কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা থেকে অপহরণের পর পেকুয়া নিয়ে লবণ শ্রমিক দানু মিয়া খুনের ঘটনায় অবশেষে শনিবার রাতে চকরিয়া থানায় মামলা রুজু হয়েছে। তবে নিহতের বোন জোসনা আক্তার ও পরিবার সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন, ঘটনার পর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, ভাইয়ের খুনের মামলার বাদী হবে বোন জোসনা আক্তার। কিন্তু শনিবার মামলা রুজু হওয়ার আগমুহূর্তে কাকতালীয় ভাবে মামলার বাদী করা হয়েছে নিহতের সাবেক স্ত্রী রুজিনা বেগমকে।
নিহত দানু মিয়ার বোন জোসনা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাই দানু মিয়াকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের কৌশলে মামলার এজাহার থেকে আড়াল করতেই মামলার বাদী বানানো হয়েছে নিহতের ডিভোর্সী স্ত্রী রুজিনা বেগমকে। অথচ আমার ভাই দানু মিয়াকে ৫ বছর আগেই রুজিনা বেগম ডিভোর্স দিয়েছেন। বর্তমানে রুজিনা বেগম কেনাখালী ছড়াপাড়া এলাকার আবদুস সালামের ছেলে মনির উদ্দিনকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই দানু মিয়া খুনের ঘটনায় মামলার বাদী হবার যোগ্যতা রুজিনা বেগমের নেই। মুলত রুজিনা আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে আমার ভাইয়ের খুনের মামলাটি তাদের (আসামিপক্ষ) কাছে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে মামলার বাদী হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, পারিবারিক ভাবে হওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার ১৪ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করি। ওই সময় দানুর স্ত্রী রুজিনা আমার সঙ্গেই ছিলেন। আমার দায়ের করা এজাহার থেকে চারজন আসামিকে বাদ দিতে বলেন থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভুইঁয়া। যাদের বাদ দিতে বলেছেন, তারা সবাই আমার ভাই খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায়, তাদের বাদ দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এ কারণে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে কৌশলে নিহতের ডিভোর্সি স্ত্রীকে বাদী সাজানো হয়েছে।
এ অবস্থায় দানু মিয়া খুনের ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার এবং ভাই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বোন জোসনা আক্তার।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়ার কলেজ ছাত্র জিহাদ হত্যা মামলার আসামি লবণ শ্রমিক দানু মিয়াসহ তিনজন গত ১০ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট) নির্দেশে স্থায়ী জামিনের জন্য আদালতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাদের বহনকারী গাড়ি গতিরোধ করে দানু মিয়া ও মুবিনকে অপহরণ পূর্বক পেকুয়া উপজেলা সদরে নিয়ে গিয়ে একটি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে দিনভর মারধর করে পেকুয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ফেলে যায়।
পরে খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় দানুমিয়া ও মুবিনকে সেখান থেকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দানুমিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় পটিয়া থানার ইন্দ্রপুল এলাকায় গাড়িতেই মারা যান দানুমিয়া।
স্ত্রীর দায়ের করা এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ওসি মো. মনজুর কাদের ভূইয়া। এজাহারে ১১ জন আসামির নামোল্লেখ করেছেন। পুলিশ আসামি গ্রেফতারে অভিযানে রয়েছে বলে জানান তিনি।