চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই ‘শান্তি ফর্মুলা’ বাস্তবায়নে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনকলে জেলেনস্কি এই সহায়তা কামনা করেন।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ‘শান্তি ফর্মুলা’ বাস্তবায়নে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি একথা বলেন।
আল জাজিরা বলছে, সোমবার মোদি-জেলেনস্কির কথোপকথনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন একদিকে ভারত মস্কোর সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়ন সীমিত করার জন্য নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করছে।
জেলেনস্কি টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি এবং দেশটির সফল জি-২০ সভাপতিত্ব কামনা করেছি। এই প্ল্যাটফর্মেই আমি শান্তি ফর্মুলা ঘোষণা করেছিলাম এবং এখন সেই ফর্মুলার বাস্তবায়নে আমি ভারতের অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছি।’
জেলেনস্কি গত মাসে গ্রুপ অব ২০ বা জি-২০ এর প্রধান অর্থনীতিগুলোকে যুদ্ধের অবসানের জন্য ইউক্রেনের ১০-দফা শান্তি ফর্মুলা গ্রহণ করতে বলেছিলেন। আর চলতি মাসেই ভারত এক বছরের জন্য জি-২০-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে।
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ফোনলাপে দুই নেতা সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ তুলে ধরার পাশাপাশি ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের প্রধান অগ্রাধিকারগুলো ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের জন্য মোদি তার আহ্বানকে ‘দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন’ এবং যেকোনো শান্তি প্রচেষ্টার জন্য ভারতের সমর্থন থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
অবশ্য রাশিয়া-ইউকেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান বেশ বিতর্কিত। যুদ্ধ শুরুর পর দশ মাস পেরিয়ে গেলেও ভারত এখনও স্পষ্টভাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করেনি। এছাড়া ইউক্রেনে রুশ হামলার পরই চীনের পরে রাশিয়ার তেলের বৃহত্তম ক্রেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত।
যদিও মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোতে রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি পণ্যগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হলেও চলতি মাসে ভারত পশ্চিমা দেশগুলোর বেঁধে দেওয়া ৬০ মার্কিন ডলারের ক্যাপের নিচে অশোধিত তেল কিনেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়াকে ‘অবিচলিত এবং সময়-পরীক্ষিত অংশীদার’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
রয়টার্স নিউজ এজেন্সি গত মাসে জানিয়েছে, মস্কো ভারতকে নিজের প্রয়োজনীয় ৫০০ টিরও বেশি পণ্যের একটি তালিকা পাঠিয়েছে। যার মধ্যে গাড়ি, বিমান এবং ট্রেনের যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য পণ্য রয়েছে, কারণ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে চাপে ফেলেছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ভারতও ক্রেমলিনকে ভারতীয় পণ্যগুলোর একটি তালিকা পাঠিয়েছে। মূলত নয়াদিল্লি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে চাইছে, কারণ দেশটি এখন রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে।