ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বাংলাদেশের নতুন আতংক রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ

পদ্মার তীরবর্তী জেলা সমুহের চরাঞ্চল থেকে শুরু করে বিস্তৃত ধানের জমিতে এর বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে,

পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চল ছাড়া, মেঘনা ও যমুনার নদী তীরবর্তী এলাকায় এর বিস্তার পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বিগত কয়েক বছরে এই সাপের সংখ্যা জ্যামেতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে,এক সময় বিলুপ্ত প্রায় এই সাপটি এখন মূর্তিমান আতংকে রুপ নিয়েছে।রাসেল ভাইপারের কামড়ে অসংখ্য মানুষের প্রান যাচ্ছে,

বিশেষ করে ধানের জমিতে কর্মরত শ্রমিক ও নদীর চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষ এই সাপের দংশনে মারা যাচ্ছে,হিংস্র এই সাপ খুবই আক্রমনকারী,এই সাপের দংশনে প্রায় ৮০% মানুষ মারা যায়,দংশন করার ১-১৪ দিনের মধ্যে আহত ব্যাক্তি মারা যায়। চলুন রাসেল ভাইপার সম্পর্কে সাধারন কিছু তথ্য জেনে নেই।

স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত সার্জন প্যাটরিক রাসেল ১৭৯৬ সালে রাসেল ভাইপার সাপকে প্রথম সনাক্ত করেন বাংলায় এই সাপকে চন্দ্রবোড়া বলা হয়,দেখতে অনেকটা অজগর এর মত কিন্তু আকারে বেশ ছোট, ৪ ফুট থেকে সাড়ে চার ফুট লম্বায় হয়।এরা ডিম পাড়ে না সরাসরি বাচ্চা দেয়, একবারে প্রায় ৮০-৯০ টি বাচ্চা দেয়, এদের প্রধান খাবার ইদুর, ছোট পাখি এবং ব্যাংঙ।তার শিকারের একটি মজার ধরন আছে তা হলো,

একটি ইদুর কে প্রথম সে দংশন করে আহত করে ছেড়ে দেয়,এবং আহত ইদুর যখন ছটফট করতে করতে তার গর্তে প্রবেশ করে তখন সে পিছু পিছু গিয়ে গর্তে থাকা সব ইদুরকে খেয়ে ফেলে।

হঠাৎ করে এত রাসেল ভাইপার কোথা থেকে এলো?রাসেল ভাইপার মূলত ভারতে প্রচুর পরিমান পাওয়া যায়,বর্ষার পানিতে স্রোতে কচুরি পানার সাথে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের অঞ্চলে প্রবেশ করে,ধানের জমিতে প্রচুর ইদুর এবং ব্যাংঙ থাকাতে সেখানে তারা একটি ইকো সিস্টেম তৈরী করে নিয়েছে।

রাসেল ভাইপারের বিষে শরীরে কি কি প্রভাব তৈরী করে।

রাসেল ভাইপার মূলত Solenoglyphous পদ্ধতিতে দংশন করে,প্রতিবার দংশন করার সময় প্রায় ৮০-১৫০ মিলিগ্রাম বিষ ছাড়তে পারে,৪০-৫০ মিলিগ্রাম বিষ যথেষ্ট একজন মানুষকে মৃত্যুর জন্য।

রাসেল ভাইপার এর বিষে মেটালোপ্রোটিনেস নামক একটি উচ্চ মাত্রার টক্সিন থাকে যা রক্তের জমাট বাধার উপাদান X factor বৃদ্ধি করে ফলে শরীরের রক্ত নালির ভিতরের রক্ত জমাট বেধে যায় এবং রক্ত চলাচল ব্যহত হয়ে মারা যায়।

রাসেল ভাইপার এর কাটা রোগির লক্ষন।

১) দংশন স্থানে ব্যথা হবে

২) আক্রান্ত স্থান ফুলে যাবে ( যদি হাতে কামড় দিয়ে থাকে সেই স্থান ফুলে যাবে)

