ঢাকা ০২:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটি ভারতীয়ের হৃদয়ে কান্না, ‘হেক্সা’ জিতলো অস্ট্রেলিয়া

আহমেদাবাদে এক লাখ ত্রিশ হাজার মানুষের নীল সমুদ্রে কি কেউ বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে? কে জানে! নয়তো সব কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যাবে কেন। কেন চিৎকার-উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ফেটে পড়বে না মোতেরা।

কেন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে হবে না নীল উৎসব। উত্তরটা বোধ হয় এতক্ষণে আপনারও জানা- ভারত বিশ্বকাপটা জিততে পারেনি।
উৎসবের শহর এখন সিডনি। আহমেদাবাদ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের মেলবোর্ন-অ্যাডিলেড-পার্থ। অথবা পুরো অস্ট্রেলিয়ায় এখন আনন্দের জোয়ার। এখন তাদের ‘হেক্সা’ মানে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয় উদযাপনের সময়। ভারতকে রোববার তারা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে হারিয়ে দিয়েছে ছয় উইকেটে। ওখানে সেঞ্চুরি করে নায়ক ট্রাভিস হেড।

মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভের পথ ধরে চলা মানুষগুলোর এখন মনে বিষাদ, কলকাতা নিউমার্কেটের অবস্থাও হয়তো তাই। ধর্মশালার পাহাড়ি মায়াও কি আজ বিষাদ? সম্ভবত চেন্নাইয়ের সমুদ্রের কাছেও তাই। অথচ আজ রঙ লাগার কথা ছিল আলোর।

অথচ আজ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম হওয়ার কথা ছিল রঙিন। নয় শহর হয়ে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে, কোথাও থামতে হয়নি রোহিত কোহলিদের; একটি ম্যাচেও হারেনি তারা। তাদের থামতে হলো এমন এক জায়গায় এসে- নীল উৎসবের সব প্রস্তুতিই নেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল যেখানে। এখন সম্ভবত রোহিত মাথাটা আকাশে তুলে করে একটা প্রশ্নই বারবার করছেন- প্রকৃতি কেন এত নিষ্ঠুর!

প্যাট কামিন্সম শ্যাম্পেইন হাতে নিয়ে উৎসব করবেন যখন, তার হয়তো তখন এক আকাশে স্বস্তি। পেসার, অধিনায়কত্ব কি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এখন হয়তো কোথাও একটা বিশ্বকাপ ছবি টাঙিয়ে রাখতে পারবেন তিনি।

এসবের আঁচ অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল টস হেরে করা ভারতের ব্যাটিংয়ের সময়টাতেই। প্রতাপশালী, দাপুটে ব্যাটিং লাইন-আপ ফিকে হয়ে আসে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স আর জশ হ্যাজিলউডের সামনে। পিচটাকে ঠিকঠাক বুঝে এমন সব বল ছুড়লেন তারা, বেশির ভাগ ভারতীয় ব্যাটার উত্তরই খুঁজে পেলেন না।

এর শুরুটা হয়েছিল শুভমন গিলকে দিয়ে। স্টার্ককে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে আসেন মিড অনে দাঁড়ানো এডাম জাম্পার হাতে। ক্ষুব্ধ চোখজুড়া নিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরতে হয় ৭ বলে ৪ রান করে। যেটি হতে পারতো আরও আগেই। কোনো রান করার আগেই স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তিনি, স্রেফ বলটা ক্যারি করেনি বলে বেঁচে যান তখন।

গিলকে হারানোর ক্ষত পরে আরও বাড়ে রোহিত শর্মাও পাওয়ার প্লের ভেতরই ফিরে যাওয়ার পর। ম্যাক্সওয়েলকে তুলে মারতে গিয়ে বল তুলে দেন অনেকটুকু উপরে, কাভার থেকে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ট্রাভিস হেড। ব্যাট হাতে পরে আর এর আগে এই ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের ভাগ্যও সম্ভবত বদলে দেন তিনি। তখনও অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার রানটা ঠিকঠাকই ছিল, ১০ ওভারে তারা করেছিল ৮০ রান।

শ্রেয়াস আয়ার আউট হওয়ার পর ভারতের ডাগ-আউটে বসে থাকা রাহুল দ্রাবিড়ের স্মৃতিতে সম্ভবত বারবার ২০০৩ নাড়া দিয়ে গেছে। সেবার তিনি ছিলেন ক্রিকেটার, বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এবার তিনি কোচ, এখনও কি তেমন হবে? ৮১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ওই দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করা খুব অস্বাভাবিকও নয়।

কিন্তু এরপরই তাকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। এ দুজনের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটির ফাঁকে বিরাট কোহলি তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। পুরো বিশ্বকাপজুড়ে দুর্দান্ত খেলা এই ব্যাটারের রান প্রায় ছিল আটশ হওয়ার পথে, বাকি আর কারো নেই ছয়শও।

তবে কোহলিকে থামতে হয় অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে। প্যাট কামিন্স আগের দিন নিজের চাওয়া জানিয়েছিলেন, ‘চুপ’ করিয়ে দিতে চান এক লাখ ত্রিশ হাজার মানুষকে। কোহলিকে আউট করার পর বাস্তব অনুভূতিটাও পেয়ে যান তিনি। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে আউট হয়ে যান কোহলি, রাহুলের সঙ্গে তার ৬৭ রানের জুটি ভাঙে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কোটি ভারতীয়ের হৃদয়ে কান্না, ‘হেক্সা’ জিতলো অস্ট্রেলিয়া

