ঢাকা ০৪:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাদা পোশাকে গিয়ে কোনো আসামিকে গ্রেফতার নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিএনপির ৩ সংগঠন- যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের লংমার্চ বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও বেগম রোকেয়া দিবস সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিসাব রক্ষক শেখ নাসির উদ্দিন এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আগামীকাল শুরু হচ্ছে অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য সংগ্রহ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে , পৃথিবীর সবাইকে ক্ষমা করা গেলেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করা যাবে না এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু কৃষক দলের প্রতিষ্ঠা বাষিক উপলক্ষে আলোচনা সভা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ২০২৫-২৬ সালের কমিটি গঠন সম্পন্ন। রাতের আঁধারে ভাঙচুর করে বাড়ি আসবাবপত্র ফেললো পুকুরে, বাড়ি ছাড়া পরিবার বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এবি ব্যাংকের এমডি

অনিয়ম দূর্ণীতির মাধ্যেমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেও থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোয়ার বাইরে

মাত্র ৫ বছর কাস্টমস এন্ড ভ্যাট বিভাগে চাকরির সুবাদে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অধীনে বোয়ালখালী সার্কেলে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) তারেক আজিজ। বোয়ালমারীতে যোগদানের পরপরই ওই সার্কেলে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির অভয়ারণ্য।

আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যে তিনি অবৈধ তাফালিং করে ভয় ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন না লাখ লাখ টাকা। কাস্টমসের এই বিতর্কিত কর্মকর্তা ইতোপূর্বে রাজধানীর মতিঝিল সার্কেলে নিয়োজিত থাকাকালীনও একই কাদায় দুই হাতে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করেও থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ঘুস কেলেংকারীর অভিযোগে দুদকের অভিযোগ দায়ের হলেও তিনি ড্যামকেয়ার ভাব প্রদর্শন করে পূর্বের চাইতে দ্বিগুণ হারে ঘুষ দুর্নীতি করে যাচ্ছেন বলে চট্টগ্রাম বোয়ালখালী সার্কেলের একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ। প্রাপ্ত তথ্য মতে, তারেক আজিজ ২০১৮ সালে চাকুরি নেন কাস্টম ইন্সপেক্টর হিসেবে। তার গ্রাম লক্ষ্মীপাশা, ইউনিয়ন লক্ষীপাশা, উপজেলা লোহাগড়া, জেলা নড়াইল। গত নভেম্বর পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে ছিলেন মতিঝিল ও আরামবাগ সার্কেলে কাস্টম ইন্সপেক্টর ভ্যাট হিসেবে।

মতিঝিল ও আরামবাগ সার্কেলে থাকাকালীন সময়ে ঘুষ বাণিজ্য, মদ, জুয়া ছিল তার নিত্য সঙ্গী। আরামবাগ মতিঝিলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তারেক আজিজ আতঙ্কে অতিষ্ঠ ছিলেন। মতিঝিল সার্কেলে তার একটি ভাষণ ছিল ঘুষ দাও না হলে মামলা খাও। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কাস্টমসের বোয়ালখালীতে কর্মরত আছেন। সরেজমিনে উঠে আসে, যখন মতিঝিল এবং আরামবাগ সার্কেলে কাস্টম ইন্সপেক্টর হিসেব কর্মরত ছিলেন তারেক আজিজ,তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে হুমকি-ধমকি এমনকি মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি করতেন। ঘুষ না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতেন তারিক আজিজ।

বিভিন্ন হোটেল, খাবার দোকান, কম্পিউটার এক্সেসরিজ, ইলেকট্রিক এক্সোসরিজসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে তারিক আজিজ হানা দিতেন, দাবি করতেন মোটা অংকের ঘুষের টাকা।সেই সময় তার ঘুষ বাণিজ্যকে নিরাপদ করতে আরামবাগ ও মতিঝিল সার্কেলে তৈরি করেন দালালচক্র। এই দালালচক্র বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ সকলকে ভয় দেখিয়ে তারেক আজিজের কাছে নিয়ে আসতেন এবং দাবি করতেন মোটা অংকের ঘুষ,না দিলে তারেক আজিজ তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিতেন ভ্যাট আইনে। অনেক ব্যবসায়ী তারেক আজিজের ভয়ে মুখ বন্ধ করে রাখলেও মুখ খুললেন খোরশেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম তাপস। তিনি তারেক আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন দুদক, এনবিআর সহ প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে।

