চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। বিগত অর্থবছরে ঘোষিত ১ হাজার ৬৬১ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার যে বাজেট তার ৮৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে উল্লেখ করে নতুন অর্থবছরের জন্য সংশোধিত এ বাজেট ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থিয়েটার ইন্সটিটিউটে সিটি মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী সাড়ে ১০ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন। এটি ছিল তার চতুর্থ বাজেট।
মেয়র বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকার দেনা পরিশোধ করা। তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে ৬০০ কোটি টাকার বেশি দেনা পরিশোধ করেছেন। এর মধ্যে আয়কর বাবদ ১১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ও মূল্য সংযোজন কর বাবদ ১৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব শেখ মো. আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে ও তার সঞ্চালনায় শুরু হয় বাজেট অধিবেশন। মেয়র ছাড়াও এ সময় প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, অর্থ ও সংস্থাপন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর মো. ইসমাইল ও চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ৬০ বর্গমাইলের চট্টগ্রাম শহরে বর্তমানে ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। ছোট্ট শহরে বিশাল এই জনসংখ্যার চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য চসিকের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। একটি কমিটি কাজ করছে।
চট্টগ্রামকে নান্দনিক বাসযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করা, মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ায় তার লক্ষ্য। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কাজ করছেন।
করপোরেশনের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর। গৃহকর না বাড়িয়ে কেবল কর প্রদান পদ্ধতি সহজ, রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে আপীল নিষ্পত্তি ও সহনীয় কর মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করে এই খাতে আয় বাড়িয়েছেন। নগরীতে ১ লাখ বর্গফুটের একটি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার এবং ৩ একর জায়গার ওপর একটি শিশু পার্ক করার পরিকল্পনাও আছে তার। মশক নিধন, জলাবদ্ধতা নিরসন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ঝুলন্ত তার ভূগর্ভে নেওয়াসহ চট্টগ্রাম নগরীকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান মেয়র।
দেখা গেছে, ঘোষিত বাজেটে নিজস্ব আয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব উৎসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে। ৯০৯ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন-অনুদান খাতে। ত্রাণ সাহায্য হিসেবে ধরা হয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা।
বিগত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৮৮ শতাংশ। যা চসিকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট বাস্তবায়ন। আগের অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এবারের বাজেটে তিন ধরনের কর বাবদ মোট আয় ধরা হয়েছে ৬৭১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে সর্বোচ্চ আয় ধরা হয়েছে ২৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। হাল কর ও অভিকর খাতে ২৩২ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর বাবদ ২০০ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে ৩৮ কোটি ৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়।
এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন খাতে- ১ হাজার ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত অর্থ বছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে ৯৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তবে ওই বছর খরচ হয় ১ হাজার ১৫ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু বেতন-ভাতা ও পারিশ্রমিকেই ব্যয় হবে ৩২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।