কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের এক মুর্তিমান আতঙ্কের নাম নবী হোসেন (নবী ডাকাত)। তার বিশাল সম্রাজ্য প্রসারিত করতে একটি গ্রুপ তৈরী করে নবী হোসেন। যে গ্রুপটি ARA.( আরকান রোহিঙ্গা আর্মি) নামে পরিচিত। গ্রুপটি প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা দেবে অসহায় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মগজ ধুলার করে প্রায় ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা যুবকদের সংগ্রহ করে পার্শ্ববর্তী গহীন জঙ্গলে তুতারদিয়া নামক জায়গা নিয়ে গিয়ে অস্ত্র ও ট্রেনিং প্রশিক্ষণ দেয় নবী হোসেন।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে নবী হোসেন পাকিস্তানে গিয়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ চালানো ও ট্রেনিং সহ নানা রকমের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছিল। এর পর নবী হোসেন পাকিস্তান থেকে মালেশিয়া গিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের নিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করেন ২০১৮ সালে। নবী হোসেন বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের আরেক স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ডার হাসিমের সাথে কোরআন ধরে শপথ গ্রহণ করে আরসা ও নবী হোসেন একসাথে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা নিয়ে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এসেই নবী হোসেন মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবাধে ইয়াবা, আইস, সিগারেট, গরু ও অস্ত্র বাংলাদেশে এনে চোরাচালানের বিশাল এক সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। সীমান্ত পাড়ে চোরাচালান সুবিধা নিতে নবী হোসেন বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার কিছু সন্ত্রাসীদের তার দলে নিয়ে আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায়।
তখন প্রতিনিয়ত নবী হোসেন বাংলাদেশের প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে চোরাচালানের মাত্রা বহু মাত্রায় বেড়ে যায়।
অভিযোগ আছে, দেশের জন্য হুমকি হলেও নবী হোসেন ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের ‘টাকার মেশিন’। সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা নবীকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে কয়েকশো কোটি টাকা নিয়েছেন। এর আগে তাকে কয়েকবার আটক করেও ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক মন্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ডে বিস্মিত হয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাও।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্কার তথ্য মতে, নবী হোসেন বাহিনী সরাসরি মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর নির্দেশে পরিচালিত হয়। এ কারণে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মিয়ানমারের সীমান্তে গড়ে ওঠা ২৮টি ইয়াবা কারখানা ও ভয়ংকর মাদক আইসসহ যাবতীয় চোরাচালান নবীর নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিয়েছে। সেখান থেকে নবী মাসে অন্তত এক থেকে দুই শত কোটি টাকা আয় করেন মাসে। আয়ের একটি অংশ দেওয়া হয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে। বাকি টাকা দিয়ে নবী তার বাহিনীর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। রোহিঙ্গা সূত্র বলছে, নবী হোসেন হয়ে ১২ হাজারের মতো রোহিঙ্গা মাদক পাচারে জড়িত এবং ৭ থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গা সামরিক শাখায় নিয়োজিত রয়েছে। নবী হোসেন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমি নবী হোসেনকে কখনো দেখিনি। তবে তার যে পরিমাণ অনুসারী ইয়াবা পাচারকারী রয়েছে, নবী যদি আমার এলাকায় চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ায় সে চেয়ারম্যান হয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে নবী হোসেন বাহিনীর হাতে ৫ শতাধিক অস্ত্র ছিল। এখন তা বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে।
সাম্প্রতিক ৩১ই আগস্ট নবী হোসেন কে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এপিবিএন গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছিল।
তার আগে বিজিবি নবী হোসেন কে ধরিয়ে দিতে ১০ লক্ষ টাকা পুরুস্কার ঘোষণা করেছি। সেই ভয়কঙ্কর সন্ত্রাসী সামান্য কিছুদিন জেল কেটে পুনরায় তার অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান। এদিকে নবী হোসেন কে মুক্তি দেওয়ার পর দেশের শীর্ষ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা নবী হোসেনের জামিনে বের হওয়া কে একটি অসনি সংকেত হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় রোহিঙ্গারদের সাথে কথা বলে আরও জানাগেছে, এমন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কে বাংলাদের আদালত জামিন দেওয়ার প্রতিনিয়ত তারা আতঙ্কিত। তাই সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দাদের কাছে নবীন হোসেন কে পুনরায় গ্রেপ্তার করে জেলে রাখার আহবান জানিয়েছেন একাধিক রোহিঙ্গা।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, নবী হোসেনের অন্যতম প্রধান শক্তি হচ্ছে, তার দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডার জুবাইর, মো.ওমর, সহ আরও বহু রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা সুত্রে জনাগেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের ইয়াবা, আইস, স্বর্ণের বার, গরু পাচার ও অস্ত্রের লেনদেনের টাকা পয়সার হিসাব ও রসদ যোগানদাতা হিসাবে রোহিঙ্গাদের আরেক আতঙ্ক নসরুল্লাহ ওরপে নুরুল আমিন কাজ করছে।
নিরিহ রোহিঙ্গারা নবী হোসেনের ত্রাসের রাজত্বের অবসান চেয়ে শীঘ্রই নবী হোসেন কে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।