খোরশেদ বলেন, আমি ২০১৯ সালে ভ্যাট সার্টিফিকেট (বিআইএন) এর জন্য আবেদন করি। কিন্তু আমার ভ্যাট সার্টিফিকেট না দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্ত করে কাস্টম অফিসাররা। অবশেষে একদিন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় তারেক আজিজ সহ পাঁচ-সাতজন কাস্টম অফিসার ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ। আমি সততা এবং স্বচ্ছতার সাথে তাদেরকে সকল কাগজপত্র প্রদান করি। ইন্সপেক্টর তারেক আজিজ আমার মোবাইল নাম্বারটি নেয় এবং দেখা করতে বলে । আমাকে ফোনে হোটেল রহমানিয়ার ১৯০১ নাম্বার রুমে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে আমি দেখতে পাই উনি মদ এবং মেয়ে মানুষ নিয়ে ফুর্তি করছেন। তখন ওই অবস্থায় তিনি আমাকে বলেন ৩ লক্ষ টাকা না দিলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাবে। আমি তখন আতঙ্কিত হয়ে যাই এবং ভয় পেয়ে যাই।

যথারীতি কয়েকদিন যাওয়ার পর উনি আমাকে মারাত্মকভাবে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন।অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে আমি ভেঙ্গে ভেঙ্গে তাকে ১লক্ষ৪০ হাজার টাকা দেই।তারপরও সে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বদলি হয়ে যায়। মামলা নং২৩৪,তারিখ ৪ অক্টোবর ২০২৩ইং। এ বিষয়ে তারেক আজিজের সাথে আরো চার-পাঁচ জন জড়িত ছিলেন, তাদের কাছে গেলে তারা উল্টো আমাকে আরো ভয়-ভীতি দেখায়। মতিঝিলের অসংখ্য ব্যবসায়ী কাস্টম অফিসার দের হাতে জিম্মি , আরামবাগ মতিঝিল জোনথেকে কোটি টাকা হাতি নিয়েছেন তারেক আজিজ।

রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্সে হোটেল সেন্ট্রাল ইন এর ১৯০১ নম্বর রুমেটি ছিল তারেক আজিজের সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূল ঠিকানা। এখানে বসে ব্যবসায়ীদের ডেকে এনে ঘুষ গ্রহণ করতেন তারেক আজিজ। উপরোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন খোরশেদ আলম তার অভিযোগে। গভীর অনুসন্ধানের জন্য দৈনিক আমদের মাতৃভূমি উপস্থিত হয় রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্স হোটেল সেন্ট্রাল ইন এ।হোটেলের সিনিয়র ম্যানেজার অপারেশন বিশ্বজিৎ দে বলেন তারেক আজিজ আমাদেরকে অনেক জ্বালিয়েছে।

মতিঝিল, আরামবাগ সার্কেলে থাকা অবস্থায় বহুবার আমাদেরকে হোটেলে এসেছে,ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের কাছে অবৈধ টাকা দাবি করেছে । যেহেতু আমরা একটি বড় প্রতিষ্ঠান চালাই তাই সরকারের সকল নিয়মকানুন মেনেই চালাই।উনার ভয়-ভীতি কে আমরা পাত্তা দেই নাই । তবে কাস্টম অফিসার হিসেবে যখন এসেছে আমরা তাকে সম্মান দেখিয়েছি। আমি বহুদিন দেখেছি তার কাছে অসংখ্য ব্যবসায়ী আসতেন কিন্তু তারা কারা কি জন্য আসতেন তা আমি জানিনা। তবে সে কখনো কখনো নিজেকে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বলে দাবি করতেন, কিন্তু পরে জানা যায় তার বাড়ি লোহাগড়া।

