আগের দিন নেইমারের কান্নাভেজা বিদায় দেখেছে বিশ্বকাপ। সেটিও চোখ ভিজিয়েছে আরও অনেকের। তবে বড় একটা পার্থক্য তো আছেই। নেইমারের ওই কান্নায় যত না ব্যক্তিগত দুঃখ, তার চেয়ে বেশি দলীয় ব্যর্থতার শোক। রোনালদোর কান্নাতেও দলীয় ব্যর্থতা আছে, তবে তা অনেক বেশি ব্যক্তিগত। উপেক্ষা আর অপমানের জবাব দিতে না পারার যন্ত্রণা, ক্যারিয়ারের একমাত্র অতৃপ্তি ঘোচাতে না পারার দুঃখ।
ফুটবল থেকে যা পাওয়া সম্ভব, তার সবই পেয়েছেন। শুধু বিশ্বকাপটা ছাড়া। লিওনেল মেসি সম্পর্কে যতবার এ কথা বলা হয়েছে, রোনালদো সম্পর্কে তার এক শ ভাগের এক ভাগও নয়। কারণ, মেসির আর্জেন্টিনা বরাবরই বিশ্বকাপ জয়ের দাবি নিয়ে খেলতে আসে, রোনালদোর পর্তুগাল তা নয়। তারপরও মেসির আগেই মহাদেশীয় শিরোপা জিতেছেন রোনালদো। এই বিশ্বকাপটাও পর্তুগাল জিততে পারে বলে বিশ্বাস ছিল তাঁর। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যখন এই ঘোষণা দিচ্ছেন, তখন রোনালদো কল্পনাও করেননি, এই বিশ্বকাপ তাঁর এত দিনের চেনা পৃথিবী এমন ওলটপালট করে দেবে।
ক্লাব ফুটবলে প্রথমবারের মতো দলে অপরিহার্যতা হারানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে কিছুদিন আগেই। কিন্তু এটা তো পর্তুগাল, এটা তাঁর দল। শুধু তো আর অধিনায়ক নন, দেশের ফুটবল ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড়ও। সেই দলে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, তাঁকে তুলে নেবেন কোচ, প্রথম একাদশেই রাখবেন না—এটা মেনে নেওয়া যে কারও জন্যই কঠিন। আর তিনি তো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, অহংবোধই যাঁকে মাদেইরার পর্ণকুটির থেকে তুলে এনেছে রাজপ্রাসাদে। তিনি কীভাবে তা মানেন!
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সবকিছুই যে খবর, তা বোঝাতে ব্রুনো ফার্নান্দেজ এই বিশ্বকাপের আগেই বলছিলেন, মিডিয়ার কাজই হলো যাঁকে নিয়ে মানুষের বেশি আগ্রহ, তাঁকে নিয়েই পড়ে থাকা। তা রোনালদোর চেয়ে বেশি আগ্রহ আর কাকে নিয়ে! ইনস্টাগ্রামে প্রথম মানুষ, যাঁর ৫০ কোটি ফলোয়ার। এই বিশ্বকাপেই দেখুন না! প্রতিটি ম্যাচেই তো সংবাদ শিরোনাম রোনালদো। ম্যাচের আগেও। এক এক করে আসুন:
ঘানার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই রেকর্ড। এর আগে শুধু মার্তাকেই পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করতে দেখেছে বিশ্বকাপ, কোনো পুরুষ ফুটবলারকে নয়।
উরুগুয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচেও তো আলোচনায় সেই রোনালদোই। ব্রুনো ফার্নান্দেজের ক্রসে হেড করতে লাফিয়ে গোলের উদ্যাপন। যে গোল আসলে তাঁর নয়।