ঢাকা ০৬:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশুর হাট ঘিরে তৎপর অপরাধীরা, জাল টাকার ছড়াছড়ি

যেকোনও বড় উৎসব ঘিরে অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মল এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটকে টার্গেট করে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ দুই সময়ে বাড়ে জাল টাকার ছড়াছড়ি। প্রতিবারই এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকার ঘোষণা দেয়। তারা চক্রের কিছু সদস্যকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু পুরোপুরি অপরাধ নির্মূল সম্ভব হয় না।

প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাটের আশপাশে ছদ্মবেশে ওত পেতে থাকে অপরাধীরা। এ সময় পশুবাহী ট্রাকগুলো কেন্দ্র করে চলে চাঁদাবাজি। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, সালাম পার্টি, বমি পার্টিসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এসব চক্র। সুযোগ পেলেই তারা ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব।

প্রতি হাটে থাকছে ড্রোন পেট্রোলিং ব্যবস্থা
এবারও আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ ঠেকাতে ঢাকা মহানগর এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে বরাবরের মতো এবারও গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টিম। কয়েক স্তরের নিরাপত্তাসহ প্রতিটি হাটে থাকছে ড্রোন পেট্রোলিং ব্যবস্থা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, পশুবাহী ট্রাককে কেন্দ্র করে এবার যারাই চাঁদাবাজি করবে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি পুলিশের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে যদি কোনও চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর র‍্যাব বলছে, হাটে পশু বিক্রি করে ঘরে ফেরা পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেবেন সংস্থাটির সদস্যরা।

ইতোমধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। শনিবার (৮ জুন) সকালে যাত্রাবাড়ীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা তৈরি চক্রের মূল হোতাসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা ও ভারতীয় ৫০০ রুপির বিপুল পরিমাণ জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জাল টাকা তৈরিতে কাগজ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

ডিবি বলছে, ঈদ সামনে রেখে চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা বাজারে পাওয়া ২২ এমএম কাগজ, সাধারণ কালার ও প্রিন্টার দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জাল টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা তৈরি করে আসছিল। এরপর তার ১৫ থেকে ২০ জন এজেন্টের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক হতে বললো পুলিশ
জাল টাকা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, সারা বছর গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে হয়। নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। কারণ এই চক্রগুলো সারা বছরই জাল টাকা তৈরি করে। কয়েক দিন আগে এক নারীই ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে তারা কি পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছেড়ছে। এই চক্রের ১৫ থেকে ২০ জন এজেন্ট রয়েছে। যারা সারা দেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে গরু-ছাগল বিক্রি বা লেনদেনের সময়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে টাকা যাচাই করে নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

এর আগে গত ৫ জুন আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ি বাসস্ট্যান্ড ও পার্শ্ববর্তী হাবিব সিএনজি পাম্পের সামনে অভিযান চালিয়ে মহাসড়কে কোরবানির পশু পরিবহন করা গাড়ি থামিয়ে ও বিভিন্ন খামারকে লক্ষ করে ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ডাকাত দলের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশ।

রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট (ফাইল ছবি)
রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট (ফাইল ছবি)
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ডাকাত দলে ১২ থেকে ১৫ সদস্য রয়েছে। তাদের বাইরেও আরও সহযোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে গরুর ব্যাপারী ও কসাইরা। ডাকাতির পর সেই গরু তারাই কিনে নেয়। আর গরু ডাকাতির আগেই ডাকাতদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখে সহযোগীরা। ফলে তারাও জানে, কবে ডাকাতির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

দেখতে হবে সিসিটিভি সচল আছে কি না
এবার কী রকম নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ঈদে ঢাকা মহানগর পুলিশ যেভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, সেটি যথেষ্ট ভালো ছিল। এবার যেহেতু কোরবানি ঈদ, তাই আমাদের বিভিন্নভাবে ভাবতে হয়। কারণ বড় বড় পশুর হাটের বিষয়টি হলো চাঁদাবাজি। এবার যারাই চাঁদাবাজি করবে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি পুলিশের সদস্যের বিরুদ্ধে যদি কোনও চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি ওত পেতে থাকে। তাদের বিষয়ে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাই। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিসিটিভি। যারা ঢাকার বাইরে যাবেন, তারা যেন অবশ্যই তাদের বাসায় লাগানো সিসিটিভি সচল আছে কি না পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। তাহলে খালি বাসায় কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে আমরা সহজে শনাক্ত করতে পারবো।

বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে র‍্যাব
র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদুল আজহাকে ঘিরে যেকোনও অপরাধ ঠেকাতে র‍্যাবের প্রতিটি টিম মাঠে কাজ করছে। পশুর হাটের ভেতরে-বাইরে সব জায়গায় র‍্যাবের সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ অভিযান ও পেট্রোল টিম নিয়োজিত থাকবে। বিভিন্ন জেলা থেকে যারা ঢাকার বিভিন্ন হাটে পশু নিয়ে আসবেন, বিক্রি শেষে তারা বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত র‍্যাব সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে যাবেন।

এ ছাড়া প্রতিটি হাটে আমাদের সাপোর্ট সেন্টার থাকবে। যাত্রাপথে নির্বিঘ্নে যেন চলাচল করতে পারে, সে জন্য সড়ক ও মহাসড়কে র‍্যাবের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

গরুর হাট মনিটর হবে অনলাইনে
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপির) কমিশনার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকার ভেতরে পশুর হাটে যারা (স্বেচ্ছাসেবীসহ হাট ইজারাদার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) কাজ করবেন, তাদের সমন্বয় থাকবে। পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির ব্যাপারে ডিবির টিম সজাগ থাকবে। হাট ও হাটের আশপাশে এমন অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির ব্যক্তি দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি জাল টাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা তাদের জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন পশুর হাটগুলোয় রাখবেন। আমাদের সাইবার টিম অনলাইনের গরুর হাট মনিটরিং করবে।

যারা গরু কেনাবেচা করবেন তাদের নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি যারা ঢাকার বাইরে থেকে ট্রাকে গরু আনবেন, তাদের হাইওয়ে পুলিশ; নৌপথে যারা গরু আনবেন তাদের জন্য নৌ-পুলিশ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া পশুর হাটগুলোতে ড্রোন পেট্রোলিং থাকবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পশুর হাট ঘিরে তৎপর অপরাধীরা, জাল টাকার ছড়াছড়ি

আপডেট সময় ০৩:২০:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

যেকোনও বড় উৎসব ঘিরে অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মল এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটকে টার্গেট করে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ দুই সময়ে বাড়ে জাল টাকার ছড়াছড়ি। প্রতিবারই এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকার ঘোষণা দেয়। তারা চক্রের কিছু সদস্যকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু পুরোপুরি অপরাধ নির্মূল সম্ভব হয় না।

প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাটের আশপাশে ছদ্মবেশে ওত পেতে থাকে অপরাধীরা। এ সময় পশুবাহী ট্রাকগুলো কেন্দ্র করে চলে চাঁদাবাজি। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, সালাম পার্টি, বমি পার্টিসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এসব চক্র। সুযোগ পেলেই তারা ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব।

প্রতি হাটে থাকছে ড্রোন পেট্রোলিং ব্যবস্থা
এবারও আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ ঠেকাতে ঢাকা মহানগর এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে বরাবরের মতো এবারও গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টিম। কয়েক স্তরের নিরাপত্তাসহ প্রতিটি হাটে থাকছে ড্রোন পেট্রোলিং ব্যবস্থা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, পশুবাহী ট্রাককে কেন্দ্র করে এবার যারাই চাঁদাবাজি করবে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি পুলিশের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে যদি কোনও চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর র‍্যাব বলছে, হাটে পশু বিক্রি করে ঘরে ফেরা পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেবেন সংস্থাটির সদস্যরা।

ইতোমধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। শনিবার (৮ জুন) সকালে যাত্রাবাড়ীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা তৈরি চক্রের মূল হোতাসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা ও ভারতীয় ৫০০ রুপির বিপুল পরিমাণ জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জাল টাকা তৈরিতে কাগজ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

