ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনীদের শাস্তি দাবি ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতকারী এনজিও মালিকের শাস্তি ও জামানত ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন দৈনিক আমাদের কন্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক-কে হুমকির প্রতিবাদে মঠবাড়িয়ায় মানববন্ধন দেশে ফিরেই মিজানুর রহমান আজহারীর স্ট্যাটাস ‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জনগণ অন্যতম সহায়ক শক্তি’ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না হলে রাজপথে আন্দোলন হবে : ১২ দলীয় জোট ভারতের অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা উচিত : সিলেটে মির্জা ফখরুল ‘সাড়ে ১৫ বছর শাসনকারীরা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদের সাজিয়েছে’ কুর্দি যোদ্ধাদের শেষ পরিণতির হুঁশিয়ারি এরদোয়ানের ‘১৫ বছরে চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন হয়েছে এখন সব ক্ষতির কারণ’

মাদকের ঘাড়ে ভর করে বাঁচার চেষ্টা দিল্লির আফতাবের

ভারতের দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়ালকার হত্যাকাণ্ড সব রহস্য যেন সামনে এসেও আসছে না। শ্রদ্ধার প্রেমিক আফতাব পুণাওয়ালা যে সব সত্য বলছেন না, পুলিশ এরই মধ্যে সেটা বুঝতে পেরেছে। 

খুনের পরে বান্ধবী শ্রদ্ধা ওয়ালকারের দেহ ৩৫ টুকরো করার সময়ে সে যেমন শীতল মস্তিষ্কে থাকার দাবি করেছে, জেরার সময়েও তেমনই হিসেব কষে আসল প্রশ্নগুলোর ভুল জবাব দিয়ে সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে চলেছে বল এখন মনে করছেন তদন্তকারীরা।যেমন- আফতাব এত দিন দাবি করে এসেছে, শ্রদ্ধার দেহাংশ সে রাত ২টার সময়ে বেরিয়ে জঙ্গলে ফেলে আসত। পুলিশের ধারণা দিল্লির বিভিন্ন জায়গাতে দেহাংশ ভরা প্যাকেট ফেলে এসেছে আফতাব। এ বিষয়টা সে স্বীকার করছে না।

দিল্লি পুলিশ তাই গতকাল শুক্রবার দিল্লির সব অংশের বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মানুষের দেহাংশ ভরা প্যাকেট দেখলেই যেন তা পুলিশকে জানানো হয়।

এদিকে আদালতে আর্জি জানিয়ে আফতাবের নার্কো পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছে দিল্লি পুলিশ। আদালত এ দিন সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরিকে নির্দেশ দিয়েছে, ৫ দিনের মধ্যে আফতাবের এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

তদন্তকারীরা মনে করছেন, এতে আফতাব যে অনেক মিথ্যা বলেছেন এখান থেকে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এত দিন আফতাব পুলিশকে বলে এসেছে, সংসার খরচ নিয়ে প্রাত্যহিক ঝগড়ায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে সে গলা টিপে বান্ধবীকে খুন করে ফেলার পরিকল্পনা করে।

এখন সে নতুন একটি তত্ব হাজির করেছে পুলিশের কাছে। আফতাব এখন বলছে, যাবতীয় সমস্যার মূলে তার মাদকাসক্তি। তাই নিয়েই মনোমালিন্য, এমনকি খুনটাও সে করে ফেলেছে অনিচ্ছায়, মাদকের ঘোরে!

আফতাব জানিয়েছে, সে মাদকাসক্ত। নিয়মিত গাঁজা সেবন করে, আর তা ছাড়ানোর জন্যই শ্রদ্ধা ঝগড়া করতেন তার সঙ্গে, চাপ সৃষ্টি করতেন নানাভাবে।  এতে সে বিরক্ত হয়ে উঠত।

১৮ মে তেমনই একটি দিন। শ্রদ্ধার সঙ্গে ঝগড়ার পর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। বাইরে থেকে গাঁজা ঘেয়ে ঘরে ফেরে। ফের শ্রদ্ধার সঙ্গে তার  বাগবিতণ্ডা হয়। আফতাব দাবি করেছে, এর পরে গাঁজার ঘোরেই সে শ্বাসরোধ করে খুন করে ফেলে শ্রদ্ধাকে। না হলে বান্ধবীকে খুনের কথা সে আগে কখনও ভাবেইনি।

তদন্তকারীরা মনে করছেন আফতাবের নতুন এ বয়ানে চালাকি রয়েছে। খুনের দায় মাদকের কাঁধে চাপিয়ে সে নিজের অপরাধ লঘু করার কৌশল নিয়েছে।

কিন্ত তিন বছর একত্রবাসে দিনের পর দিন যে সে বান্ধবীকে ভয়ানক মারধর করেছে, তার নানা প্রমাণ এখন সামনে আসছে। ২০২০ সালে বাড়ি ছেড়ে মহারাষ্ট্রের ভাসাইয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার সময়েই আফতাবের হাতে বেদম মার খেয়ে তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল শ্রদ্ধাকে।

এই ঘর ভাড়া নেওয়ার সময়ে শ্রদ্ধা-আফতাব নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। খুব বেশি দিন সেখানে না থাকলেও তাদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হতো বলে জানিয়েছেন বাড়িওয়ালা।

যে কল-সেন্টারে শ্রদ্ধা কাজ করতেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে তার ম্যানেজারকে এক বার মেসেজ করে কাজে যেতে না পারার কারণ হিসাবে মার খাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন শ্রদ্ধা।

