ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসনের দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীর থেকে নিজেদের সব সৈন্য পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। পরে সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী।
এরপরই সরব হয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, খেরসনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে রুশ সেনারা। রোববার (১৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
শনিবার এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, রাশিয়া তাদের বাহিনী প্রত্যাহারের আগে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। তার ভাষায়, ‘খেরসন থেকে পালানোর আগে, দখলদাররা সকল গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে: যোগাযোগ, পানি, তাপ, বিদ্যুৎ; সবই।’
জেলেনস্কি দাবি করেন, ‘(রাশিয়ানদের) সর্বত্র একই লক্ষ্য রয়েছে। আর তা হলো- যতটা সম্ভব মানুষকে কষ্ট দেওয়া। তবে আমরা সবকিছু পুনরুদ্ধার করব, বিশ্বাস করুন।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আগ্রাসন শুরুর পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান শহর এবং বন্দরনগরী খেরসন দখল করে নেয় রাশিয়া। এছাড়া প্রথম বড় কোনো ইউক্রেনীয় শহর হিসেবে খেরসন দখল করেছিল রুশ সেনারা। এর প্রায় দুই মাসের মাথায় খেরসনের পুরো অঞ্চলটি দখলে নেয় মস্কোর বাহিনী।
প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দার খেরসন শহর ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দখলে যাওয়া মস্কোর জন্য বড় ধরনের এক বিজয় বলে মনে করা হয়েছিল। মূলত রুশ সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটিও ছিল এই শহরটি।
তবে গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ইউক্রেনের দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলের দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীর থেকে রাশিয়ার সব সৈন্য প্রত্যাহার পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার মোতায়েন করা সব সৈন্য ও যুদ্ধের সরঞ্জাম দিনিপ্রোর বাম অথবা পূর্ব দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার মস্কোর স্থানীয় সময় ভোর ৫টার মধ্যে খেরসন থেকে সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়।
এএফপি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে রুশ সেনাদের দখল করা একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী ছিল খেরসন। শুক্রবার রুশ সেনারা সেটি পরিত্যাগ করার পর শহরের বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং শহরের কেন্দ্রে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের স্বাগত জানান।
ইউক্রেনীয় সৈন্যরা খেরসন অঞ্চলে ৬০ টিরও বেশি বসতির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে উল্লেখ করে শনিবার জেলেনস্কি আরও বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মাইন, ট্রিপওয়্যার এবং অবিস্ফোরিত শেল বিপদমুক্ত করা হয়েছে। এদিকে ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ইউক্রেন ময়দানের যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধ চলছেই।
এর আগে, গত বুধবার খেরসন অঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেয় রাশিয়া। সেই সময় মস্কো জানায়, ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান পাল্টা আক্রমণের মুখে আঞ্চলিক রাজধানী খেরসনের ভৌগলিক অবস্থান বজায় রাখা এবং সেখানে সৈন্য সরবরাহের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।