চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাংগাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সরকারি ফির অতিরিক্ত টাকা না দিলে সেবা থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
একটি জমির খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ এক হাজার ১৭০ টাকা হলেও দলিলভেদে নেওয়া হয় ৮-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি এক হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকার বাইরে আর কোনো খরচ নেই।
সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, ভূমি সংক্রান্ত কোনো কাজে অনলাইনে অফিস থেকে আবেদন না করলে বা বাড়তি দেওয়া টাকার পরিমাণ কম হলে সারাদিন বসিয়ে রাখেন উপ-সহকারী কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলাম। এমনকি সকাল ৯টার পরিবর্তে তিনি অফিসে আসেন বেলা ১১টা বা দুপুর ১২টায়।
উপজেলার কয়নাপুর গোমস্তাপুর গ্রামের সোনারদী বলেন, ‘বাংগাবাড়ী অফিসের দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছে। সরকারি নীতিমালার বাইরে চুক্তি অনুযায়ী মোটা অঙ্কের ঘুস ছাড়া নামজারি হয় না। নামজারির জন্য মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। আমি একটি খারিজের জন্য এসেছি। সেরাজুল ইসলাম ৮ হাজার টাকা চেয়েছেন। পরে ৮ হাজার টাকা নিয়ে ২০ দিন পরে আমাকে খারিজ করে দিয়েছেন। এখন শুনছি একটি খারিজ বা নাম জারিতে খরচ এক হাজার ৭০ টাকা।’
স্থানীয় আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার একটি নামজারিতে ১৩ হাজার টাকা চেয়েছিলেন সেরাজুল। পরে আমি ১০ হাজার টাকা দিতে চাইলেও তিনি কাজ করে দেননি। এজন্য আমাকে ১১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে একটি নামজারি করতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পাশের একটি জমি খারিজ করে দেওয়ার নাম করে এক ব্যক্তির সঙ্গে ১৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করেছেন তিনি। তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েও গেছেন।’
বাংগাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনের চা দোকানি গোলাম রাব্বানি বলেন, ‘সেরাজুল ইসলাম সবসময় বেশি টাকা নেন। এজন্য এই অফিসে ঝামেলা লেগেই থাকে। কয়েকদিন আগেই সেরাজুলের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা এখানে এসেছিলেন। সেদিন থেকে আর অফিসে আসেন না সেরাজুল ইসলাম।’
এ বিষয়ে জানতে বাংড়াবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার বাড়িতে গিয়ে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালি গিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
গোমস্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এমন ঝামেলার কথা শুনে আমি বাংগাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম। কিছু সমস্যার সমাধান করে এসেছি। আরও কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পাপিয়া সুলতানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।