চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারি সহ বিভিন্ন সেক্টরের জনবল সংকটে ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি নিজেই এখন অসুস্থতায় ভুগছে। ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালটিতে প্রকৃতপক্ষে জনবল রয়েছে মাত্র ১০০ শয্যার। এর ফলে ভোলা জেলার প্রায় ২২ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ভাবে।
ভোলা সদরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি ২০১৯ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেই ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল।
৬ বছরেও হাসপাতালটির শূন্য পদে চিকিৎসক-নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত এ জেলার কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, জেলার প্রায় ২২ লাখ মানুষের মধ্যে ১৭ লক্ষ মানুষ সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। অথচ সেখানে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মাচারিসহ শূন্য রয়েছে ৭৪টি পদ। এর মধ্যে ৭টি সিনিয়র কনসালটেন্ট, ১০টি জুনিয়র কনসালটেন্ট, ৩টি আর,এস/আর,পি/আরএমও, ৪টি এ্যানেসথেটিষ্ট, ১টি রেডিওলজিষ্ট, ১টি মেডিকেল অফিসার, ৩টি ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার, ৫টি সহকারী সার্জন/সমমান, ৯টি রেজিষ্টার/সহকারী রেজিষ্টার ও ১টি এমও,(ইউ/হোমিও/আয়ু:)সহ ৪৪টি প্রথম শ্রেনীর পদ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, সৃজনকৃত ৯২টি পদের মধ্যে ১টি সেবা তত্ত্বাবধায়ক, ১টি উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক, ২৬টি সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ও ৬টি মিডওয়াইফারীসহ দ্বিতীয় শ্রেনীর মোট ৩৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের ২টি, বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের ১টি, সদর উপজেলার ১১টি, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২১টি, দৌলতখান উপজেলায় ২২টি, খায়ের হাটে ৭টি, লালমোহন উপজেলায় ১৯টি চরফ্যাশন উপজেলায় ১২টি, তজুমদ্দিন উপজেলায় ৭টি, মনপুরা উপজেলায় ৮টি ও দক্ষিণ চর আইচায় ৪টিসহ মোট ১১৪টি পদ শূন্য রয়েছে।
এদিকে, ১০০ শয্যার পুরাতন ভবনে প্রতিদিন গড়ে ৩৬০ জন করে রোগী ইনডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু। শীত মৌসুমে চলমান শৈত্য প্রবাহের কারণে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শত শত শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ২৫ শয্যার শিশু ইউনিটে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় বিপুল সংখ্যক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বারান্দার মেঝেতে। একেক বেডে রাখা হচ্ছে ৪-৫ জন করে শিশু। চিকিৎসক-নার্সরা এত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর মেঝে ও এক বেডে একাধিক শিশুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে সংক্রমিত হচ্ছে নতুন নতুন রোগে। এতে বাড়তি বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। পাশেই বহুতল ভবন রেখে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা দেয়ায় ক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনরা। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল সংকট দূর করে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফী জানান, ইতিমধ্যেই চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ ১৭ জনকে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। তারা যোগদান করলে হাসপাতালে জনবল সংকট অনেকটাই নিরসন হবে। তবে, সংকটের মধ্যেও হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে সবাই সচেষ্ট রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা: মু: মনিরুল ইসলাম বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পদায়নকৃতরা যোগদান করলে তাদেরকে দিয়েই হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, এ হাসপাতালের ইনডোরে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ ও আউটডোরে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।