বিশ্বে প্রতি মিনিটে স্বামী কিংবা পুরুষ সঙ্গী এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হন একজন নারী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আগামী ২৫ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’। জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া এই আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া বিবৃতিটিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘নারী-মেয়েশিশু-অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের প্রতি সহিংসতা দিনকে দিন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক ও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘণজনিত অপরাধ হয়ে উঠছে। আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রতি ১১ মিনিটে একজন নারী- মেয়েশিশু কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নিহত হচ্ছে। এসব হত্যার জন্য দায়ী ওই নারী বা মেয়ের পুরুষসঙ্গী অথবা পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। করোনা মহামারি ও তার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্বের দেশে দেশে নারীর প্রতি শারীরিক ও মৌখিক নিগ্রহ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।’
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নারীরা ব্যাপকহারে সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন আন্তোনিও গুতেরেস। নারীবিদ্বেষী ঘৃণামূলক বক্তব্য, যৌন হয়রানি, হেয় ও অপমানজক ইমেজ ব্যবহার করার মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা উস্কে দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘বিশ্বের মোট মানবসংখ্যার অর্ধাংশকে লক্ষ্য করে যে বৈষম্য, সহিংসতা ও নিগ্রহ চলছে, সেসব যে কোনো মূল্যে থামানো প্রয়োজন। কারণ এসব বৈষম্য ও সহিংসতার কারণে নারী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা তাদের জীবনকে গড়ে তুলতে পারছে না, তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। নারীদেরকে পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করার কারণে আমরা কাঙ্ক্ষিত ও টেকসেই বৈশ্বিক অগ্রগতি এখনও অর্জন করতে পারিনি।’
নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া এবং সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বেলায় সমাজের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সুশীল সমাজসহ সব পর্যায়ের নারী-পুরুষদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখন একটি জরুরি কাজ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
চলতি বছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের থিম ‘নারীর অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আওয়াজ তুলুন এবং অবস্থান নিন’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশে নারীর অধিকার আদায়ে তৎপর সংস্থাগুলোকে সরকার থেকে যে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার পরিমাণ আরও ৫০ বাড়ানোর আহ্বান জানান আন্তোনিও গুতেরেস।
‘এখন সময় এসেছে— একটি নতুন ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য নারী ও পুরুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং নারীর প্রতি যাবতীয় বৈষম্য-সহিংসতা-নিগ্রহকে ইতিহাসের বইয়ে পাঠানোর।’