ঢাকা ১২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঈদের জামাত একই মাঠে দুই পেন্ডেলে প্রতিহিংসার জেরে, ফেসবুকে তুমুল সমালোচনার ঝড় তোলে

বংশগত বিভেদ ও প্রতিহিংসার জেরে একই মাঠে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ঈদুল আযহার নামাজের জামায়াত আদায় করেছেন শরীয়তপুরের এক এলাকার মুসল্লিরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল সোমবার (১৭ জুন) সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি আব্দুল গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আলাদা দুইটি প্যান্ডেল করে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে স্থানীয় মুসল্লিদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পালেরচর ইউনিয়নের হাওলাদার ও দড়ি বংশের লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই দুই সমাজের মানুষের মধ্যে আলাদা মতবাদ থাকায় গত ঈদুল ফিতর থেকে একই মাঠে দুটি প্যান্ডেল করে আলাদা জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। তবে গত বছর পর্যন্ত ঐ দুই বংশের লোকজন একই প্যান্ডেলে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। আর এই বিভক্ত হওয়ার মূল কারন হিসেবে দুই বংশের মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ঈদুল আযহার নামাজ হাওলাদার বংশের লোকজন সকাল সাড়ে ৬ টায় ও দড়ি বংশের লোকজন সকাল ৭ টায় আদায় সম্পন্ন করেছেন। তবে দুই পক্ষ আলাদা ভাবে নামাজ পড়লেও একে অপরের প্রতি কোনো অভিযোগ করছেন না। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা করে মন্তব্য করেন।

মাহমুদুল হাসান শাকুরী নামে একজন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে এবিষয়ে লিখেছেন, এক মাঠে পৃথক দুটি ঈদ জামাত। খোঁজ নিয়ে দেখেন, এই অপকর্মের মূল হোতা বা কুটিলও দুইদিন আগে ফেস্টুন বানিয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক সবার প্রাণ! আমাদের কর্মকাণ্ড দেখে ইবলিশও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।

সিদ্দিক আহমেদ নামে একজন ফেসবুকে পোষ্ট করে বলেন, ইতিহাসে যা ঘটেনি তাই দেখলাম। পালেরচড়ের দড়ি কান্দির মানুষ একের পর এক মনুষত্ব্য ও ভ্রাতৃত্ব্যের চমক দেখাচ্ছেন। একই মাঠে আলাদা ঈদের জামাত। টাকা আর আত্মঅহমিকার নামে এরা আজ যেখানে গিয়েছে শয়তানও এদের নিয়ে চিন্তায় পরেগেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দুই বংশের হাতে গোনা কয়েকজনের মতবিরোধের কারনে ঈদের নামাজের মত সম্প্রীতির অনুষ্ঠানে এমন বিভক্তের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল দড়ি আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “আমরা এই এলাকায় রাজনীতি করি মানুষের মঙ্গলের জন্য। কখনোই বিভক্ত সৃষ্টি হোক এমনটি কামনা করিনা। একই মাঠে দুই প্যান্ডেলে ঈদের নামাজ আদায়ের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই এমন বিভক্তি থেকে সবাই বেড়িয়ে আসুক।”

বিষয়টি নিয়ে হাওলাদার বংশের ও দড়ি বংশের মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু সাইদ ও মাওলানা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘আমরা মুসলমান হিসেবে ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য রক্ষার বিষয়ে সচেতন না থাকলে আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি না হলেও আমাদের ধর্ম সম্পর্কে অন্য ধর্মের মানুষ ভুল বার্তা পাবে। তাই বংশগত বিভেদ থাকলে তা সমাধান করে নামাজের মত বিষয়ে একাত্মতা রাখা জরুরী।’

একই মাঠে আলাদা প্যান্ডেল করে ঈদের নামাজ পড়ার বিষয়ে দড়ি বংশের মতিউর রহমান দড়ি আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “গত রমাজনের ঈদ থেকেই হাওলাদাররা আলাদা ভাবে নামাজ পড়া শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় এবারও তারা আলাদা প্যান্ডেলে নামাজ আদায় করেছেন। যদিও আমাদের মুরুব্বীরা সারাজীবন অন্তত ঈদের নামাজ এক জামায়াতে আদায় করে এসেছেন। তবে তাদের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।”

হাওলাদার বংশের শাহজাহান হাওলাদার আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “গ্রামে দড়ি ও হাওলাদার বংশের লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় গত ঈদুল ফিতর থেকেই আলাদা জামায়াতে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। এর আগে আমরা এক সঙ্গেই ঈদের নামাজ আদায় করতাম। দড়ি বংশের লোকজন আমাদের বলেছিল, তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে। কিন্তু আমাদের লোকজন না মানায় ভিন্ন প্যান্ডেলে নামাজ আদায় করেছি। দড়ি বংশের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।”

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুদখোর চেয়ারম্যান সাইফুলের ঘরে আলাদিনের চেরাগ!

