ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং শক্তি হারিয়ে শঙ্কা কেটেছে, স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। তবে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরতিহীন বৃষ্টি ঝড়েছে রাজধানীতে। সেই বৃষ্টির প্রভাব এখনও রয়ে গেছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, বেশিরভাগ এলাকার জলাবদ্ধতার অবসান ঘটেছে। কিছু কিছু এলাকায় জলবদ্ধতা পরিস্থিতি থেকে লোকজনকে মুক্তি দিতে কাজ চলছে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, গ্রিন রোড, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, জিগাতলা, পুরান ঢাকা, মালিবাগ, বাড্ডা, বসুন্ধরা, বনশ্রী, খিলক্ষেত, উত্তরখান, কালশি, দক্ষিণখান, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু কিছু অলিগলিতে এখনও জলাবদ্ধ অবস্থা দেখা গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করতে ড্রেনগুলোতে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ ঠিক করার চেষ্টা করছেন।
কল্যাণপুর এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, গতকাল রাতে যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম তখন দেখেছি রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা। আজ সেই জলাবদ্ধতা কিছুটা কমে গেলেও, অলিগলিতে এখনও পানি রয়ে গেছে। যে কারণে চলাচল করা যাচ্ছে না। আমার বাসার সামনে বলতে গেলে এক হাঁটু পানি। সেই পানি মাড়িয়েই যাতায়াত করছে মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে আছে কিন্তু সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ দেখলাম না। সেখানে ডবল ভাড়া দিয়ে অনেকে রিকশায় উঠে জলাবদ্ধ এলাকা পাড় হচ্ছে।
রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন গুপিপাড়া এলাকায় দেখা গেছে আশপাশের সব সড়কে পানি নেমে গেলেও গুপিপাড়ার ভেতরের সড়কগুলোতে প্রায় হাঁটু পানি। এলাকার দোকানদার গফুর মিয়া বলেন, সকালে আরও বেশি জলাবদ্ধতা ছিল। এখন কিছুটা কমে তাও হাঁটু পানি রয়ে গেছে। সব মানুষ কাপড় গুটিয়ে অথবা রিকশায় চলাচল করছে। সিটি করপোরেশনের লোক এসেছিল, তারা বলেছে দুপুরের মধ্যে পানি নামানোর কাজ তারা করবে।
সেই পথে পানি মাড়িয়ে কাজে বের হওয়া তৌহিদুল ইসলাম নামে এক এলাকবাসী বলেন, এক হাতে ব্যাগ, অন্য হাতে প্যান্ট ধরে পানির মধ্যে দিয়ে আসলাম। এলাকাবাসী এই জলাবদ্ধতার কারণে খুব কষ্টে আছে, দোকানিরা পানির কারণে এখনও দোকান খুলতে পারেনি। যাওয়া আসা করা খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে রিকশা চালকরা ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা আদায় করে নিচ্ছে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সারারাত ধরে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন পরিষ্কারের কাজ করেছে। ফলে সকাল থেকেই অনেক এলাকায় পানি নেমে গেছে। তবে এখনও অনেক অলি-গলি জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ধীরে ধীরে সব অলি-গলিতেই আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করবে। তবে অনেক স্থান আছে যেখানে পানি নামার কোনো জায়গা নেই। মূলত সেসব স্থানে এখনও জলবদ্ধতা রয়ে গেছে। আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে যেন সবাই এ বিষয়ে কাজ করে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি, আশা করা যাচ্ছে দুপুরের পরেই সব জায়গার জলবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খিলগাঁও এলাকায় পানি নিষ্কাশন কাজে নিয়োজিত সুপারভাইজার আইয়ুব আলী বলেন, অধিকাংশ স্থানেই জলাবদ্ধতা কমে গেছে। তবে কিছু কিছু এলাকার অলি-গলিতে জলবদ্ধতা আছে। সেগুলোর পানি নিষ্কাশনে ড্রেনের মুখ খুলে পানি নামাতে আমরা কাজ করছি। এমন জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিন ধরে ডিএসসিসি এলাকায় হয়নি। কিন্তু গত দিনের বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে এই সমস্যা হয়েছে।
এছাড়া লোকজন বিচার বিবেচনা ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের ছোট, বড় জিনিস রাস্তায় ফেলে, মূলত সেগুলো গিয়ে ড্রেন বন্ধ হয়ে থাকে।পানি নামতে পারে না। তবে আমরা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি অন্যান্য এলাকার মতো অলি-গলির জলাবদ্ধতাও দুপুরের পরপরই দূর করতে পারবো।