জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আসুন, আমরা অঙ্গীকার করি।’
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার বলেন, ‘এই সংবিধানকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করার দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর ন্যস্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ধারণ করে বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের মধ্য দিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জনেই আমাদের কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সংবিধান সুরক্ষিত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আমাদের সদা সচেতন থাকতে হবে। সংবিধানের সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আসুন, আমরা অঙ্গীকার করি। এই সংবিধান তখনই স্বার্থক হবে, যখন বাংলার মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বঞ্চণা ও বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে উন্নত জীবন পাবে।’
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রেখে একটি সুখি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।’ স্পিকার বলেন, ‘সংবিধানের আলোকে আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের উন্নয়ন এবং কার্যকর ভূমিকার মধ্য দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের অব্যাহত অগ্রযাত্রা সুসংহত ও নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন সমুন্নত হবে। মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষিত হবে। দারিদ্র্য, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। এই হোকে প্রত্যয়।’
তিনি আরও বলেন, এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গনপরিষদে দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে খসড়া সংবিধান উপস্থাপনের সময় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন। এই সংবিধান এক দিনের ফল নয়। অনেক রক্ত, বাধা বিপত্তি লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জন হয়েছে এই শাসনতন্ত্র। সেই প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন— এত ত্যাগের মধ্য দিয়ে জাতি তাদের শাসনতন্ত্র পেতে চলেছে। তখন জাতির পিতার অভিব্যক্তি— ‘আজ স্বাধীন বাংলার স্বাধীন মাটিতে আমার পতাকা উড়ে। আমার সোনার বাংলা গান হয়। সোনার বাংলার মুক্ত হাওয়ায় আজ আমরা আলোচনা করতে বসেছি। আজ আমরা পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়েছি। এর চেয়ে আনন্দ আর কিছুই হতে পারে না। এরই স্বপ্ন দেখেছি।’
স্পিকার বলেন, ‘স্বাধীন বাংলার মাটিতে মাত্র ৯ মাস সময়ের মধ্যে এই বৃহৎ কর্ম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। মাত্র ৯ মাসে এই চূড়ান্ত এক অন্যন্য অর্জন।’ তাই গণপরিষদের সব সম্মানিত সদস্য এবং সংবিধান প্রণয়নকারী সব সম্মানিত সদস্যকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান। আলোচনার একপর্যায়ে বাহাত্তরের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নকারীদের সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ও বর্তমান বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং সাধারণ আইনজীবীরা।