৩) দাতের মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরন হতে পারে, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে ( দংশনের বিশ মিনিট পর এই লক্ষন দেখা দিতে পারে)

৪) রক্ত চাপ কমে যাবে সাথে হার্টবিট ও কমে যেতে পারে।

৫) বমি হতে পারে।

৬) সিভিয়ার কন্ডিশনে কিডনী ফেইল হতে পারে,ব্লাড ভ্যাসেল রাপচার হতে পারে,

প্রাথমিক চিকিৎসা

ভয় না পেয়ে আগে কনফার্ম হতে হবে কোন সাপে দংশন করেছে, রাসেল ভাইপার কামড় দেওয়ার পর পালিয়ে যায় না, তাই সহজেই সনাক্ত করা যায়।আক্রান্ত ব্যাক্তিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে, আক্রান্ত স্থান পরিস্কার পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে,ভুলে ও ব্লেড দিয়ে কেটে রক্ত বের করা যাবে না।
অথবা বাংলা সিনামার মত মুখ দিয়ে চুষে বিষ বের করার কাল্পনিক চেষ্টা করবেন না, ইহা সিনামাতেই সম্ভব।

একটি পরিস্কার ব্যান্ডেজ কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থান সহ আশে পাশের অংশ আলতো ভাবে পেচিয়ে রাখতে হবে যেনো সংক্রামন না হয়।

যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নেওয়ার চেষ্টা কর‍তে হবে।

ক্রান্তি লগ্নে একটি হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন আপনাকে অনেক হেল্প করতে পারে সেটি হলো

ভাইপেরা ৩০,

হসপিটালে যাওয়ার পথে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর অন্তর ভাইপেরা ৩০ আপনার মৃত্যু ঝুকি কমিয়ে দিতে পারে।

বিলম্ব না করে হসপিটালে যাবেন কারন এন্টিভেনম এবং এন্টিকোয়াগুলেটিভ এজেন্ট আপনাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আল্লাহ চাইলে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুদখোর চেয়ারম্যান সাইফুলের ঘরে আলাদিনের চেরাগ!

বাংলাদেশের নতুন আতংক রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ

আপডেট সময় ১০:৫৩:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

পদ্মার তীরবর্তী জেলা সমুহের চরাঞ্চল থেকে শুরু করে বিস্তৃত ধানের জমিতে এর বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে,

পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চল ছাড়া, মেঘনা ও যমুনার নদী তীরবর্তী এলাকায় এর বিস্তার পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বিগত কয়েক বছরে এই সাপের সংখ্যা জ্যামেতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে,এক সময় বিলুপ্ত প্রায় এই সাপটি এখন মূর্তিমান আতংকে রুপ নিয়েছে।রাসেল ভাইপারের কামড়ে অসংখ্য মানুষের প্রান যাচ্ছে,

বিশেষ করে ধানের জমিতে কর্মরত শ্রমিক ও নদীর চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষ এই সাপের দংশনে মারা যাচ্ছে,হিংস্র এই সাপ খুবই আক্রমনকারী,এই সাপের দংশনে প্রায় ৮০% মানুষ মারা যায়,দংশন করার ১-১৪ দিনের মধ্যে আহত ব্যাক্তি মারা যায়। চলুন রাসেল ভাইপার সম্পর্কে সাধারন কিছু তথ্য জেনে নেই।

স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত সার্জন প্যাটরিক রাসেল ১৭৯৬ সালে রাসেল ভাইপার সাপকে প্রথম সনাক্ত করেন বাংলায় এই সাপকে চন্দ্রবোড়া বলা হয়,দেখতে অনেকটা অজগর এর মত কিন্তু আকারে বেশ ছোট, ৪ ফুট থেকে সাড়ে চার ফুট লম্বায় হয়।এরা ডিম পাড়ে না সরাসরি বাচ্চা দেয়, একবারে প্রায় ৮০-৯০ টি বাচ্চা দেয়, এদের প্রধান খাবার ইদুর, ছোট পাখি এবং ব্যাংঙ।তার শিকারের একটি মজার ধরন আছে তা হলো,

