রংপুরের মিঠাপুকুরে অবৈধভাবে ড্রেজার মেসিন দিয়ে উঠানো বালু পরিবহনে কৃষকের জমি দিয়ে রাস্তা না দেওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে বালু ব্যবসায়ির ইন্ধনে প্রায়,দুইতিন শত লোক কৃষকের বাড়ি ঘেরাও এবং ভাংচুর করে বলে জানা গিয়েছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ মিঠাপুকুর থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বুধবার (২৫-ডিসেম্বর) সকালে মিঠাপুকুর উপজেলার বলদিপুকুর এলাকার মমিনপুরে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষে ৬/৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান ,উপজেলার ০২ নং রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদিপুকুর আবাসন ব্যারাকের কোল ঘেঁষে প্রতিবছর ড্রেজার মেসিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে থাকেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং চিহ্নিত বালু ব্যবসায়ি বলদিপুকুর কোনাপাড়া গ্রামের মশিয়ার রহমান। মশিয়ার রহমান আওয়ামী লীগের দাপট আর প্রভাব বিস্তার করে বলদিপুকুর থেকে কোনাপাড়া যাওয়ার রাস্তা সহ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো ড্রেজার লাগিয়ে হুমকির মূখে ফেলে দিয়েছেন। এমনকি শতশত গ্রামবাসীর অভিযোগ বলদিপুকুর তৎ-সংলগ্ন এলাকাগুলোর শতশত বিঘা জমি মশিয়ার গং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারনে মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে। তাদের দাবি,আশেপাশের গ্রামীণ অবকাঠামো গুলো বালু উত্তোলনের কারনে মারাত্মক ক্ষতির পিছনে মশিয়ার গং দায়ি।
ভূক্তভোগীর অভিযোগ, তার স্বামী আব্দুর রশিদ একজন কৃষক মানুষ। কৃষি কাজের পাশাপাশি জীবিকার তাগিদে তিনি রংপুরের বাহিরে থাকেন। প্রায় তিনযুগ পূর্বে তিনি বগুড়া জেলা থেকে মমিনপুর এসে বাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীত্ব হন। আব্দুর রশিদের নিজের কোনো আত্মীয় স্বজন না থাকায় বালু ব্যবসায়ি মশিয়ার বালু পরিবহনে তার জমি জোরপূর্বক দখলে নেয়। এ ঘটনায় আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন থেকে তার জমিটি উদ্ধার করতে পারছিলেন না। কয়েক দফা বসার পর বুধবার (২৫-ডিসেম্বর) আব্দুর রশিদের স্ত্রী রাবেয়া বেগম স্থানীয়দের নিয়ে জমিতে গিয়ে বালু পরিবহনে বিধিনিষেধ করায় মশিয়ার গংয়ের সঙ্গে তর্কবির্তক শুরু হলে একপর্যায়ে মারামারি সংগঠিত হয়। এতে মশিয়ার গংয়ের চারজন সহ উভয় পক্ষে ৭ জন আহত হয়। জমিতে মারামারির জেরে মশিয়ার গং শতশত লোকজন ভাড়া করে আব্দুর রশিদের বাড়িতে হামলা এবং লুটপাট করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীর মেয়ে মমেনা বেগম জানান, ঘটনার সময়ে আমার ভাইয়ের স্ত্রী বাড়িতে ছিলো। শতশত লোক বাড়ি ঘেরাও করে রাখে এবং কয়েকজন বাড়িতে প্রবেশ করে হামলা এবং লুটপাট চালায়। মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হযরত আলী জানান, আমার বোনের জমি আওয়ামী লীগের লোকজন দখল করে রেখেছে। দলীয় আনুগত্যের বিষয়টি মাথায় রেখে বিবাদে যেতে পারছিনা। তিনি বলেন, বোনকে মারার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। এসময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি করি বলে কি বোনের বিপদে যেতে পারবোনা! আর কত ছাড় দিয়ে চলবো।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ি মশিয়ার রহমান বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করিনা। এসময় তিনি এক নেতার পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, উভয় পক্ষ দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বালু পরিবহনে রাস্তা না দেওয়ায় কৃষকের বাড়িতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান,অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব। বিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখা হবে।