শ্রদ্ধা হোয়াটসআ্যাপ মেসেজ করে ম্যানেজারকে বলেন, আগের রাতে ভয়ানক মার খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেন না তিনি। রক্তচাপ
কমে যাওয়ায় মাথা ঘুরছে, সারা শরীরে যন্ত্রণা। সঙ্গে অজস্র কালশিটে পড়া নিজের মুখের একটা ছবিও পাঠিয়েছিলেন শ্রদ্ধা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনীদের শাস্তি দাবি

মাদকের ঘাড়ে ভর করে বাঁচার চেষ্টা দিল্লির আফতাবের

আপডেট সময় ০৯:০৬:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২

ভারতের দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়ালকার হত্যাকাণ্ড সব রহস্য যেন সামনে এসেও আসছে না। শ্রদ্ধার প্রেমিক আফতাব পুণাওয়ালা যে সব সত্য বলছেন না, পুলিশ এরই মধ্যে সেটা বুঝতে পেরেছে। 

খুনের পরে বান্ধবী শ্রদ্ধা ওয়ালকারের দেহ ৩৫ টুকরো করার সময়ে সে যেমন শীতল মস্তিষ্কে থাকার দাবি করেছে, জেরার সময়েও তেমনই হিসেব কষে আসল প্রশ্নগুলোর ভুল জবাব দিয়ে সে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে চলেছে বল এখন মনে করছেন তদন্তকারীরা।যেমন- আফতাব এত দিন দাবি করে এসেছে, শ্রদ্ধার দেহাংশ সে রাত ২টার সময়ে বেরিয়ে জঙ্গলে ফেলে আসত। পুলিশের ধারণা দিল্লির বিভিন্ন জায়গাতে দেহাংশ ভরা প্যাকেট ফেলে এসেছে আফতাব। এ বিষয়টা সে স্বীকার করছে না।

দিল্লি পুলিশ তাই গতকাল শুক্রবার দিল্লির সব অংশের বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মানুষের দেহাংশ ভরা প্যাকেট দেখলেই যেন তা পুলিশকে জানানো হয়।

এদিকে আদালতে আর্জি জানিয়ে আফতাবের নার্কো পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছে দিল্লি পুলিশ। আদালত এ দিন সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরিকে নির্দেশ দিয়েছে, ৫ দিনের মধ্যে আফতাবের এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

তদন্তকারীরা মনে করছেন, এতে আফতাব যে অনেক মিথ্যা বলেছেন এখান থেকে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এত দিন আফতাব পুলিশকে বলে এসেছে, সংসার খরচ নিয়ে প্রাত্যহিক ঝগড়ায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে সে গলা টিপে বান্ধবীকে খুন করে ফেলার পরিকল্পনা করে।

এখন সে নতুন একটি তত্ব হাজির করেছে পুলিশের কাছে। আফতাব এখন বলছে, যাবতীয় সমস্যার মূলে তার মাদকাসক্তি। তাই নিয়েই মনোমালিন্য, এমনকি খুনটাও সে করে ফেলেছে অনিচ্ছায়, মাদকের ঘোরে!

আফতাব জানিয়েছে, সে মাদকাসক্ত। নিয়মিত গাঁজা সেবন করে, আর তা ছাড়ানোর জন্যই শ্রদ্ধা ঝগড়া করতেন তার সঙ্গে, চাপ সৃষ্টি করতেন নানাভাবে।  এতে সে বিরক্ত হয়ে উঠত।

১৮ মে তেমনই একটি দিন। শ্রদ্ধার সঙ্গে ঝগড়ার পর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। বাইরে থেকে গাঁজা ঘেয়ে ঘরে ফেরে। ফের শ্রদ্ধার সঙ্গে তার  বাগবিতণ্ডা হয়। আফতাব দাবি করেছে, এর পরে গাঁজার ঘোরেই সে শ্বাসরোধ করে খুন করে ফেলে শ্রদ্ধাকে। না হলে বান্ধবীকে খুনের কথা সে আগে কখনও ভাবেইনি।

তদন্তকারীরা মনে করছেন আফতাবের নতুন এ বয়ানে চালাকি রয়েছে। খুনের দায় মাদকের কাঁধে চাপিয়ে সে নিজের অপরাধ লঘু করার কৌশল নিয়েছে।

কিন্ত তিন বছর একত্রবাসে দিনের পর দিন যে সে বান্ধবীকে ভয়ানক মারধর করেছে, তার নানা প্রমাণ এখন সামনে আসছে। ২০২০ সালে বাড়ি ছেড়ে মহারাষ্ট্রের ভাসাইয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার সময়েই আফতাবের হাতে বেদম মার খেয়ে তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল শ্রদ্ধাকে।

এই ঘর ভাড়া নেওয়ার সময়ে শ্রদ্ধা-আফতাব নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। খুব বেশি দিন সেখানে না থাকলেও তাদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হতো বলে জানিয়েছেন বাড়িওয়ালা।

যে কল-সেন্টারে শ্রদ্ধা কাজ করতেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে তার ম্যানেজারকে এক বার মেসেজ করে কাজে যেতে না পারার কারণ হিসাবে মার খাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন শ্রদ্ধা।

শ্রদ্ধা হোয়াটসআ্যাপ মেসেজ করে ম্যানেজারকে বলেন, আগের রাতে ভয়ানক মার খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেন না তিনি। রক্তচাপ
কমে যাওয়ায় মাথা ঘুরছে, সারা শরীরে যন্ত্রণা। সঙ্গে অজস্র কালশিটে পড়া নিজের মুখের একটা ছবিও পাঠিয়েছিলেন শ্রদ্ধা।