আপডেট সময় ১০:০৫:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

আহমেদাবাদে এক লাখ ত্রিশ হাজার মানুষের নীল সমুদ্রে কি কেউ বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে? কে জানে! নয়তো সব কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যাবে কেন। কেন চিৎকার-উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ফেটে পড়বে না মোতেরা।

কেন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে হবে না নীল উৎসব। উত্তরটা বোধ হয় এতক্ষণে আপনারও জানা- ভারত বিশ্বকাপটা জিততে পারেনি।
উৎসবের শহর এখন সিডনি। আহমেদাবাদ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের মেলবোর্ন-অ্যাডিলেড-পার্থ। অথবা পুরো অস্ট্রেলিয়ায় এখন আনন্দের জোয়ার। এখন তাদের ‘হেক্সা’ মানে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয় উদযাপনের সময়। ভারতকে রোববার তারা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে হারিয়ে দিয়েছে ছয় উইকেটে। ওখানে সেঞ্চুরি করে নায়ক ট্রাভিস হেড।

মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভের পথ ধরে চলা মানুষগুলোর এখন মনে বিষাদ, কলকাতা নিউমার্কেটের অবস্থাও হয়তো তাই। ধর্মশালার পাহাড়ি মায়াও কি আজ বিষাদ? সম্ভবত চেন্নাইয়ের সমুদ্রের কাছেও তাই। অথচ আজ রঙ লাগার কথা ছিল আলোর।

অথচ আজ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম হওয়ার কথা ছিল রঙিন। নয় শহর হয়ে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে, কোথাও থামতে হয়নি রোহিত কোহলিদের; একটি ম্যাচেও হারেনি তারা। তাদের থামতে হলো এমন এক জায়গায় এসে- নীল উৎসবের সব প্রস্তুতিই নেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল যেখানে। এখন সম্ভবত রোহিত মাথাটা আকাশে তুলে করে একটা প্রশ্নই বারবার করছেন- প্রকৃতি কেন এত নিষ্ঠুর!

প্যাট কামিন্সম শ্যাম্পেইন হাতে নিয়ে উৎসব করবেন যখন, তার হয়তো তখন এক আকাশে স্বস্তি। পেসার, অধিনায়কত্ব কি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এখন হয়তো কোথাও একটা বিশ্বকাপ ছবি টাঙিয়ে রাখতে পারবেন তিনি।

এসবের আঁচ অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল টস হেরে করা ভারতের ব্যাটিংয়ের সময়টাতেই। প্রতাপশালী, দাপুটে ব্যাটিং লাইন-আপ ফিকে হয়ে আসে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স আর জশ হ্যাজিলউডের সামনে। পিচটাকে ঠিকঠাক বুঝে এমন সব বল ছুড়লেন তারা, বেশির ভাগ ভারতীয় ব্যাটার উত্তরই খুঁজে পেলেন না।

এর শুরুটা হয়েছিল শুভমন গিলকে দিয়ে। স্টার্ককে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে আসেন মিড অনে দাঁড়ানো এডাম জাম্পার হাতে। ক্ষুব্ধ চোখজুড়া নিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরতে হয় ৭ বলে ৪ রান করে। যেটি হতে পারতো আরও আগেই। কোনো রান করার আগেই স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তিনি, স্রেফ বলটা ক্যারি করেনি বলে বেঁচে যান তখন।

গিলকে হারানোর ক্ষত পরে আরও বাড়ে রোহিত শর্মাও পাওয়ার প্লের ভেতরই ফিরে যাওয়ার পর। ম্যাক্সওয়েলকে তুলে মারতে গিয়ে বল তুলে দেন অনেকটুকু উপরে, কাভার থেকে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ট্রাভিস হেড। ব্যাট হাতে পরে আর এর আগে এই ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের ভাগ্যও সম্ভবত বদলে দেন তিনি। তখনও অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার রানটা ঠিকঠাকই ছিল, ১০ ওভারে তারা করেছিল ৮০ রান।

শ্রেয়াস আয়ার আউট হওয়ার পর ভারতের ডাগ-আউটে বসে থাকা রাহুল দ্রাবিড়ের স্মৃতিতে সম্ভবত বারবার ২০০৩ নাড়া দিয়ে গেছে। সেবার তিনি ছিলেন ক্রিকেটার, বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এবার তিনি কোচ, এখনও কি তেমন হবে? ৮১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ওই দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করা খুব অস্বাভাবিকও নয়।

কিন্তু এরপরই তাকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। এ দুজনের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটির ফাঁকে বিরাট কোহলি তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। পুরো বিশ্বকাপজুড়ে দুর্দান্ত খেলা এই ব্যাটারের রান প্রায় ছিল আটশ হওয়ার পথে, বাকি আর কারো নেই ছয়শও।

তবে কোহলিকে থামতে হয় অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে। প্যাট কামিন্স আগের দিন নিজের চাওয়া জানিয়েছিলেন, ‘চুপ’ করিয়ে দিতে চান এক লাখ ত্রিশ হাজার মানুষকে। কোহলিকে আউট করার পর বাস্তব অনুভূতিটাও পেয়ে যান তিনি। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে আউট হয়ে যান কোহলি, রাহুলের সঙ্গে তার ৬৭ রানের জুটি ভাঙে।