একটি ইদুর কে প্রথম সে দংশন করে আহত করে ছেড়ে দেয়,এবং আহত ইদুর যখন ছটফট করতে করতে তার গর্তে প্রবেশ করে তখন সে পিছু পিছু গিয়ে গর্তে থাকা সব ইদুরকে খেয়ে ফেলে।

হঠাৎ করে এত রাসেল ভাইপার কোথা থেকে এলো?রাসেল ভাইপার মূলত ভারতে প্রচুর পরিমান পাওয়া যায়,বর্ষার পানিতে স্রোতে কচুরি পানার সাথে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের অঞ্চলে প্রবেশ করে,ধানের জমিতে প্রচুর ইদুর এবং ব্যাংঙ থাকাতে সেখানে তারা একটি ইকো সিস্টেম তৈরী করে নিয়েছে।

রাসেল ভাইপারের বিষে শরীরে কি কি প্রভাব তৈরী করে।

রাসেল ভাইপার মূলত Solenoglyphous পদ্ধতিতে দংশন করে,প্রতিবার দংশন করার সময় প্রায় ৮০-১৫০ মিলিগ্রাম বিষ ছাড়তে পারে,৪০-৫০ মিলিগ্রাম বিষ যথেষ্ট একজন মানুষকে মৃত্যুর জন্য।

রাসেল ভাইপার এর বিষে মেটালোপ্রোটিনেস নামক একটি উচ্চ মাত্রার টক্সিন থাকে যা রক্তের জমাট বাধার উপাদান X factor বৃদ্ধি করে ফলে শরীরের রক্ত নালির ভিতরের রক্ত জমাট বেধে যায় এবং রক্ত চলাচল ব্যহত হয়ে মারা যায়।

রাসেল ভাইপার এর কাটা রোগির লক্ষন।

১) দংশন স্থানে ব্যথা হবে

২) আক্রান্ত স্থান ফুলে যাবে ( যদি হাতে কামড় দিয়ে থাকে সেই স্থান ফুলে যাবে)

৩) দাতের মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরন হতে পারে, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে ( দংশনের বিশ মিনিট পর এই লক্ষন দেখা দিতে পারে)

৪) রক্ত চাপ কমে যাবে সাথে হার্টবিট ও কমে যেতে পারে।

৫) বমি হতে পারে।

৬) সিভিয়ার কন্ডিশনে কিডনী ফেইল হতে পারে,ব্লাড ভ্যাসেল রাপচার হতে পারে,

প্রাথমিক চিকিৎসা

ভয় না পেয়ে আগে কনফার্ম হতে হবে কোন সাপে দংশন করেছে, রাসেল ভাইপার কামড় দেওয়ার পর পালিয়ে যায় না, তাই সহজেই সনাক্ত করা যায়।আক্রান্ত ব্যাক্তিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে, আক্রান্ত স্থান পরিস্কার পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে,ভুলে ও ব্লেড দিয়ে কেটে রক্ত বের করা যাবে না।
অথবা বাংলা সিনামার মত মুখ দিয়ে চুষে বিষ বের করার কাল্পনিক চেষ্টা করবেন না, ইহা সিনামাতেই সম্ভব।

একটি পরিস্কার ব্যান্ডেজ কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থান সহ আশে পাশের অংশ আলতো ভাবে পেচিয়ে রাখতে হবে যেনো সংক্রামন না হয়।

যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নেওয়ার চেষ্টা কর‍তে হবে।

ক্রান্তি লগ্নে একটি হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন আপনাকে অনেক হেল্প করতে পারে সেটি হলো

ভাইপেরা ৩০,

হসপিটালে যাওয়ার পথে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর অন্তর ভাইপেরা ৩০ আপনার মৃত্যু ঝুকি কমিয়ে দিতে পারে।

বিলম্ব না করে হসপিটালে যাবেন কারন এন্টিভেনম এবং এন্টিকোয়াগুলেটিভ এজেন্ট আপনাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আল্লাহ চাইলে।