বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ডটা মোটেও ভালো নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো আরও নয়। তিন ম্যাচ খেলে হেরেছে সবকটিতেই।
যদি আলোচনাটা হয় সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে, তাহলে বাংলাদেশের সবেধন নীলমণি সুখস্মৃতিটা খুঁজতে ফিরে যেতে হবে সেই ২০০৭ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে স্পোর্ট অফ স্পেনে শিরোপাপ্রত্যাশী ভারতকে অনেকটা বলে কয়েই হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে ‘ধরে দিবানি’-হুঙ্কার ছাড়া মাশরাফি বিন মুর্তজা ছিলেন এই জয়ের প্রধান কুশীলব।
সে ম্যাচের শুরুতেই বীরেন্দর শেবাগের স্টাম্প দিয়েছিলেন উপড়ে, যা তখনই ঢুকে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথায়। এরপর রবিন উথাপ্পাকে ফিরিয়ে ভারতের টপ অর্ডারে বড় ধাক্কা দেওয়ার কাজটা সেরেছিলেন।
শেষ দিকে আক্রমণে এসে ফেরান অজিত আগারকার আর মুনাফ পাটেলকে, তাতেই ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের লেজটাও দেন মুড়ে। এরপর তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের ফিফটিতে জয় তুলে নিলেও শুরুতে যে ধ্বংসযজ্ঞটা চালিয়েছেন মাশরাফি, তাতে তার হাতেই ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
সেই ২০০৭ এর পর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে আরও ছয় বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। জয় মেলেনি একটি ম্যাচেও আর। খুব কাছাকাছি গিয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবশেষ দেখায়। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সেই ম্যাচটা স্বস্তির চেয়ে একটা প্যারানয়াকেই ফিরিয়ে আনে বেশি!
সেবার পুরো ম্যাচে দারুণ খেলে শেষ ওভারের নাটকে ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যায়। মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ উইকেটে থাকাস্বত্বেও শেষ তিন বলে ২ রান তোলা হয়নি, ম্যাচটা হারতে হয় ১ রানে।
হোক দ্বিপাক্ষিক ম্যাচে, সেই ম্যাচের পর থেকে যখনই বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ভারতের, ২০১৬ সালের সেই ম্যাচটার কথাই ফিরে ফিরে আসে, ২০০৭ এর সেই ম্যাচ এখন যেন দূর অতীতের গল্প।
আজ দুপুরে যখন ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, জয় পেতে হলে শুরুতেই বেঙ্গালুরুর ভূত তাড়ানো প্রয়োজন খুব। সেটা করতে হলে শুরুটা হতে হবে পোর্ট অফ স্পেনে।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সেবার বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেওয়ার কাজটা করেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেই মাশরাফি এখন অতীত। তাহলে আজ দায়িত্বটা বর্তাবে কার কাঁধে?
অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোখে, মাশরাফির পর বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নেতা যিনি, সেই তাসকিন আহমেদের কাঁধেই নিঃসন্দেহে বর্তাবে দায়িত্বটা।
দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেছিলেন, ‘মাশরাফির বিদায়ের পর তাসকিন (পেস বোলিংয়ের) একজন নেতা হয়ে উঠেছে। গত ২-৩ বছরে বাংলাদেশের হয়ে ভীষণভাবে ভালো বোলিং করছে। সে উদাহরণ তৈরি করে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তাসকিন চলতি বিশ্বকাপে সেটা করেও চলেছেন। প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও শুরুতেই তুলে নিয়েছিলেন টেম্বা বাভুমার উইকেট, এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন; বাংলাদেশ যে দুই ম্যাচ জিতেছে এই বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচেই তিনি হয়েছেন ম্যাচসেরা, শুরুতেই প্রতিপক্ষ ইনিংসে ধাক্কা দেওয়ার কাজটা সেরেছেন সুনিপুণভাবে।
সেটা আজও করে দেখাতে পারলে বাংলাদেশের কাজটা সহজ হয়ে যায় অনেকটাই। বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদবরা আছেন দারুণ ফর্মে, ওপেনিংয়ে ছন্দে না থাকলেও রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলরা যে কোনো সময় হয়ে উঠতে পারেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তাসকিন আজ জ্বলে উঠলে সে আতঙ্কটা এড়ানো হয়ে যাবে ভালোভাবেই।
আজকের ম্যাচটা হবে বাংলাদেশের আরেক সুখস্মৃতির ভেন্যু, অ্যাডিলেড ওভালে। এই মাঠেই ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ভেন্যুতে আজ তাসকিনকে যে মাশরাফি রূপেই দেখতে চাইবে লাল সবুজের দল, তা বলাই বাহুল্য!