উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে ইউক্রেন দূরপাল্লার অস্ত্রের ব্যবহার করছে। এই অস্ত্রের ব্যবহারে আত্মরক্ষার জন্য মস্কোর লড়াইয়ের অধিকার আছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসোভের সঙ্গে বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ মন্তব্য করেন।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসোভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কিম জং উন। বৈঠকে তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা কিয়েভ কর্তৃপক্ষকে নিজেদের দূরপাল্লার আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে বাধ্য করেছে। এখন শত্রু পক্ষকে মূল্য দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত মস্কোর।
কিমের বরাত দিয়ে কেসিএনএ বলেছে, আধিপত্য বিস্তারের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের নেওয়া পদক্ষেপ থেকে নিজ সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় উত্তর কোরিয়ার সরকার, সেনাবাহিনী এবং জনগণ সর্বদা রুশ ফেডারেশনের নীতিকে সমর্থন করবে।
গত জুনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে কিম জং উন যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তার আওতায় সামরিকসহ সকল ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা। ওই সময় দুই দেশের মাঝে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ায় উভয় দেশের নেতাদের শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে নাটকীয়ভাবে উন্নত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে মস্কো এবং পিয়ংইয়ং। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ওই বৈঠকের পর রাশিয়ায় ১০ হাজারেরও বেশি গোলাবারুদের কন্টেইনারের পাশাপাশি স্ব-চালিত হাউইটজার এবং একাধিক রকেট লঞ্চার পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়াইয়ের জন্য উত্তর কোরিয়া ১০ হাজার সেনা মস্কোতে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার এই সেনা পাঠানোর বিষয়ে কিম-বেলোসোভের মাঝে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য জানায়নি কেসিএনএ।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, রাশিয়ায় ১০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে উত্তর কোরিয়া। এই সৈন্যরা বর্তমানে রাশিয়ার যুদ্ধের সম্মুখসারিতে মোতায়েন রয়েছে। কুরস্ক অঞ্চলে লড়াইরত রুশ সেনাদের বহরে যোগ দিয়েছেন তারা; যেখান থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়া।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অনুমতির পর চলতি মাসে দেশটির সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
পরে ইউক্রেনের সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় রাশিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় ওই হামলা চালানোর দাবি করে মস্কো।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নো কোয়াং চোলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলোসোভ। তিনি বলেছেন, কিম এবং পুতিনের স্বাক্ষরিত অংশীদারত্ব চুক্তি উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে।