রানওয়ে, হাম্প ওয়াগন বা মৃত্যুর চাকা। এগুলো ‘আই পপি’ নামের অ্যামিউজমেন্ট পার্কের ৩৭টি আকর্ষণের অন্যতম। ইতালির ব্রুনো ফেরিন নিজের হাতে সেগুলো গড়ে তুলেছেন।
ব্রুনোর বয়স এখন ৮৫। প্রায় পাঁচ দশক আগে তিনি সেখানে প্রথম দোলনা বসিয়েছিলেন। ব্রুনো বলেন, ৫০ বছর ধরে আমি যা কিছু গড়ে তুলেছি, প্রতিবার এখানে এসে সে সব দেখে খুব আনন্দ হয়। আমি আমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি, নিজের জীবন সম্পর্কে এমনটা বলতে খুব ভালো লাগে।
ব্রুনোর পার্কের বৈশিষ্ট্য হলো, সেখানকার রাইডগুলো চালাতে বিদ্যুৎ লাগে না। পদার্থবিদ্যার নিয়ম ও মানুষের পেশিশক্তি দিয়েই সেগুলো চলে। পার্কের সর্বশেষ সংযোজন নাগরদোলা। টেলিভিশনে নাসার মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দেখে তার মাথায় আইডিয়া এসেছিল।
ব্রুনো ফেরিন বলেন, এই নাগরদোলা সাইকেলের সাহায্যে চলে। দর্শকদেরই সেই সাইকেল চালাতে হয়। প্যাডেলে চাপ দিলেই নাগরদোলা ঘোরে। সেই চাপ যত দ্রুত হয়, সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স ততই বাড়ে। তখন বসার সিট কেন্দ্র থেকে আরও পেছন দিকে চলে যায়।
অনেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক যখন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়ছে, তখন ব্রুনো এই বয়সেও ভবিষ্যতের জন্য আরও পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, জ্বালানির মূল্য মারাত্মক বেড়ে গেছে। তাই ভাবছি পার্কের প্রত্যেকটি যন্ত্রের মধ্যে ডায়নামো লাগাবো। সেগুলোর মুভমেন্টের মাধ্যমে শক্তির উৎপাদন করাই আমার পরিকল্পনা।
প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার দর্শক পার্কে আসেন। ব্রুনোর মতে, গরিব হোক বা বড়লোক– সবারই আমোদের অধিকার রয়েছে। দর্শকরা কখনও এমন মনোভাবের কারণ জানতে চান। ব্রুনো বলেন, বছরের শেষে হিসেব করে যদি দেখি মাত্র এক ইউরো মুনাফা হয়েছে, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। সবাই এই কনসেপ্ট না বুঝলেও আমার জন্য যথেষ্ট।
পার্কের দর্শকদের বেশিরভাগই ব্রুনোর রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করেন। ফলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হয়। ৮৪ বছর বয়স হলেও ব্রুনো সব কাজে হাত লাগান। তার মতে, নিজের পছন্দের কাজ আজও তার তারুণ্য ধরে রেখেছে। ব্রুনো বলেন, এটা সত্যি সুন্দর জীবন। নিজের মর্জি অনুযায়ী ঠিক করি আজ কী করব। দারুণ, তাই না? এটাই জীবনের কাব্য।