয়ে ঠিকাদার যদি যৌক্তিক কারন দেখাতে পারেন তবে তাকে প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করা হবে। নয়তো জরিমানা করা হবে।”

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ যতটা শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে

সপ্তাহে খানেক না পেরোতেই উঠে যাচ্ছে কোটি টাকা বাজেটের রাস্তার কার্পেটিং

আপডেট সময় ১১:৫৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

শরীয়তপুরের জাজিরার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের সিকদার মার্কেট থেকে আবেদ আলী মুন্সি কান্দির আড়াই কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ গত ২৮ জুন শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে কার্পেটিংয়ের পাথর ঝরঝরা হয়ে উঠে যাচ্ছে এছাড়াও হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিংয়ের পুরো অংশ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরু থেকে সড়কটিতে নিম্নমানের ও প্রয়োজনের চেয়ে কম নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছিল। এলাকাবাসী বাধা দিলে তা উপেক্ষা করে ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রাখেন।

শরীয়তপুর জেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা হাট থেকে পশ্চিম নাওডোবা সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২ হাজার ৫২৫ মিটার দীর্ঘ এ সড়ক উন্নয়নকাজে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ১০ লাখ ১৫ হাজার ৩৬১ টাকা। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা এন্ড সন্স। ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কাজটি শুরু হয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি । তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও যথাসময়ে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে এ প্রকল্পের বিল বাবদ ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ২৮ টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিনে ঐ সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির পশ্চিম নাওডোবার সিকদার মার্কেট থেকে আবেদ আলী মুন্সী কান্দি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। এছাড়াও বিটুমিনের পরিমাণ কম হওয়ায় সড়কের মাঝে মাঝে কার্পেটিংয়ের পাথর ঝরঝরা হয়ে উঠে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খালেক ফরাজি অভিযোগ করে আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “ঠিকাদার সড়কটির কার্পেটিং করার সময় পুরনো ইটের খোয়া ও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়াও সড়কটি সংস্কারের সময় সঠিকভাবে রোলিং ও মজবুতিকরণ না করে তড়িঘরি করে কাজ শেষ করেছে। ফলে কয়েকদিন না যেতেই কার্পেটিং উঠে গিয়ে আগের মতো খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে।”

ভ্যান চালক আয়নাল শেক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “ঠিকাদার এখানে চরম দুর্নীতি ও কাজে অবহেলা করেছে। তাই এই রাস্তার কাজ শেষ না হতেই এমন বেহাল অবস্থা হচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন আমাদের এই রাস্তাটি সঠিকভাবে কাজ করে দেওয়া হোক।”

ইউপি সদস্য জুলফিকার আলী আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পদ্মাসেতুর উছিলায় আমরা এ অঞ্চলের মানুষ নতুন সংযোগ সড়ক পেয়েছি। কয়েকদিন আগে এ রাস্তার কার্পেটিং শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পরে কিছুদিন না যেতেই বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের যে ধারা সেটি ঠিকাদারের গাফলতিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। আমাদের দাবী সড়কটি পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হোক।

এ সড়কের সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবু বেপারীর সাথে কথা বললে তিনি আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “১০ দিন হয়েছে ঐ সড়কের কার্পেটিং সহ সব কাজ শেষ হয়েছে। এখন কোন সমস্যা হয়ে থাকলে তা ঠিক করে দেয়া হবে। ১০ দিনের মাথায় কার্পেটিং উঠে যাওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ করার সময় বৃষ্টি ছিল তাই ঠিকমত বিটুমিন মিলেনি।”

জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ ইমন মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি কাজে গাফিলতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন , এখনো রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। তাছাড়া যেসব জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে তা ঠিক করে দিবে ঠিকাদার।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “সড়কটি আমি পরিদর্শন করেছি। সড়কের কয়েকটি স্থানে সমস্যা পেয়েছি। ঠিকাদারকে পুনরায় ঐ সড়কের উপরে আরেকটি লেয়ার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঐ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়াদের বাইরে সময় বেশী লাগার বিষয়ে ঠিকাদার যদি যৌক্তিক কারন দেখাতে পারেন তবে তাকে প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করা হবে। নয়তো জরিমানা করা হবে।”