মতিঝিল আরামবাগ জোনে থাকাকালীন সময়ে তার চার-পাঁচ জন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মধ্যে ব্যক্তিগত পিয়ন রাকিব ছিল অন্যতম।তার ব্যক্তিগত ড্রাইভার সজিব ও ব্যাক্তিগত পিযন রাকিব ছিল অবৈধ ঘুষের টাকা আদায় ও তা কাস্টম ইন্সপেক্টর তারেক আজিজের হাতে পৌঁছে দেওয়া। দৈনিক আমদের মাতৃভূমিকে রাকিব জানায়, তারেক স্যার প্রায় সময় আমাকে কাগজপত্র নিয়ে মতিঝিলের রহমানিয়া হোটেলে যেতে বলতেন এবং অফিসের কাগজপত্র সেখানে সাইন করতেন। উনার একটি গাড়ি আছে, ব্যক্তিগত ড্রাইভার আছে, জমিজমা কি করেছে তা আমি জানিনা।

তথ্যসূত্রে উঠে আসে, কাস্টম ইন্সপেক্টর তারেক আজিজ বর্তমানে বোয়ালখালীতে কর্মরত আছেন। সেখানকার উপজেলা পর্যায়ের কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় সেখানেও তিনি ঘুষ বাণিজ্যের দোকান খুলে বসেছেন, তৈরি করেছেন দালালচক্র। যাদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের খবরাখবর নিয়ে থাকেন তারিক আজিজ।ব্যবসায়ীদের দুর্বলতা অনুযায়ী ঘুষের টাকা দাবি করেন তিনি।

এতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তার উপরস্থ কর্মকর্তাগন। তিনি যেখানেই যান কর্মকর্তারা ছায়ার মতো তার মাথায় হাত বুলিয়ে রাখেন বলেও তথ্যসূত্রে উঠে আসে। ২০১৮ সালের চাকরিতে যোগদান করে তারেক আজিজ বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক। গাড়ি বাড়ি ফ্ল্যাট কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন নিজ এলাকায়। সরকারের বিধি-বিধান কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পথে হাঁটছেন তারিক আজিজ।

সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ঘুষখোররা হচ্ছেন কোটিপতি। ইএফডি মেশিন সকল ব্যবসায়ীদের মাঝে না থাকায় ঘুষ গ্রহণের সুবিধা ভোগ করছে তারা। অন্যায়ভাবে ১৪ থেকে ১৫লক্ষ টাকার মিথ্যে মামলা করেছে তারেক আজিজ, আমি আজ অসহায় হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। কথাগুলো বলে কেঁদে ফেললেন খোরশেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম তাপস।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাদা পোশাকে গিয়ে কোনো আসামিকে গ্রেফতার নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেট সময় ০৪:০১:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

অনিয়ম দূর্ণীতির মাধ্যেমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেও থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোয়ার বাইরে

মাত্র ৫ বছর কাস্টমস এন্ড ভ্যাট বিভাগে চাকরির সুবাদে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অধীনে বোয়ালখালী সার্কেলে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) তারেক আজিজ। বোয়ালমারীতে যোগদানের পরপরই ওই সার্কেলে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির অভয়ারণ্য।

আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যে তিনি অবৈধ তাফালিং করে ভয় ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন না লাখ লাখ টাকা। কাস্টমসের এই বিতর্কিত কর্মকর্তা ইতোপূর্বে রাজধানীর মতিঝিল সার্কেলে নিয়োজিত থাকাকালীনও একই কাদায় দুই হাতে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করেও থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ঘুস কেলেংকারীর অভিযোগে দুদকের অভিযোগ দায়ের হলেও তিনি ড্যামকেয়ার ভাব প্রদর্শন করে পূর্বের চাইতে দ্বিগুণ হারে ঘুষ দুর্নীতি করে যাচ্ছেন বলে চট্টগ্রাম বোয়ালখালী সার্কেলের একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ। প্রাপ্ত তথ্য মতে, তারেক আজিজ ২০১৮ সালে চাকুরি নেন কাস্টম ইন্সপেক্টর হিসেবে। তার গ্রাম লক্ষ্মীপাশা, ইউনিয়ন লক্ষীপাশা, উপজেলা লোহাগড়া, জেলা নড়াইল। গত নভেম্বর পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে ছিলেন মতিঝিল ও আরামবাগ সার্কেলে কাস্টম ইন্সপেক্টর ভ্যাট হিসেবে।

