বরগুনা: বরগুনায় চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম পনু হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৬ আসামিকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন বরগুনার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (৪ জুলাই) হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ববরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে নিহত পনুর স্বজন ও আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের শতাধিক নারী পুরুষ।
জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন শাখার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম পনুকে আকাইদ হোসেন ঠাণ্ডা ও মোতাহার মৃধা বাহিনী এ বছর ২ মে রাতে তার নিজ বাড়িতে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। কিছু সংখ্যক আসামি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে ৬ সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পায়।
নির্ধারিত সময় শেষে মঙ্গলবার বরগুনার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এজাহারভুক্ত আসামি মাহবুব, আনোয়ার, মোশাররফ, সাব্বির, ইলিয়াস, মন্নান ও আবদুল হক উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত মাহবুবের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
অন্য ৬ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। একই আদালতে আইনজীবী আবদুল মোতালেব মিয়া আসামি নুরুন নবী, আল আমিন, আবদুস সালাম ও এলাহীর জন্য জামিনের আবেদন করলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ওই একই মামলার আসামি মোতাহার মৃধা, আবু সালেহ, মো. রাজু, নিজাম গাজী, সুমী, সালমা, শাহানা ও শিউলির পক্ষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক মঙ্গলবার হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করলে নারী বিবেচনায় সুমী, সালমা, শাহানা ও শিউলিকে জামিন দিয়ে অন্য আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
অপরদিকে নিহত পনুর স্বজন ও এলাকাবাসী পনু হত্যার বিচার ও হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন পোস্টার ব্যানার খুনিদের ছবি সম্বলিত শহরে ও কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।
নিহত পনুর স্ত্রী মারজিয়া আকতার ছবি বলেন, আমার স্বামীকে ঠাণ্ডা ও মোতাহার মৃধা বাহিনী নির্মমভাবে আমার চোখের সামনে কুপিয়ে ও পিটিয়ে সমস্ত শরীর ক্ষত বিক্ষত করে হত্যা করেছে। আমার স্বামী পানি পানি বলে চিৎকার করলে মোতাহার মৃধা ও কুদ্দুস আমার স্বামীর মুখে প্রস্রাব করে দেয়। এর আগে ২০১৮ ও ২০২১ সালে ওই একই আসামিরা আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। আল্লাহ রক্ষা করেছেন। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তিনি আরও বলেন, হত্যা মামলার আসামি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হয়ে জামিনে গিয়ে উল্লাস করে। আমাকে ইঙ্গিত করে নোংড়া কথা বলে। আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আসামিরা আমাকে আমার ছেলে মেয়েকে হত্যা করতে পারে।
বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বলেন, একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ থাকুক না কেন দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারাই যথেষ্ট। ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিতে পারবেন। কোনো বাধা নেই। কিন্তু সেশন ট্রায়াল মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিলে সারা দেশে ম্যাসেজগুলো ভাল যায় না।
তিনি আরও বলেন, মামলার মূল নথি জেলা ও দায়রা আদালতে। উপনথিতে কীভাবে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিয়েছেন তা আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে উপনথি তলব দিয়ে এনে উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আবদুল মোতালেব মিয়া বলেন, দুটি আদালতে আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করেছি। জেলা ও দায়রা আদালত ৪ জন নারীকে জামিন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ২মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের পাকুরগাছিয়া এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ইউপি সদস্য পনুকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।