দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পর জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টুইটারে নিজের অ্যাকাউন্ট ফিরে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ নভেম্বর) থেকে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের টুইটার অ্যাকাউন্ট সচল অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে রোববার (২০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্লাটফর্মের নতুন মালিক ইলন মাস্ক একটি জরিপ চালানোর পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুখ্যাত টুইটার অ্যাকাউন্টটি শনিবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
মূলত সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসের যাওয়ার জন্য আবার প্রার্থীতা ঘোষণা করার কয়েকদিন পরই হওয়া ওই জরিপে সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তার টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেন।
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক তার অ্যাকাউন্টে ২৪ ঘণ্টার টুইটার পোল শেষ হওয়ার পরপরই দেওয়া এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘লোকেরা কথা বলেছে। ট্রাম্পকে (টুইটারে) পুনর্বহাল করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভক্স পপুলি, ভক্স দেই’। মূলত এটি একটি ল্যাটিন প্রবাদ। যার অর্থ- ‘মানুষের কণ্ঠই ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর।’
এএফপি বলছে, প্রতিদিন ২৩৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারী টুইটার ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী (ট্রাম্পের) বিতর্কিত অ্যাকাউন্ট পুনঃস্থাপন করা হবে কিনা তা নিয়ে ভোট দিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জরিপে ৫১.৮ শতাংশ অ্যাকাউন্ট পুনঃস্থাপন করার পক্ষে এবং ৪৮.২ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতা চালাতে সমর্থকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে নিষিদ্ধ হন ট্রাম্প। ট্রাম্প সমর্থকদের সেদিনের সেই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন। এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভিত কেঁপে উঠেছিল।
এই ঘটনার পর ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হওয়া ওই অ্যাকাউন্টটিতে ট্রাম্পের প্রায় নয় কোটি ফলোয়ার ছিলেন। কিন্তু ক্যাপিটল হিলে হামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প উসকানি দিয়েছেন, এমন অভিযোগ তুলে টুইটার কর্তৃপক্ষ বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির অ্যাকাউন্ট চিরতরে বন্ধ করে দেয়।
তবে টুইটারে নিজের বন্ধ অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে গত বছরের অক্টোবরে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। অবশ্য এতে কোনো ফল হয়নি। এরপর সময় বদলেছে। বদলেছে ট্রাম্পের পরিকল্পনাও। অভিমানী ট্রাম্প গত কয়েক মাস ধরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নিয়ে কাজ করছেন।
এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিলে ইলন মাস্কের টুইটার কিনে নেওয়ার খবরেও নিজের অ্যাকাউন্ট নিয়ে ট্রাম্প ছিলেন আবেগহীন। সে সময় ট্রাম্পের টুইটারে ফেরা-না ফেরা নিয়েও বেশ গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। তবে অভিমানী ট্রাম্প সেসময় বলেছিলেন, তিনি আর টুইটারে ফিরবেন না। মালিকানা পরিবর্তনের পর যদি তার বন্ধ থাকা অ্যাকাউন্টটি খুলেও দেওয়া হয়, তবুও তিনি ফিরবেন না।
ট্রাম্পের ভাষায়, ‘আমি টুইটারে যাচ্ছি না। আমি ট্রুথ-এ থাকব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইলন টুইটার কিনেছেন কারণ তিনি এটিতে উন্নতি করতে পারবেন বলে আমি আশা করি। তিনি একজন ভালো মানুষ, কিন্তু আমি ট্রুথেই থাকতে যাচ্ছি।’
তবে জরিপের মাধ্যমে মাস্ক এখন তার অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার পর ট্রাম্প আবারও তার পুরোনো প্রোফাইলে সক্রিয় হবেন কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়। কারণ সামনের নির্বাচনের প্রচারণার সময় এই অ্যাকাউন্ট ও সেটির ফলোয়ার সংখ্যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
কে জানে, ট্রাম্প হয়তো সেটিও মাথায় রাখছেন।