ঢাকা ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

শরীয়তপুরে ঈদকে সামনে রেখে টুংটাং শব্দে মুখরিত কামারের দোকান

আগামী ১৭ই জুন পবিত্র ঈদ-উল আযহা। কামার পাড়ায় চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন চাপাতি, ছুরি, চাক্কু, দা, বটিসহ কোরবানীর পশু জবাই ও মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন বাজারের কামার শিল্পীরা টুং টাং শব্দে এখন মহাব্যস্ত সময় পাড় করছেন কোরবানীর ঈদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরীতে।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কৃষ্ণনগর এলাকার নমশূদ্র কান্দির (হিন্দু গ্রাম) বাসিন্দা নির্মল মন্ডল উপজেলার ডুবিসায়বর বন্দর কাজিরহাটে দা-কাস্তে তৈরির দোকান চালান। ঈদুল আজহার সময় পশু কোরবানি করার জন্য মানুষের নতুন দা ও চাপাতির প্রয়োজন হয়। তখনই মানুষ নির্মল মন্ডলদের দোকানে ভিড় করেন। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করে দিতে রাত–দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নির্মলসহ কাজিরহাটের অন্তত ৬০ জন কর্মকার।

নির্মল মণ্ডলের বয়স ৬০ বছর। এর মধ্যে ৪০ বছরের অধিক সময়ই কাটিয়েছেন তপ্ত আগুনে লোহা পুড়িয়ে তা দিয়ে দা-কাস্তে-ছুরি-চাপাতিসহ নানা সামগ্রী বানিয়ে। ঈদুল আজহা এলেই তার ব্যস্ততা অনেক বেশী বেড়ে যায়। বাড়তি আয়ের জন্য সারা বছর এই সময়টার অপেক্ষা করেন।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনার বন্দরের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তর বন্দর জাজিরার ডুবিসায়বর বন্দর কাজিরহাট। সেখানে কোরবানির সময় পশুর হাটও বসে। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ কাজিরহাটে আসেন বিভিন্ন পণ্য ও কোরবানির পশু কেনার জন্য।

ঈদুল আজহার দুই মাস আগে থেকে কর্মকারেরা দা-চাপাতি ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী তৈরি করা শুরু করেন। এসব সামগ্রী তৈরির অন্তত ৩০টি দোকান রয়েছে কাজিরহাটে। লোহা দিয়ে তৈরি প্রতি কেজি দা-চাপাতি সাড়ে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগে থেকে দোকানগুলোতে এসব সামগ্রী বিক্রি শুরু হয়। একেকটি দোকানে প্রতিদিন অর্ধলক্ষ টাকার পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

কথা হয় নির্মল মন্ডলের সাথে। তিনি বলেন, “আমার বাবাও এই পেশায় ছিলেন। সেই সুবাদে আমি এটি আয়ত্ত করেছি। ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে দিন-রাত এক করে আগুনে লোহা পুড়ে যাচ্ছি। বছরের যে সময়ে কোরবানির ঈদ হয়, তার দুই মাস আগে থেকে আমাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। এ ছাড়া ধান, পাট ও রবিশস্য মৌসুমে কাস্তে, কোদাল, লাঙল, কুড়াল তৈরির কাজ করি। এ দোকানের আয় দিয়ে সন্তানদের বিয়ে দিয়েছি, সংসার চালাচ্ছি।”

ডুবিসায়বর বন্দরের আরেক ব্যবসায়ী সুশীল বৈরাগীর বয়স ৫৫ বছর। তিনি কিশোর বয়স থেকে এ পেশায় আছেন। ৪২ বছর ধরে কাজিরহাট বাজারে কর্মকারের কাজ করেন। তার বাড়ীও জাজিরা উপজেলার বড়কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হিন্দু গ্রাম নমশূদ্র কান্দির বাসিন্দা। সুশীল বৈরাগী বলেন, “ঈদুল আজহার সময় আয় ২-৩ গুণ বেড়ে যায়। ব্যস্ততাও অনেক বেড়ে যায়।

মাদারীপুরের শিবচর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম শিপন কোরবানি ঈদ আসলেই কাজীরহাট কামারপাড়ায় আসেন কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি যেগুলো আছে সেগুলো নতুন করে শান দিতে এবং প্রয়োজনে নতুন সরঞ্জাম ক্রয় করতে। তিনি বলেন, কাজিরহাটের কামারদের তৈরি সামগ্রীর গুণগত মান অনেক ভালো হওয়ায় প্রতি ঈদে এখানে চলে আসি। এছাড়াও সারাবছর দা-বটির মত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রয়োজনে এই বন্দরের কর্মকারদের কাছেই চলে আসি।”

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুদখোর চেয়ারম্যান সাইফুলের ঘরে আলাদিনের চেরাগ!

