কৃষকদের কৃষি আবহাওয়াবিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পূর্বাভাস জানাতে রাজবাড়ী জেলার ৪২ টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থাপন করা হয় আবহাওয়া তথ্য বোর্ড, স্বয়ংক্রিয় রেইন গেজ মিটার ও সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল। তবে স্থাপনের সাত বছরেও এ প্রযুক্তির কোন সুফল পাওয়াতো দূরের কথা, এ সম্পর্কে জানেনইনা কৃষকরা। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে এসব যন্ত্রপাতি। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, নষ্ট যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের’ আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে স্থাপন করা আবহাওয়ার এসব যন্ত্রপাতি।
সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ডগুলো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে নামমাত্র স্থাপন করা হয়েছে। এ বোর্ড থেকে কৃষকদের নিয়মিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না। অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে তথ্য বোর্ড, সোলার প্যানেল ও রেইন গেজ মিটারগুলো। কোথাও কোথাও আবার খুলে রাখা হয়েছে। তথ্য বোর্ডে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আদ্রতার হার, বায়ুপ্রবাহ, দিনের আলো কতক্ষণ থাকবে ও ঝড়ের পূর্বাভাসসহ ১০টি তথ্য ছক আছে। এই বোর্ড থেকেই তিন দিন আগের ও তিন দিন পরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারবেন কৃষকরা। কিন্তু এসব বোর্ড স্থাপনের পর থেকেই নেই কোনো কার্যক্রম।
সদরের আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় ভবনের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড। তবে বোর্ডে কোনো তথ্য হালনাগাদ করা নেই। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য নিচে ডানপাশে কৃষি কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর থাকার কথা থাকলেও, তা নেই।
বসন্তপুর ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র।
কৃষকরা জানান, স্থাপনের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের আবহাওয়া তথ্য বোর্ডের চাকা একদিনও ঘোরেনি। এখান থেকে কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর ফসলের ক্ষতি হলেও এ বোর্ড কোনো কাজে আসছে না। ফলে সরকারের এ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে করে একদিকে যেমন কৃষকরা এ প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারের অর্থ। স্থাপিত বোর্ডগুলো সংস্কার করে দ্রুত তথ্য হালনাগাদ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আলীপুর ইউনিয়নের কৃষক খোকন খান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় দেয়ালে শুধু বোর্ডই দেখি। তবে এ বোর্ড থেকে আজ পর্যন্ত কোন তথ্য পাইনি। এ বোর্ড কিভাবে কাজ করে বা কৃষকদের কি উপকারে আসে তা আমার জানা নেই।
আরেক কৃষক আহম্মদ আলী বলেন, ঝড়-বৃষ্টিতে প্রতি বছরই আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু পরিষদ থেকে আগাম কোনো তথ্য পাই না। কৃষকদের মাঝে আবহাওয়ার আগাম তথ্য দেওয়ার জন্য সরকার এমন একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে, অথচ আমরা জানি না। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত জেলার একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা কাজী সিদ্দিকুর রহমান। তার বাড়ি সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামে। তিনি বলেন, কৃষকদের জন্য সরকারের এতোবড় উদ্যোগের কথা আমি আজও পর্যন্ত জানিইনা। আমি যেহেতু জানিনা, তাহলে অনেক কৃষকই এ সম্পর্কে জানেননা। কৃষকরাই যদি না জানেন, তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারের এ কাজ করে কি লাভ হলো?
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দেখছি ইউনিয়ন পরিষদের কৃষি আবহাওয়ার যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট। আমি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের বলেছি যন্ত্রগুলো মেরামত করে কৃষকদের উপকারে কাজে লাগাতে।
বসন্তপুর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অলোক মালাকার বলেন, এ যন্ত্রপাতি সম্পর্কে আমাকে কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে যন্ত্রগুলো এখন নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে কৃষকরা এর সুফল পাচ্ছেননা।
এসব যন্ত্রপাতি স্থাপনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে , তার কোন তথ্য দিতে পারেননি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের যন্ত্রগুলো সরাসরি প্রকল্পের মাধ্যমে বসানো হয়েছিল। যে কারণে স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলোনা। বর্তমানে যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো মেরামতের কোন বরাদ্দও আমাদের হাতে নেই। তবে নষ্ট যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।