ঢাকা ০৬:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ভালোবাসার অনন্য নজির, স্ত্রী শাকিলার লিভারে জীবন পেলেন স্বামী

প্রিয় স্বামীকে নিজের একমাত্র কলিজা (লিভার) দান করে বাঁচালেন স্ত্রী। আর এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বেশ প্রশংসিত হলেন চট্টগ্রামের রাউজানের বড়ঠাকুর পাড়ার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী মো. নাছের (৫০) ও শাকিলা আলম ববি (৩৭) দম্পতি।

জানা যায়, মো. নাছের দীর্ঘসময় ধরে আরব আমিরাতে ভাইদের সাথে যৌথভাবে ব্যবসা করে আসছেন। ২০১৮ সালে তার যকৃতে টিউমার ধরা পড়ে। এরপর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার করা হয়।

২০২১ সালে আবার দুবাইয়ের আল জেরা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার পর ২০২২ সালে ভারতের চেন্নাইয়ের রেলা হসপিটালে তৃতীয়বারের মতো অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে আবারও টিউমারটি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে থেরাপি দেন। এতেও সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার পরামর্শ দেন। তবে লিভারের অংশ হতে হবে নিকটজনের।

প্রিয় স্বামীর মৃত্যু নিজের জীবন দিয়ে হলেও ঠেকাতে প্রস্তুত স্ত্রী শাকিলা আলম ববি। চিকিৎসদের জানিয়ে দিলেন নিজের লিভার (যকৃত) দিয়ে স্বামীকে বাঁচাবেন। এ জন্য আদালতে হাজির হয়ে ঘোষণা দেওয়ার পর অবশেষে তার লিভারের অর্ধেকেরও বেশি অংশ দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচালেন স্ত্রী শাকিলা।

চেন্নাইয়ের রেলা হসপিটালে কয়েক দিন আগে তাদের দুজনের সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্ত্রীর লিভারে জীবন ফিরে পান প্রবাসী স্বামী মো. নাছের। বিষয়টি এলাকায় সবার নজর কাড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাউজানের বড়ঠাকুর পাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত আলা মিয়া মেম্বারের ছেলে আমিরাত প্রবাসী মো. নাছেরের সঙ্গে ২০০২ সালে একই এলাকার শাকিলা আলম ববির বিয়ে হয়। তাদের তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। লিভারদানের পর সুস্থ হন ববি।

কিন্তু স্বামী নাছের এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। তারা বর্তমানে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে আছেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে কথা হয় পরিবারের সঙ্গে। তারা দুজনই ভালো আছেন বলে জানান।

স্ত্রী ববি বলেন, লিভার প্রতিস্থাপনের কথা বললে প্রথমে ভয় হলো। পরে মনে হলো এটা না হলে আমি স্বামী হারা ও সন্তানরা পিতৃহীন হয়ে বড় হবে! এটি মেনে নিতে পারব না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের লিভার দিয়ে হলেও স্বামীর জীবন বাঁচাব। তিনি বলেন, বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব। মরলেও একসঙ্গে মরব।

স্বামী মো. নাছের বলেন, তিনি নিষেধ করলেও স্ত্রী মানেনি। তিনি বলেন, এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি। তবে নতুন জীবন পাওয়ার আনন্দটুকু বলে বুঝাতে পারব না। সবার দোয়া কামনা করছি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন, স্বামীকে নিজের লিভার স্থাপনের ঘটনা দেশে বিরল। তবে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এমন ভালোবাসা নজির স্থাপন করেছে। আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুদখোর চেয়ারম্যান সাইফুলের ঘরে আলাদিনের চেরাগ!

ভালোবাসার অনন্য নজির, স্ত্রী শাকিলার লিভারে জীবন পেলেন স্বামী

আপডেট সময় ১২:৩০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪

প্রিয় স্বামীকে নিজের একমাত্র কলিজা (লিভার) দান করে বাঁচালেন স্ত্রী। আর এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বেশ প্রশংসিত হলেন চট্টগ্রামের রাউজানের বড়ঠাকুর পাড়ার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী মো. নাছের (৫০) ও শাকিলা আলম ববি (৩৭) দম্পতি।

জানা যায়, মো. নাছের দীর্ঘসময় ধরে আরব আমিরাতে ভাইদের সাথে যৌথভাবে ব্যবসা করে আসছেন। ২০১৮ সালে তার যকৃতে টিউমার ধরা পড়ে। এরপর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার করা হয়।

২০২১ সালে আবার দুবাইয়ের আল জেরা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার পর ২০২২ সালে ভারতের চেন্নাইয়ের রেলা হসপিটালে তৃতীয়বারের মতো অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে আবারও টিউমারটি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে থেরাপি দেন। এতেও সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার পরামর্শ দেন। তবে লিভারের অংশ হতে হবে নিকটজনের।

প্রিয় স্বামীর মৃত্যু নিজের জীবন দিয়ে হলেও ঠেকাতে প্রস্তুত স্ত্রী শাকিলা আলম ববি। চিকিৎসদের জানিয়ে দিলেন নিজের লিভার (যকৃত) দিয়ে স্বামীকে বাঁচাবেন। এ জন্য আদালতে হাজির হয়ে ঘোষণা দেওয়ার পর অবশেষে তার লিভারের অর্ধেকেরও বেশি অংশ দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচালেন স্ত্রী শাকিলা।

চেন্নাইয়ের রেলা হসপিটালে কয়েক দিন আগে তাদের দুজনের সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্ত্রীর লিভারে জীবন ফিরে পান প্রবাসী স্বামী মো. নাছের। বিষয়টি এলাকায় সবার নজর কাড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাউজানের বড়ঠাকুর পাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত আলা মিয়া মেম্বারের ছেলে আমিরাত প্রবাসী মো. নাছেরের সঙ্গে ২০০২ সালে একই এলাকার শাকিলা আলম ববির বিয়ে হয়। তাদের তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। লিভারদানের পর সুস্থ হন ববি।

কিন্তু স্বামী নাছের এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। তারা বর্তমানে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে আছেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে কথা হয় পরিবারের সঙ্গে। তারা দুজনই ভালো আছেন বলে জানান।

স্ত্রী ববি বলেন, লিভার প্রতিস্থাপনের কথা বললে প্রথমে ভয় হলো। পরে মনে হলো এটা না হলে আমি স্বামী হারা ও সন্তানরা পিতৃহীন হয়ে বড় হবে! এটি মেনে নিতে পারব না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের লিভার দিয়ে হলেও স্বামীর জীবন বাঁচাব। তিনি বলেন, বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব। মরলেও একসঙ্গে মরব।

স্বামী মো. নাছের বলেন, তিনি নিষেধ করলেও স্ত্রী মানেনি। তিনি বলেন, এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি। তবে নতুন জীবন পাওয়ার আনন্দটুকু বলে বুঝাতে পারব না। সবার দোয়া কামনা করছি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন, স্বামীকে নিজের লিভার স্থাপনের ঘটনা দেশে বিরল। তবে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এমন ভালোবাসা নজির স্থাপন করেছে। আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।