শরীয়তপুরে ঈদকে সামনে রেখে টুংটাং শব্দে মুখরিত কামারের দোকান

আপডেট সময় ১০:২৪:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪

আগামী ১৭ই জুন পবিত্র ঈদ-উল আযহা। কামার পাড়ায় চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন চাপাতি, ছুরি, চাক্কু, দা, বটিসহ কোরবানীর পশু জবাই ও মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন বাজারের কামার শিল্পীরা টুং টাং শব্দে এখন মহাব্যস্ত সময় পাড় করছেন কোরবানীর ঈদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরীতে।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কৃষ্ণনগর এলাকার নমশূদ্র কান্দির (হিন্দু গ্রাম) বাসিন্দা নির্মল মন্ডল উপজেলার ডুবিসায়বর বন্দর কাজিরহাটে দা-কাস্তে তৈরির দোকান চালান। ঈদুল আজহার সময় পশু কোরবানি করার জন্য মানুষের নতুন দা ও চাপাতির প্রয়োজন হয়। তখনই মানুষ নির্মল মন্ডলদের দোকানে ভিড় করেন। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করে দিতে রাত–দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নির্মলসহ কাজিরহাটের অন্তত ৬০ জন কর্মকার।

নির্মল মণ্ডলের বয়স ৬০ বছর। এর মধ্যে ৪০ বছরের অধিক সময়ই কাটিয়েছেন তপ্ত আগুনে লোহা পুড়িয়ে তা দিয়ে দা-কাস্তে-ছুরি-চাপাতিসহ নানা সামগ্রী বানিয়ে। ঈদুল আজহা এলেই তার ব্যস্ততা অনেক বেশী বেড়ে যায়। বাড়তি আয়ের জন্য সারা বছর এই সময়টার অপেক্ষা করেন।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনার বন্দরের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তর বন্দর জাজিরার ডুবিসায়বর বন্দর কাজিরহাট। সেখানে কোরবানির সময় পশুর হাটও বসে। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ কাজিরহাটে আসেন বিভিন্ন পণ্য ও কোরবানির পশু কেনার জন্য।

ঈদুল আজহার দুই মাস আগে থেকে কর্মকারেরা দা-চাপাতি ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী তৈরি করা শুরু করেন। এসব সামগ্রী তৈরির অন্তত ৩০টি দোকান রয়েছে কাজিরহাটে। লোহা দিয়ে তৈরি প্রতি কেজি দা-চাপাতি সাড়ে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগে থেকে দোকানগুলোতে এসব সামগ্রী বিক্রি শুরু হয়। একেকটি দোকানে প্রতিদিন অর্ধলক্ষ টাকার পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

কথা হয় নির্মল মন্ডলের সাথে। তিনি বলেন, “আমার বাবাও এই পেশায় ছিলেন। সেই সুবাদে আমি এটি আয়ত্ত করেছি। ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে দিন-রাত এক করে আগুনে লোহা পুড়ে যাচ্ছি। বছরের যে সময়ে কোরবানির ঈদ হয়, তার দুই মাস আগে থেকে আমাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। এ ছাড়া ধান, পাট ও রবিশস্য মৌসুমে কাস্তে, কোদাল, লাঙল, কুড়াল তৈরির কাজ করি। এ দোকানের আয় দিয়ে সন্তানদের বিয়ে দিয়েছি, সংসার চালাচ্ছি।”

ডুবিসায়বর বন্দরের আরেক ব্যবসায়ী সুশীল বৈরাগীর বয়স ৫৫ বছর। তিনি কিশোর বয়স থেকে এ পেশায় আছেন। ৪২ বছর ধরে কাজিরহাট বাজারে কর্মকারের কাজ করেন। তার বাড়ীও জাজিরা উপজেলার বড়কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হিন্দু গ্রাম নমশূদ্র কান্দির বাসিন্দা। সুশীল বৈরাগী বলেন, “ঈদুল আজহার সময় আয় ২-৩ গুণ বেড়ে যায়। ব্যস্ততাও অনেক বেড়ে যায়।

মাদারীপুরের শিবচর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম শিপন কোরবানি ঈদ আসলেই কাজীরহাট কামারপাড়ায় আসেন কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি যেগুলো আছে সেগুলো নতুন করে শান দিতে এবং প্রয়োজনে নতুন সরঞ্জাম ক্রয় করতে। তিনি বলেন, কাজিরহাটের কামারদের তৈরি সামগ্রীর গুণগত মান অনেক ভালো হওয়ায় প্রতি ঈদে এখানে চলে আসি। এছাড়াও সারাবছর দা-বটির মত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রয়োজনে এই বন্দরের কর্মকারদের কাছেই চলে আসি।”