ছোট ছোট নৌকায় চেপে ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে পৃথক করা সাগর ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে চলতি বছর যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে ৪০ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করার শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজারের কিছু বেশি। তারপরের বছর ২০২১ সালে এই সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছায় ২৮ হাজার ৫২৬ জনে।
‘অর্থাৎ প্রতি বছরই দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বাড়ছে অনুপ্রবেশ করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা,’ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইউরোপ মহাদেশভূক্ত দেশ হলেও মহাদেশটির মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত নয় যুক্তরাজ্য। ইংলিশ চ্যানেল নামের ছোট ও সংকীর্ণ একটি সাগরইউরোপের মূল ভূখন্ডস্থিত দেশ ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যকে পৃথক করেছে । এই সাগরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬২ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার থেকে সর্বনিম্ন ৩৪ কিলোমিটার।
বিশ্বের অন্যান্য সাগরের তুলনায় আকার-আয়তনে ছোট হলেও যাতায়াতের পথ হিসেবে বেশ বিপজ্জনক ইংলিশ চ্যানেল। ভৌগলিক কারণেই বছরের অধিকাংশ সময়ে ঝড়ো আবহাওয়া থাকে এ সাগরে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অবৈধভাবে প্রবেশকারী এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সবাই এই বিপদসংকুল জলপথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন এবং এক্ষেত্রে ইংলিশ চ্যানেলে ফ্রান্সের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড বিভাগের টহল প্রায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’
বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দক্ষিণ ইংল্যান্ডের কিছু আশ্রয়কেন্দ্র এবং হোটেলে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতেও বলা হয়েছে; কিন্তু ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মাত্র ৪ শতাংশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।
এদিকে, রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট (যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয়) অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। মিশরের উপকূলীয় শহর শারম আল শেখে চলমান জাতিসংঘের কপ ২৭ জলবায়ু সম্মেলনের অবসরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি ও টহল বাড়াতে বৈঠক হয়েছে বলেও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম কোনো বিদেশী সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করলেন ঋষি সুনাক। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, অবৈধ অভিবাসী অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাড়ানো প্রয়োজন বলে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন দুই দেশের সরকারপ্রধান।