মতিঝিল ও আরামবাগ সার্কেলে থাকাকালীন সময়ে ঘুষ বাণিজ্য, মদ, জুয়া ছিল তার নিত্য সঙ্গী। আরামবাগ মতিঝিলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তারেক আজিজ আতঙ্কে অতিষ্ঠ ছিলেন। মতিঝিল সার্কেলে তার একটি ভাষণ ছিল ঘুষ দাও না হলে মামলা খাও। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কাস্টমসের বোয়ালখালীতে কর্মরত আছেন। সরেজমিনে উঠে আসে, যখন মতিঝিল এবং আরামবাগ সার্কেলে কাস্টম ইন্সপেক্টর হিসেব কর্মরত ছিলেন তারেক আজিজ,তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে হুমকি-ধমকি এমনকি মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি করতেন। ঘুষ না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতেন তারিক আজিজ।

বিভিন্ন হোটেল, খাবার দোকান, কম্পিউটার এক্সেসরিজ, ইলেকট্রিক এক্সোসরিজসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে তারিক আজিজ হানা দিতেন, দাবি করতেন মোটা অংকের ঘুষের টাকা।সেই সময় তার ঘুষ বাণিজ্যকে নিরাপদ করতে আরামবাগ ও মতিঝিল সার্কেলে তৈরি করেন দালালচক্র। এই দালালচক্র বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ সকলকে ভয় দেখিয়ে তারেক আজিজের কাছে নিয়ে আসতেন এবং দাবি করতেন মোটা অংকের ঘুষ,না দিলে তারেক আজিজ তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিতেন ভ্যাট আইনে। অনেক ব্যবসায়ী তারেক আজিজের ভয়ে মুখ বন্ধ করে রাখলেও মুখ খুললেন খোরশেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম তাপস। তিনি তারেক আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন দুদক, এনবিআর সহ প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে।

খোরশেদ বলেন, আমি ২০১৯ সালে ভ্যাট সার্টিফিকেট (বিআইএন) এর জন্য আবেদন করি। কিন্তু আমার ভ্যাট সার্টিফিকেট না দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্ত করে কাস্টম অফিসাররা। অবশেষে একদিন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় তারেক আজিজ সহ পাঁচ-সাতজন কাস্টম অফিসার ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ। আমি সততা এবং স্বচ্ছতার সাথে তাদেরকে সকল কাগজপত্র প্রদান করি। ইন্সপেক্টর তারেক আজিজ আমার মোবাইল নাম্বারটি নেয় এবং দেখা করতে বলে । আমাকে ফোনে হোটেল রহমানিয়ার ১৯০১ নাম্বার রুমে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে আমি দেখতে পাই উনি মদ এবং মেয়ে মানুষ নিয়ে ফুর্তি করছেন। তখন ওই অবস্থায় তিনি আমাকে বলেন ৩ লক্ষ টাকা না দিলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাবে। আমি তখন আতঙ্কিত হয়ে যাই এবং ভয় পেয়ে যাই।

যথারীতি কয়েকদিন যাওয়ার পর উনি আমাকে মারাত্মকভাবে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন।অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে আমি ভেঙ্গে ভেঙ্গে তাকে ১লক্ষ৪০ হাজার টাকা দেই।তারপরও সে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বদলি হয়ে যায়। মামলা নং২৩৪,তারিখ ৪ অক্টোবর ২০২৩ইং। এ বিষয়ে তারেক আজিজের সাথে আরো চার-পাঁচ জন জড়িত ছিলেন, তাদের কাছে গেলে তারা উল্টো আমাকে আরো ভয়-ভীতি দেখায়। মতিঝিলের অসংখ্য ব্যবসায়ী কাস্টম অফিসার দের হাতে জিম্মি , আরামবাগ মতিঝিল জোনথেকে কোটি টাকা হাতি নিয়েছেন তারেক আজিজ।

রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্সে হোটেল সেন্ট্রাল ইন এর ১৯০১ নম্বর রুমেটি ছিল তারেক আজিজের সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূল ঠিকানা। এখানে বসে ব্যবসায়ীদের ডেকে এনে ঘুষ গ্রহণ করতেন তারেক আজিজ। উপরোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন খোরশেদ আলম তার অভিযোগে। গভীর অনুসন্ধানের জন্য দৈনিক আমদের মাতৃভূমি উপস্থিত হয় রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্স হোটেল সেন্ট্রাল ইন এ।হোটেলের সিনিয়র ম্যানেজার অপারেশন বিশ্বজিৎ দে বলেন তারেক আজিজ আমাদেরকে অনেক জ্বালিয়েছে।

মতিঝিল, আরামবাগ সার্কেলে থাকা অবস্থায় বহুবার আমাদেরকে হোটেলে এসেছে,ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের কাছে অবৈধ টাকা দাবি করেছে । যেহেতু আমরা একটি বড় প্রতিষ্ঠান চালাই তাই সরকারের সকল নিয়মকানুন মেনেই চালাই।উনার ভয়-ভীতি কে আমরা পাত্তা দেই নাই । তবে কাস্টম অফিসার হিসেবে যখন এসেছে আমরা তাকে সম্মান দেখিয়েছি। আমি বহুদিন দেখেছি তার কাছে অসংখ্য ব্যবসায়ী আসতেন কিন্তু তারা কারা কি জন্য আসতেন তা আমি জানিনা। তবে সে কখনো কখনো নিজেকে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বলে দাবি করতেন, কিন্তু পরে জানা যায় তার বাড়ি লোহাগড়া।

মতিঝিল আরামবাগ জোনে থাকাকালীন সময়ে তার চার-পাঁচ জন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মধ্যে ব্যক্তিগত পিয়ন রাকিব ছিল অন্যতম।তার ব্যক্তিগত ড্রাইভার সজিব ও ব্যাক্তিগত পিযন রাকিব ছিল অবৈধ ঘুষের টাকা আদায় ও তা কাস্টম ইন্সপেক্টর তারেক আজিজের হাতে পৌঁছে দেওয়া। দৈনিক আমদের মাতৃভূমিকে রাকিব জানায়, তারেক স্যার প্রায় সময় আমাকে কাগজপত্র নিয়ে মতিঝিলের রহমানিয়া হোটেলে যেতে বলতেন এবং অফিসের কাগজপত্র সেখানে সাইন করতেন। উনার একটি গাড়ি আছে, ব্যক্তিগত ড্রাইভার আছে, জমিজমা কি করেছে তা আমি জানিনা।

তথ্যসূত্রে উঠে আসে, কাস্টম ইন্সপেক্টর তারেক আজিজ বর্তমানে বোয়ালখালীতে কর্মরত আছেন। সেখানকার উপজেলা পর্যায়ের কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় সেখানেও তিনি ঘুষ বাণিজ্যের দোকান খুলে বসেছেন, তৈরি করেছেন দালালচক্র। যাদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের খবরাখবর নিয়ে থাকেন তারিক আজিজ।ব্যবসায়ীদের দুর্বলতা অনুযায়ী ঘুষের টাকা দাবি করেন তিনি।

এতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তার উপরস্থ কর্মকর্তাগন। তিনি যেখানেই যান কর্মকর্তারা ছায়ার মতো তার মাথায় হাত বুলিয়ে রাখেন বলেও তথ্যসূত্রে উঠে আসে। ২০১৮ সালের চাকরিতে যোগদান করে তারেক আজিজ বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক। গাড়ি বাড়ি ফ্ল্যাট কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন নিজ এলাকায়। সরকারের বিধি-বিধান কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পথে হাঁটছেন তারিক আজিজ।

সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ঘুষখোররা হচ্ছেন কোটিপতি। ইএফডি মেশিন সকল ব্যবসায়ীদের মাঝে না থাকায় ঘুষ গ্রহণের সুবিধা ভোগ করছে তারা। অন্যায়ভাবে ১৪ থেকে ১৫লক্ষ টাকার মিথ্যে মামলা করেছে তারেক আজিজ, আমি আজ অসহায় হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। কথাগুলো বলে কেঁদে ফেললেন খোরশেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম তাপস।