ঈদের জামাত একই মাঠে দুই পেন্ডেলে প্রতিহিংসার জেরে, ফেসবুকে তুমুল সমালোচনার ঝড় তোলে

আপডেট সময় ১০:৪৭:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪

বংশগত বিভেদ ও প্রতিহিংসার জেরে একই মাঠে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ঈদুল আযহার নামাজের জামায়াত আদায় করেছেন শরীয়তপুরের এক এলাকার মুসল্লিরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল সোমবার (১৭ জুন) সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি আব্দুল গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আলাদা দুইটি প্যান্ডেল করে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে স্থানীয় মুসল্লিদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পালেরচর ইউনিয়নের হাওলাদার ও দড়ি বংশের লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই দুই সমাজের মানুষের মধ্যে আলাদা মতবাদ থাকায় গত ঈদুল ফিতর থেকে একই মাঠে দুটি প্যান্ডেল করে আলাদা জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। তবে গত বছর পর্যন্ত ঐ দুই বংশের লোকজন একই প্যান্ডেলে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। আর এই বিভক্ত হওয়ার মূল কারন হিসেবে দুই বংশের মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ঈদুল আযহার নামাজ হাওলাদার বংশের লোকজন সকাল সাড়ে ৬ টায় ও দড়ি বংশের লোকজন সকাল ৭ টায় আদায় সম্পন্ন করেছেন। তবে দুই পক্ষ আলাদা ভাবে নামাজ পড়লেও একে অপরের প্রতি কোনো অভিযোগ করছেন না। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা করে মন্তব্য করেন।

মাহমুদুল হাসান শাকুরী নামে একজন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে এবিষয়ে লিখেছেন, এক মাঠে পৃথক দুটি ঈদ জামাত। খোঁজ নিয়ে দেখেন, এই অপকর্মের মূল হোতা বা কুটিলও দুইদিন আগে ফেস্টুন বানিয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক সবার প্রাণ! আমাদের কর্মকাণ্ড দেখে ইবলিশও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।

সিদ্দিক আহমেদ নামে একজন ফেসবুকে পোষ্ট করে বলেন, ইতিহাসে যা ঘটেনি তাই দেখলাম। পালেরচড়ের দড়ি কান্দির মানুষ একের পর এক মনুষত্ব্য ও ভ্রাতৃত্ব্যের চমক দেখাচ্ছেন। একই মাঠে আলাদা ঈদের জামাত। টাকা আর আত্মঅহমিকার নামে এরা আজ যেখানে গিয়েছে শয়তানও এদের নিয়ে চিন্তায় পরেগেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দুই বংশের হাতে গোনা কয়েকজনের মতবিরোধের কারনে ঈদের নামাজের মত সম্প্রীতির অনুষ্ঠানে এমন বিভক্তের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল দড়ি আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “আমরা এই এলাকায় রাজনীতি করি মানুষের মঙ্গলের জন্য। কখনোই বিভক্ত সৃষ্টি হোক এমনটি কামনা করিনা। একই মাঠে দুই প্যান্ডেলে ঈদের নামাজ আদায়ের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই এমন বিভক্তি থেকে সবাই বেড়িয়ে আসুক।”

বিষয়টি নিয়ে হাওলাদার বংশের ও দড়ি বংশের মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু সাইদ ও মাওলানা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘আমরা মুসলমান হিসেবে ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য রক্ষার বিষয়ে সচেতন না থাকলে আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি না হলেও আমাদের ধর্ম সম্পর্কে অন্য ধর্মের মানুষ ভুল বার্তা পাবে। তাই বংশগত বিভেদ থাকলে তা সমাধান করে নামাজের মত বিষয়ে একাত্মতা রাখা জরুরী।’

একই মাঠে আলাদা প্যান্ডেল করে ঈদের নামাজ পড়ার বিষয়ে দড়ি বংশের মতিউর রহমান দড়ি আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “গত রমাজনের ঈদ থেকেই হাওলাদাররা আলাদা ভাবে নামাজ পড়া শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় এবারও তারা আলাদা প্যান্ডেলে নামাজ আদায় করেছেন। যদিও আমাদের মুরুব্বীরা সারাজীবন অন্তত ঈদের নামাজ এক জামায়াতে আদায় করে এসেছেন। তবে তাদের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।”

হাওলাদার বংশের শাহজাহান হাওলাদার আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, “গ্রামে দড়ি ও হাওলাদার বংশের লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় গত ঈদুল ফিতর থেকেই আলাদা জামায়াতে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। এর আগে আমরা এক সঙ্গেই ঈদের নামাজ আদায় করতাম। দড়ি বংশের লোকজন আমাদের বলেছিল, তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে। কিন্তু আমাদের লোকজন না মানায় ভিন্ন প্যান্ডেলে নামাজ আদায় করেছি। দড়ি বংশের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।”