অপরাধ ও দুর্নীত
সরকারি প্রকল্পের কাজে দুর্নীতিতে সাময়িক বরখাস্ত ও ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জামানুর রহমানকে স্বপদে ফিরিয়ে আনা ও পদোন্নতি দেয়ার জন্য শুরু হয়েছে তোড়জোড়। ফলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনেক প্রকৌশলীও।
তাদের ভাষ্য মতে, কিছু অসাধু ব্যক্তির মাধ্যমে অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে জামানুর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে স্বপদে ফেরার চেষ্টা করছেন।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পানি সরবরাহ-১ শাখা থেকে সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে (স্মারক নং ৬৪৪) জামানুরের দুর্নীতি প্রমাণিত হয় বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে তাকে বরখাস্তের বিষয়ে জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মো. জামানুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, খুলনা সার্কেল, খুলনা (সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, পাবনা জেলা, পাবনা) এর বিরুদ্ধে পাবনা জেলার সুজানগর পৌরসভায় আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য (Piped Water Environmental Sanitation) প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত না করে সমস্ত টাকা উত্তোলনসহ ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগসমূহ স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
আরও বলা হয়, উল্লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২(১) অনুসারে জনাব মো. জামানুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, খুলনা সার্কেল, খুলনা (সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, পাবনা জেলা, পাবনা)-কে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে গত ৮ সেপ্টেম্বর দাখিলকৃত তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে ২০ নম্বর দফায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নারীলিপ্সুতার কথাও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে আছে এক তরুণীকে আটকে রেখে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগ। জানাগেছে, অভিযুক্ত জামানুর ছিলেন ধর্ষিতা তরুণীর বাবার বস। এই সুবাদে জামানুর তাদের বাসায় আসা যাওয়া করতেন।
২০১৫ সালে ওই তরুণী মহিলা পলিটেকনিক হতে ডিপ্লোমা পাস করার পর একদিন হঠাৎ ফোন দিয়ে ডুয়েটে ভর্তির কথা বলে রেজাল্ট কার্ড নিয়ে মোহাম্মদপুরের রাজধানী হোটেলের রুমে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক নির্যাতন করে।
পরে চাকুরী পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তার বাবা-মাকে ম্যানেজ করে ২০১৫ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতন করে বলেও জামানুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে ভুক্তভোগী পরিবার। এসব বিষয়ে মুখ না খুলতে প্রাণনাশের হুমকিসহ নানান ভাবে ভয়ভীতি দেখান বলেও অভিযোগ।
ফলে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী পরিবার গত ৩ মার্চ রাজশাহী প্রেসক্লাব সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট চত্বরে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী। এসময় জামানুরের বিচার দাবি করেন ওই ভুক্তভোগী তরুণী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে চাকরির প্রলোভনে তরুণীদের নিজের জালে ফাঁসাতেন প্রকৌশলী জামানুর। কেউ রাজি না হলে দিতেন নানা অপবাদ। সম্প্রতি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শেষ বর্ষের মেধাবী এক তরুণীকে চাকুরীর প্রলোভনে ধর্ষণ করার পর তরুণীর মুখ খোলার চেষ্টা করলে পাগল অপবাদে ভর্তি করিয়েছেন মানসিক হাসপাতালে। এমন অভিযোগ উঠেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি মিললেও ওই তরুণীর দিন কাটছে অজানা আতঙ্কে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী আরও জানান, প্রকৌশলী জামানুরের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় শিকার হয়েছেন ধর্ষণ, নির্যাতনের। প্রকৌশলী জামানুর রহমান তরুণীর বাবার বস ছিলেন, সেই সুবাদে জামানুরের বাসায় আসা যাওয়া করতেন এবং তরুণী দিকে কুদৃষ্টিতে তাকাতেন।
২০১৫ সালে মহিলা পলিটেকনিক হতে ডিপ্লোমা পাস করার পর ডুয়েটে ভর্তি করার কথা বলে গাজীপুরে নিয়ে আসে। পরে একদিন হঠাৎ ফোন দিয়ে ডুয়েটে ভর্তির কথা বলে রেজাল্ট কার্ড নিয়ে মোহাম্মদপুরের রাজধানী হোটেলের রুমে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক নির্যাতন করে। চাকরি দেয়ার কথা বলে বাবা-মাকে ভয় দেখিয়ে ম্যানেজ করে ২০১৫ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতন করে।
তিনি মিথ্যা প্রলোভন বুঝতে পেরে মুখ খোলার কথা বললে তাকে ইনজেকশন দিয়ে মোবাইল, আইডি কার্ড, সার্টিফিকেট, পরীক্ষার এডমিট ও ডকুমেন্ট ছিনিয়ে নেয় জামানুর রহমান তার লোকদের দিয়ে। পরে এসব বিষয়ে জানাজানির ভয়ে ওই তরুণীকে শিকল দিয়ে অন্য জায়গায় বন্দি করে রাখে কয়েক মাস। তারপর মানসিক হাসপাতাল, পাবনায় পাগল বানিয়ে ভর্তি করান।
পরে ৩০ মে ২০২২ তারিখে স্বামী অজ্ঞাত ফোনে স্ত্রীর খবর জানতে পেরে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে পিবিআই এর সহযোগিতায় উদ্ধার হয়ে ২২ দফায় জবানবন্দি দেন। তারপর থেকে তরুণীর জীবনে নেমে আসে প্রাণনাশের হুমকি, বাসায় হামলা।
এত অভিযোগ ও অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরে বরখাস্ত করার পরেও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জামানুর রহমানকে নির্দোষ দেখিয়ে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল রাখতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনেক প্রকৌশলীও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে জামানুর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে স্বপদে ফেরার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, এটা একটা সাধারণ প্রক্রিয়া। অ্যাডমিনিস্ট্রিভ প্রক্রিয়া। অ্যাডমিন