ডিবি বলছে, ঈদ সামনে রেখে চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা বাজারে পাওয়া ২২ এমএম কাগজ, সাধারণ কালার ও প্রিন্টার দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জাল টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা তৈরি করে আসছিল। এরপর তার ১৫ থেকে ২০ জন এজেন্টের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক হতে বললো পুলিশ
জাল টাকা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, সারা বছর গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে হয়। নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। কারণ এই চক্রগুলো সারা বছরই জাল টাকা তৈরি করে। কয়েক দিন আগে এক নারীই ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে তারা কি পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছেড়ছে। এই চক্রের ১৫ থেকে ২০ জন এজেন্ট রয়েছে। যারা সারা দেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে গরু-ছাগল বিক্রি বা লেনদেনের সময়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে টাকা যাচাই করে নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

এর আগে গত ৫ জুন আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ি বাসস্ট্যান্ড ও পার্শ্ববর্তী হাবিব সিএনজি পাম্পের সামনে অভিযান চালিয়ে মহাসড়কে কোরবানির পশু পরিবহন করা গাড়ি থামিয়ে ও বিভিন্ন খামারকে লক্ষ করে ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ডাকাত দলের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশ।

রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট (ফাইল ছবি)
রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট (ফাইল ছবি)
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ডাকাত দলে ১২ থেকে ১৫ সদস্য রয়েছে। তাদের বাইরেও আরও সহযোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে গরুর ব্যাপারী ও কসাইরা। ডাকাতির পর সেই গরু তারাই কিনে নেয়। আর গরু ডাকাতির আগেই ডাকাতদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখে সহযোগীরা। ফলে তারাও জানে, কবে ডাকাতির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

দেখতে হবে সিসিটিভি সচল আছে কি না
এবার কী রকম নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ঈদে ঢাকা মহানগর পুলিশ যেভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, সেটি যথেষ্ট ভালো ছিল। এবার যেহেতু কোরবানি ঈদ, তাই আমাদের বিভিন্নভাবে ভাবতে হয়। কারণ বড় বড় পশুর হাটের বিষয়টি হলো চাঁদাবাজি। এবার যারাই চাঁদাবাজি করবে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি পুলিশের সদস্যের বিরুদ্ধে যদি কোনও চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি ওত পেতে থাকে। তাদের বিষয়ে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাই। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিসিটিভি। যারা ঢাকার বাইরে যাবেন, তারা যেন অবশ্যই তাদের বাসায় লাগানো সিসিটিভি সচল আছে কি না পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। তাহলে খালি বাসায় কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে আমরা সহজে শনাক্ত করতে পারবো।

বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে র‍্যাব
র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদুল আজহাকে ঘিরে যেকোনও অপরাধ ঠেকাতে র‍্যাবের প্রতিটি টিম মাঠে কাজ করছে। পশুর হাটের ভেতরে-বাইরে সব জায়গায় র‍্যাবের সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ অভিযান ও পেট্রোল টিম নিয়োজিত থাকবে। বিভিন্ন জেলা থেকে যারা ঢাকার বিভিন্ন হাটে পশু নিয়ে আসবেন, বিক্রি শেষে তারা বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত র‍্যাব সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে যাবেন।

এ ছাড়া প্রতিটি হাটে আমাদের সাপোর্ট সেন্টার থাকবে। যাত্রাপথে নির্বিঘ্নে যেন চলাচল করতে পারে, সে জন্য সড়ক ও মহাসড়কে র‍্যাবের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

গরুর হাট মনিটর হবে অনলাইনে
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপির) কমিশনার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকার ভেতরে পশুর হাটে যারা (স্বেচ্ছাসেবীসহ হাট ইজারাদার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) কাজ করবেন, তাদের সমন্বয় থাকবে। পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির ব্যাপারে ডিবির টিম সজাগ থাকবে। হাট ও হাটের আশপাশে এমন অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির ব্যক্তি দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি জাল টাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা তাদের জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন পশুর হাটগুলোয় রাখবেন। আমাদের সাইবার টিম অনলাইনের গরুর হাট মনিটরিং করবে।

যারা গরু কেনাবেচা করবেন তাদের নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি যারা ঢাকার বাইরে থেকে ট্রাকে গরু আনবেন, তাদের হাইওয়ে পুলিশ; নৌপথে যারা গরু আনবেন তাদের জন্য নৌ-পুলিশ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া পশুর হাটগুলোতে ড্রোন পেট্রোলিং থাকবে।